ফাতেমা তাবাসুম

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
জুলাই ১৮, ২০২৫
২২:৫১:৩৮
গোপালগঞ্জে ট্রেনিং নিচ্ছে ‘মুজিব বাহিনী’ দাবিতে ভারতের মাওবাদীদের ট্রেনিং ক্যাম্পের ছবি
This article is more than 3 months old

গোপালগঞ্জে ট্রেনিং নিচ্ছে ‘মুজিব বাহিনী’ দাবিতে ভারতের মাওবাদীদের ট্রেনিং ক্যাম্পের ছবি

জুলাই ১৮, ২০২৫
২২:৫১:৩৮

ফাতেমা তাবাসুম

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

ফেসবুকে একটি চ্যাটের স্ক্রিনশট ছড়িয়েছে যেখানে সাত অস্ত্রধারী ব্যক্তির ছবির নিচে দাবি করা হচ্ছে এটি টুঙ্গিপাড়ার কোটালিপাড়ায় নিয়মিত অস্ত্র প্রশিক্ষণের দৃশ্য। স্ক্রিনশটটি “গোপালগঞ্জে ট্রেনিং নিচ্ছে মুজিব বাহিনী” – দাবিতে ছড়িয়েছে। ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, দাবিটি সঠিক নয়। ছবিটি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া কোটালিপাড়ার অস্ত্র প্রশিক্ষণের নয়। এটি অন্তত ১৩ বছর আগের ভারতের মাওবাদী সদস্যদের প্রশিক্ষণের একটি ছবি।

১৮ জুলাই একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে একটি স্ক্রিনশট পোস্ট করে দাবি করা হয়, “গোপালগঞ্জে ট্রেনিং নিচ্ছে মুজিব বাহিনী, ৭১ এবার ভ*রে দিবে সবগুলো কে।” স্ক্রিনশটে থাকা ছবিতে দেখা যায়, সাতজন অস্ত্রধারী ব্যক্তি মাঠে অবস্থান করছে অস্ত্র একদিকে তাক করে। ছবির নিচে লেখা– “ভাই টুঙিপারা কোটালিপারায় এরা রেগুলার অস্ত্র ট্রেনিন করে। ফারদিন ভাইএর পোস্ট মিথ্যা নাও হতে পারে। আপনারা খোজ নিয়ে দেখেন।” (বানান অপরিবর্তিত)। এই পোস্টের মন্তব্য অংশে ঘটনা সত্য ধরে নিয়ে একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, মানিকগঞ্জের রিমোট এরিয়া গুলিতেও অনেককেই এভাবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। আরেকজন বলেন, “ভারতীয় বিভিন্ন সেনানিবাসে ভারতলীগ ট্রেনিং নিচ্ছে।”

কিওয়ার্ড অনুসন্ধানে ১৮ জুলাই ভোর চারটায় ‘মুয়াজ আব্দুল্লাহ’ নামে আরেক ব্যবহারকারীর একটি পোস্ট খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। আলোচ্য স্ক্রিনশটটি প্রথম তিনিই শেয়ার করেছিলেন। ছবির ক্যাপশনে তিনি প্রশ্ন করেন, “কোটালিপাড়া টুঙ্গিপাড়ায় নাকি অস্ত্রের ট্রেনিং হয়? কেউ জানেন?” বর্তমানে সড়িয়ে ফেলা এই পোস্টের মন্তব্য অংশে ‘ফারদিন হাসান’ নামক এক ব্যবহারকারীর একটি পোস্টের লিংক সংযুক্ত করেছিলেন মুয়াজ।

‘ফারদিন হাসান’ প্রোফাইল থেকে ১৮ জুলাই ভোররাতে গোপালগঞ্জের সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে একটি পোস্ট করা হয়। সেখানে তিনি দাবি করেন, ‘গোপন সূত্র’ অনুযায়ী গোপালগঞ্জে পুলিশ বা সেনাবাহিনীর গুলিতে কেউ নিহত হয়নি। বরং তার ভাষায়, এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে প্রস্তুতি নিয়েছিল এক ‘প্যারা মিলিশিয়া বাহিনী’– যারা গণঅভ্যুত্থানের নেতাদের হত্যা করতে চেয়েছিল। ফারদিনের ভাষ্যমতে, “এই জঙ্গি কার্যক্রমের জন্য তিনদিনব্যাপি একটা ট্রেনিং ক্যাম্পও করে তারা। কিন্তু সমাবেশের দিন তাদের সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।” 

ফারদিনের পোস্টের কয়েক ঘণ্টা পরই স্ক্রিনশটটি দুটি প্রোফাইল হতে পরপর পোস্ট করা হয়। যার মাঝে একটি পোস্টে সরাসরি দাবি করা হয়, গোপালগঞ্জে ‘মুজিব বাহিনীর’ অস্ত্র প্রশিক্ষণ চলছে।

ডিসমিসল্যাব রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ছবিটি যাচাই করে। যাচাইয়ে দেখা যায়, ছবিটি অন্তত ১৩ বছর পুরোনো। ২০১২ সাল থেকে ছবিটি ফ্রান্সভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এএফপির সূত্র ধরে বিবিসি, মিন্ট, ইন্ডিয়া ট্যুডে, ও হিন্দুস্তান টাইমস, এবং সহ একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে মাওবাদী-সম্পর্কিত প্রতিবেদনে প্রতীকী ছবি হিসেবে ছাপা হয়েছে। ছবিটির বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় এএফপির জাপানভিত্তিক সংবাদপত্র এএফপিবিবি’র একটি প্রতিবেদনে। এএফপির দেয়া তথ্য অনুসারে, ফাইল ছবিটি ২০১২ সালের ৮ জুলাইয়ের। ভারতের মধ্যাঞ্চলের ছত্তিশগড় রাজ্যের মাওবাদী সদস্যরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন সে সময় ছবিটি তোলা হয়। ছবিটি তুলেছিলেন নোয়াহ সিলাম।

এথেকে স্পষ্ট হয়, ছবিটির সঙ্গে গোপালগঞ্জ বা বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই। 

প্রসঙ্গত, ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে পৌঁছায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীরা। সমাবেশ ঘিরে সেখানে উত্তেজনা তৈরি হলে দলটির সমাবেশস্থল ও গাড়িবহরেও হামলা হয়। সংঘর্ষে জড়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। সর্বশেষ তথ্যমতে, অন্তত পাঁচ জন নিহত হয়েছেন। ঘটনার পর জেলা জুড়ে কারফিউ জারি করা হয়, যা আজ– ১৮ জুলাই সকাল ১১টা পর্যন্ত থাকার কথা থাকলেও পরে তা বাড়ানো হয়। সংঘর্ষকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে একাধিক ছবি ও ভিডিও। এরকম সাতটি ভিন্ন ছবি ও ভিডিওর তথ্য যাচাই করে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডিসমিসল্যাব।

আরো কিছু লেখা