ফাতেমা তাবাসুম
ছবি থেকে তৈরি এআই ভিডিও বাস্তব ঘটনা দাবি করে প্রচার
ফাতেমা তাবাসুম
সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো ছয় সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আদালত প্রাঙ্গনে হাতকড়া পরা এক আসামিকে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। আঘাতপ্রাপ্ত আসামীর পাশে দাঁড়িয়ে আছে তিন পুলিশ। ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয়, এটি দেশের আদালত এলাকায় ঘটে যাওয়া এক মব হামলার দৃশ্য। তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে জানা যায়, ভিডিওটি আসল নয়, বরং এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি। পত্রিকায় প্রকাশিত মৌলভীবাজারের এক হত্যা মামলার আসামি জুনেল মিয়ার আদালতে হাজিরার ছবির সাহায্যে এআই প্রম্পট ব্যবহার করে ভিডিওটি বানানো হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি একাধিক ব্যবহারকারী (১, ২, ৩, ৪) একটি ভিডিও শেয়ার করে, যেখানে দাবি করা হয়, এটি বাংলাদেশের আদালত প্রাঙ্গণে ঘটে যাওয়া মব হামলার দৃশ্য। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়, “এই নিকৃষ্ট বিচার ব্যবস্থা আর অমানবিক মব এই জাতি আগে কখনো দেখেছে কিনা জানা নেই আদলত প্রাঙ্গনের মত জায়গায় মব এর কারণে যদি জীবনের নিরপত্তা না পাওয়া যায় আমরা তাহলে কিভাবে নিরাপদ,আমাদের নিরাপত্তা কোথায় মবের কবলে দেশ।।।😭😭” ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামের একটি প্রোফাইল থেকেও একই দাবি করে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়। এটি এখন পর্যন্ত ৬ লক্ষ ৮৬ হাজার বারেরও বেশি দেখা হয়েছে, ১২০০-এর বেশি শেয়ার এবং ৭০০-এর বেশি প্রতিক্রিয়া পেয়েছে।

ভিডিওটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটির নিচে ঠিক ডান পাশের কোনার দিকে লোগো ও টেক্সট আছে। টেক্সটে লেখা ‘মিনিম্যাক্স । হাইলো এআই’। যা নিশ্চিত করে ভিডিওটি মূলত মিনিম্যাক্স-হাইলো জেনারেটিভ এআইয়ের প্রম্পট ব্যবহারে তৈরি।
মিনিম্যাক্স এআই হলো সাংহাই ভিত্তিক একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রতিষ্ঠান। হাইলো এআই মিনিম্যাক্সের অধীনে একটি টেক্সট-টু-ভিডিও মডেল। মূলত উপযুক্ত স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে ব্যবহারকারীরা মিনিম্যাক্স-হাইলো প্ল্যাটফর্মে বাস্তবভিত্তিক ভিডিও তৈরি করতে পারে।

ছয় সেকেন্ডের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায় পেছন থেকে আসা এক ব্যক্তি হাতকড়া পরিহিত মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির মাথায় আঘাত করেন। আঘাত পাওয়া মাত্রই ব্যক্তিটি পড়ে যান। তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুই পুলিশ সদস্য পেছন ফিরে তাকানোর মুহূর্তে তাদের মুখ অস্পষ্ট ও ঝাপসা হয়ে আসে। মুখের অস্পষ্টতা থেকে ভিডিওটি যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে তৈরি সে ধারণা মিলে।
ভিডিওটির কি-ফ্রেম ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা গেছে, ভিডিওর একদম শুরুর কি-ফ্রেমের সঙ্গে দৈনিক সমকালে গত জুনে প্রকাশিত একটি ছবি হুবহু মিলে যায়। ছবিতে হাতকড়া পরা যে ব্যক্তিকে দেখা যায়, তিনি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত জুনেল মিয়া। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গ্রেপ্তারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেন। এরপর তাকে আদালতে হাজির করার এই ছবিটি বিভিন্ন পত্রিকায় (১, ২, ৩) প্রকাশিত হয়।

অর্থাৎ, সামাজিক মাধ্যমে বাস্তব ঘটনা দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি আসলে এআই-জেনারেটেড। ভিডিওটি আসামি জুনেল মিয়ার আদালতে হাজিরার ছবি ব্যবহার করে মিনিম্যাক্স-হাইলো’ জেনারেটিভ এআই মডেল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।