আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
ভারতের দুটি ভিডিও বাংলাদেশের দাবিতে প্রচার

ভারতের দুটি ভিডিও বাংলাদেশের দাবিতে প্রচার

আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সামাজিক মাধ্যমে দুটি ভিডিও প্রচারিত হতে দেখা যাচ্ছে যার একটিতে একজন ব্যক্তিকে রাস্তার পাশে দলবদ্ধভাবে মারধর করতে দেখা যায় এবং অন্য ভিডিওতে একটি উন্মুক্ত মাঠে একজন ব্যক্তিকে কোদাল দিয়ে আঘাত করতে দেখা যায়। ভিডিওগুলো সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে এগুলো বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনার ভিডিও। তবে দুটি ভিডিও যাচাইয়ে দেখা যায়, এগুলোর একটি ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ এবং অন্যটি উত্তর প্রদেশের। 

প্রথম ভিডিও

সামাজিক মাধ্যম এক্সে একটি ভিডিও পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়, “এটি ইউনূসের নতুন বাংলাদেশ, যেখানে প্রতিনিয়ত মানুষ হত্যা হয়…”। জাহিদ জাহা নামের একটি প্যারোডি অ্যাকাউন্ট থেকে ১ জুলাই ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। ভিডিওতে কিছু মানুষকে মারামারি করতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে একজন ব্যক্তি একটি কোদাল দিয়ে প্রতিপক্ষের মাথায় আঘাত করে। পোস্টে #YunusMustGo হ্যাশট্যাগটিও দেখা যায়।

ভিডিওর সূত্র খুঁজতে গিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের একাধিক পোস্ট পাওয়া যায় যেখানে এটিকে ভারতের প্রতাপগড় এলাকার ভিডিও বলে দাবি করা হয় (, , )। কিছু প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করে এই ঘটনা নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম দৈনিক ভাস্করের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ২৯ জুনে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল, “প্রতাপগড়ে জমি নিয়ে বিবাদে কোদাল দিয়ে হামলা, ভিডিও: এক যুবকের মাথা ফেটে গেছে, আহত ৫; ৩ অভিযুক্ত হেফাজতে”।  প্রতিবেদনে বলা হয়, “আসপুরা দেবসারা থানার অধিনস্ত বিঝলা গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধ সহিংসতায় রূপ নেয়। হীরা যাদব ও তার প্রতিবেশী বীরেন্দ্র যাদবের মধ্যে চলমান জমির বিরোধের জেরে উভয় পক্ষ মাঠে মুখোমুখি হয়। বিতর্কের সময় বীরেন্দ্র যাদবের পক্ষের লোকজন হীরা যাদবের উপর কোদাল দিয়ে আক্রমণ চালায়। হামলায় হীরা যাদবের মাথা ফেটে যায় এবং তিনি ঘটনাস্থলেই অচেতন হয়ে পড়েন। এই সংঘর্ষে দুই পক্ষের মোট ৫ জন আহত হয়েছেন।” 

অর্থাৎ, এই ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়, ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রতাপগড়ের।

দ্বিতীয় ভিডিও

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে “মুক্তিযোদ্ধা চেতনা বন্ধু” নামের প্রোফাইল থেকে পয়লা জুলাই একটি ভিডিও পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয় “এই জাতি হিসেবে আমরা লজ্জিত”। ভিডিওতে দেখা যায় একজন ব্যক্তিকে রাস্তার পাশে কয়েকজন মিলে মারধর করছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে এটিকে সরাসরি বাংলাদেশের বলা না হলেও কমেন্টে অনেকেই ভিডিওর ঘটনাস্থল এই দেশেরই বলে মনে করতে দেখা যাচ্ছে। একজন ব্যবহারকারী কমেন্ট করেছে “হায়রে,উনুসের বাংলাদেশ। প্রশাসন কোথায়?” (বানান অপরিবর্তিত)। আরেকজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “এর বিচার বাংলাদেশ একদিন হবে ইনশাআল্লাহ”। পোস্টটি এখন পর্যন্ত ৮৬১টি শেয়ার হয়েছে।

ভিডিওটির সূত্র যাচাই করতে গেলে ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে ভারতের তেলেগু ভাষার গণমাধ্যম সামায়াম তেলেগুর একটি প্রতিবেদন। ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির শিরোনাম হলো, “গুন্টুর: সবার চোখের সামনে রাস্তায়ই নির্মমতা… ভিডিও শেয়ার করলেন নারা লোকেশ”। প্রতিবেদনে বলা হয়, “ভিডিওতে দেখা যায়, একদল ব্যক্তি একজনকে ধরে রেখেছে এবং তাকে রাস্তার ডিভাইডারে নির্মমভাবে পেটাচ্ছে এবং আশেপাশের সবাই দেখছে।” মূল ঘটনাটি অন্ধ্র প্রদেশের পিদুগুরাল্লার প্রান্তে সংঘটিত হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী ভিক্টিম সাইদা নামের এক ব্যক্তি। পুরোনো শত্রুতা ও জমি বিরোধের জের ধরে এই হামলা হয়েছে বলে তার ধারণা।

একই ঘটনার ভিডিও ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের বর্তমান মন্ত্রী এবং তেলেগু দেশাম পার্টির সাধারণ সম্পাদক নারা লোকেশও তার অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করেন। তবে তিনি এটিকে রাজনৈতিক হামলা বলে প্রতিবাদ করেন।

অর্থাৎ, এই ভিডিওটিও বাংলাদেশের নয়, ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের।

আরো কিছু লেখা