সুদেষ্ণা মহাজন অর্পা

ইন্টার্ন, ডিসমিসল্যাব
বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জিনিসপত্র লুটপাটের এআই নির্মিত ছবি প্রচার

বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জিনিসপত্র লুটপাটের এআই নির্মিত ছবি প্রচার

সুদেষ্ণা মহাজন অর্পা

ইন্টার্ন, ডিসমিসল্যাব

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীদের লাগেজ থেকে প্রতিদিন দামী জিনিসপত্র লুটপাট হচ্ছে এমন দাবিতে খোলা লাগেজসহ দুটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে। তবে ডিসমিসল্যাবের ফ্যাক্টচেকে দেখা যায়, ছবিগুলো এআই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। 

ফেসবুকে সম্প্রতি একটি ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে দুইটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে। ক্যাপশনে পোস্টদাতা লিখেছেন, “বিগত কোনো সরকারে প্রবাসী ভাইদের লাগেজ মাল চুরি করে নাই ইউনুসের সরকার তা রেকর্ড সৃষ্টি করে বিশ্ব ব্যয়াপী থাক লাগিয়ে দিচ্ছে। একজন প্রবাসী দেশে আসার সময় পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে কিছু জিনিস নিয়ে আসে সেগুলো যদি এয়ার পোর্টে চুরি হয়ে যায় এর চেয়ে কষ্ট আর কি হতে পারে কোন দেশে বসা বাস করছি আমরা 😢” (বানান অপরিবর্তিত)। একাধিক ব্যক্তিগত প্রোফাইল (, , , , , , , ) থেকে একই দাবিতে প্রথম ছবিটি পোস্ট করা হয়। 

অন্যদিকে ফেসবুকের একটি পেজ এবং টিকটকে দ্বিতীয় ছবিটি শেয়ার করা হয়। একটি ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে পোস্ট হওয়া ছবির বিবরণে লেখা, “হযরত শাহজালাল(রা) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দৃশ্য, এভাবেই প্রবাসীদের দামী জিনিসপত্র লু”*ট’পা’*টের৷ মহাউৎসব চলছে। দেখার কেউ নেই, এই হলো নতুন লা’*ল বাংলাদেশ।” প্রতিবেদন প্রকাশের আগ পর্যন্ত পোস্টটি প্রায় ৭৫০বার শেয়ার করা হয়েছে এবং সেখানে তিন হাজারের বেশি প্রতিক্রিয়া ছিল। 

প্রথম ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন লোক বিমানবন্দরের ব্যাগেজ ক্লেইমের মেঝেতে শুয়ে আছেন। পাশে তার সুটকেসটি খোলা পড়ে আছে। লাগেজের সব জিনিসপত্র বাইরে এলোমেলো অবস্থায়। দ্বিতীয় ছবিতে তিনজন মানুষ খোলা লাগেজ নিয়ে বসে পড়েছে। তাদের ব্যাগের জামাকাপড়, ফোন সবকিছু বিচ্ছিন্নভাবে মেঝেতে ছড়িয়ে আছে। 

ছবিগুলো বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা যায়, ১ম ছবিতে থাকা সবগুলো অক্ষরই অস্পষ্ট হরফে লেখা। কোনো লেখা ঠিকভাবে পড়া যাচ্ছে না। শুধুমাত্র “১৪.৩৫” লেখাটি বোঝা যাচ্ছে। অন্যদিকে ২য় ছবিতে কোনো লেখা স্পষ্টভাবে নেই। লাগেজ হোল্ডারগুলোর আকারে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের পোশাকের রঙেও ভিন্নতা দেখা গেছে। ফ্রেমের ভেতরে একজনকে মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তুলতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মোবাইলের স্ক্রিনে যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, তার সঙ্গে মূল ছবির অনেক অমিল এসব দেখে বোঝা যায় ছবিটি এআই দিয়ে বানানো হয়েছে। 

  • Factcheck-ai-images-airport-loot-claim
  • Factcheck-ai-images-airport-loot-claim

অধিকতর যাচাইয়ের জন্য এআই যাচাইকারী টুলস ‘হাইভ মডারেশন‘ দিয়ে যাচাই করলে দুটি ছবিকেই প্রায় শতভাগ এআই নির্মিত ছবি বলে চিহ্নিত করা হয়। 

অর্থাৎ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীদের লাগেজ থেকে মালামাল লুটপাট হয়ে যাওয়ার দাবিতে প্রচারিত ছবি দুটো এআই দিয়ে তৈরি।

প্রসঙ্গত, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসীদের লাগেজ থেকে মালামাল চুরি হওয়ার অভিযোগের একটি ভিডিও সম্প্রতি সামনে এসেছে। এর প্রেক্ষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ছবি বানিয়ে তা বিমানবন্দরে প্রবাসী হেনস্তার দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে। 

আরো কিছু লেখা