তৌহিদুল ইসলাম রাসো
বিএনপির হামলার দাবিতে ছড়াচ্ছে মরক্কোর ভিডিও
তৌহিদুল ইসলাম রাসো
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হতে দেখা গেছে। সেখানে দাবি করা হচ্ছে গাজীপুরে বিএনপির চাঁদাবাজদের হাত থেকে বাঁচতে এক ব্যক্তি প্রাণ ভয়ে পানির ট্যাংকের উপরে উঠেলেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে দাবিটি ভুয়া। মূল ভিডিওটি গাজীপুরের বা বাংলাদেশেরও নয়, বরং আফ্রিকার দেশ মরক্কোর। মরক্কোর একাধিক গণমাধ্যমে ভিডিওটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।

ফেসবুকের বেশকিছু ব্যবকারকারী ভিডিওটি শেয়ার করেছেন বাংলাদেশের গাজীপুরের ঘটনা দাবি করে। বেশকিছু প্রোফাইল (১, ২, ৩, ৪, ৫), পেজ (১, ২, ৩) থেকে একই বিবরণে তা শেয়ার করা হয়েছে। বিবরণে লেখা, “গাজীপুরে চাঁদাবাজদের হাত থেকে বাঁচতে প্রাণ ভয়ে পানির ট্যাংকের উপরে উঠেছিল কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। এই হলো আমাদের নতুন বাংলাদেশ। নিত্যনতুন ভাবে হ*ত্যা যজ্ঞ চলমান।”
ভাইরাল সেই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি উচুঁ পানির ট্যাংকে এক ব্যক্তি হাতে থাকা লাঠি বা রামদা সদৃশ একটি অস্ত্র দিয়ে আরেক ব্যক্তিকে আঘাত করছেন। তৃতীয় এক ব্যক্তি ট্যাংকের সিঁড়ি ধরে উপরে ওঠার চেষ্টা করছেন। আশেপাশে অনেক ব্যক্তির চিৎকারের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।

একই দাবিতে করা এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর পোস্ট বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেটি এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজারবার দেখা হয়েছে এবং প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন হাজারেরও বেশি। এছাড়া পোস্টে মন্তব্য করা হয়েছে একশোর বেশিবার। মন্তব্য যাচাইয়ে দেখা গেছে ভিডিওটি বাংলাদেশের বলে ধরে নিয়েছেন বেশিরভাগ ব্যবহারকারী। একজন লিখেছেন, “এর দায় পুরোপুরি শান্তির মেহমান ড. ইউনুস সরকারের। প্রশাসন লেজেগোবরে অবস্থা; স্বরাষ্ট উপদেষ্টা খামাখা….!” আরেকজন লিখেছেন, “বিএনপির কাছ থেকে মঙ্গল গ্ৰহে গিয়ে ও রেহাই পাবেন না। এখন ও সতর্ক হোন বিএনপি কে বয়কট করুন।”
ভাইরাল ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ে এর কিফ্রেম ধরে অনলাইনে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। দেখা যায়, ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির ফুটেজের সঙ্গে অনলাইনের আরও কন্টেন্টের হুবহু মিল আছে। মরক্কোর এক স্থানীর সংবাদমাধ্যম বারলাম্যানটুডের ইউটিউব চ্যানেলে গত ১২ জুলাই একই ফুটেজের শর্টস ভিডিও পোস্ট করা হয়। “মধ্য মরক্কোতে অগ্নিনির্বাপক কর্মীকে মারধর, পানির টাওয়ার থেকে ফেলে দেওয়ার খবর” শিরোনামে প্রকাশিত সেই ভিডিওটির ইংরেজি বিবরণে বলা হয়, মধ্য মরক্কোর বেনি মেল্লালে, বাবার মৃত্যুর তদন্তের দাবিতে একটি পানির টাওয়ারে বিক্ষোভ করছিলেন এক ব্যক্তি। সেসময় তাকে উদ্ধার করতে আসা এক অগ্নিনির্বাপক কর্মীকে মারধর করে টাওয়ার থেকে ফেলে দেন। এতে সেই অগ্নিনির্বাপক কর্মী গুরুতর আহত হন। এই ঘটনার পর সেখানে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

একই ঘটনা উল্লেখ করে গত ১২ জুলাই সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে মরক্কোর একাধিক (১, ২) সংবাদমাধ্যম। সংবাদমাধ্যমের কোনো প্রতিবেদনে হাতে থাকা অস্ত্রটিকে লাঠি, আবার কোথাও ধারালো অস্ত্র বলা হচ্ছে।
অর্থাৎ, ফেসবুকের ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে গাজীপুরের কোনো চাঁদাবাজির সম্পর্ক নেই। মরক্কোর একটি ভিন্ন ঘটনার দৃশ্য ছড়াচ্ছে বাংলাদেশের গাজীপুরের দাবিতে, যা সত্য নয়।