তৌহিদুল ইসলাম রাসো
ভিডিওটি সামান্তা শারমিনের বাসা থেকে টাকা উদ্ধারের নয়
তৌহিদুল ইসলাম রাসো
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে সিন্দুক ও বস্তাভর্তি টাকা উদ্ধারের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেত্রী সামান্তা শারমিনের বাসা থেকে সেগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে, ভিডিওটি পাঁচ বছরেরও বেশি পুরোনো এবং এটি আসলে এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের ঘটনা। এর আগে, ২০২২ সালেও একই ভিডিও ভুয়া দাবিতে আরেক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের বলে প্রচার হয়েছিল, এবং সে সময় তা নিয়ে যাচাই প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছিল। পুরোনো সেই ভিডিওটি এবার ভিন্ন দাবিতে এনসিপি নেত্রীকে জড়িয়ে পুনরায় ছড়ানো হচ্ছে।
ফেসবুকের বেশ কয়েকজন ব্যবহারকারী (১, ২, ৩, ৪, ৫) ১০ আগস্ট সকাল থেকে একই দাবিতে ভিডিওটি শেয়ার করেন। যাচাইয়ে দেখা যায়, ব্যবহারকারীদের সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থক। কারও পেজ-আইডির প্রোফাইল বা কভার ছবিতে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি দেখা যাচ্ছে। আবার কেউ আওয়ামী সমর্থনে আগে বিভিন্ন পোস্ট করেছেন।

ব্যবহারকারীদের শেয়ার করা ১ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটি বাসার লকার থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করছেন। র্যাবের এক কর্মকতা উদ্ধার করা অর্থের পরিমাণ সংবাদমাধ্যমে জানাচ্ছেন। আর কিছু কিছু জায়গায় সামান্তা শারমিন বক্তব্য দিচ্ছেন এমন ছবি-ভিডিও দেখা যাচ্ছে। ভিডিওতে ভয়েসওভারে একজন বলছেন, “এবার এনসিপি নেত্রী সামান্তা শারমিনের বাসায় মিললো চার সিন্দুক ও বস্তাভর্তি টাকা। বাড়ি নয় যেন পুরো টাকার ব্যাংক বানিয়েছেন নিজের বাড়িকে। এবার পাঁচদিনের রিমান্ডে এনসিপি নেত্রী সামান্তা শারমিন…।”
ছড়িয়ে পড়া ফেসবুক পোস্টের বিবরণে লেখা, “এমসিপি নেত্রী সামান্তা শারমিনের বাসায় মিললো বস্তা বস্তা টাকা। এনসিপির নেতাকর্মীদের দুর্নীতি জেনো আকাশ ছোঁয়া বিগত দিনের সকল দলকে ছাড়িয়েছে তাদের দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি।” (বানান অপরিবর্তিত)
ভিডিওটির একদম শেষে “বিজয় শর্টস ওয়াইটি” লেখা একটি লোগো দেখা যাচ্ছে। এই সূত্র ধরে খোঁজ করে একটি ইউটিউব চ্যানেলের সন্ধান পায় ডিসমিসল্যাব। চ্যানেলটি যাচাইয়ে হুবহু একই ভিডিও অভিন্ন দাবিতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার একদিন আগে অর্থাৎ ৯ আগস্ট রাতে শেয়ার করতে দেখা যায়। “এনসিপি নেত্রীর বাসায় মিললো ৪ সিন্দুক ও বস্তা ভর্তি টাকা ; বাড়ি যেনো পুরো টাকার ব্যাংক.! Awami League” — শিরোনামের ভিডিওটি এখন পযর্ন্ত প্রায় ৫০ হাজারবার দেখা হয়েছে।

ঘটনাটির সত্যতা যাচাইয়ে, শুরুতে কিফ্রেম ধরে অনলাইনে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখে ডিসমিসল্যাব। খোঁজে সংবাদমাধ্যম “বাংলা ভিশন” এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত সেই ভিডিও প্রতিবেদনের সঙ্গে বর্তমানে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজের কিছু জায়গায় হুবহু মিল রয়েছে। মূলত বাংলা ভিশনের সেই ভিডিও প্রতিবেদন থেকে ভিন্ন ভিন্ন অংশ কেটে নিয়ে তা সম্পাদনা করে বর্তমানের ভিডিওটি বানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সে সময়ে সারাদেশে চলমান শুদ্ধি অভিযানে ক্যাসিনো পরিচালনা মামলায় গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগ নেতা এনু-রুপনের বাসায় অভিযান চালিয়ে নগদ ২৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা উদ্ধার করে র্যাব।

এছাড়া রিভার্স ইমেজ সার্চে একই ভিডিও ফুটেজ নিয়ে একটি যাচাই প্রতিবেদন খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। ২০২২ সালে ভিডিওটি আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের বলে ছড়ানো হলে বুম বাংলাদেশ সে সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানায় দাবিটি সঠিক নয়।

অর্থাৎ, পাঁচ বছরের পুরোনো ঘটনার ভিডিও এর আগেও ভুয়া দাবিতে ছড়ানো হলে তা নিয়ে যাচাই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কিন্তু ওই একই ভিডিও সম্পাদনা করে বর্তমানে এনসিপি নেত্রী সামান্তা শারমিনের বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে, যা সঠিক নয়।