ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
ভিডিওটি ভোলার তজুমদ্দিনে ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়

ভিডিওটি ভোলার তজুমদ্দিনে ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়

ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি এক ঘরের ভেতর এক পুরুষ ও এক নারীকে আটকে নির্যাতনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। দাবি করা হয়, এটি ভোলার তজুমদ্দিনে চাঁদা না পেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হাতে স্বামীকে মারধর ও স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার ফুটেজ। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে, ভিডিওটি কুমিল্লার মুরাদনগরের ভিন্ন ঘটনার। গত ২৮ জুন রাতে সামাজিক মাধ্যমে কুমিল্লায় এক হিন্দু নারীকে যৌন নির্যাতনের একটি ভিডিও ছড়ায়, যা নিয়ে পরবর্তীতে আলোচনার সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, ৩০ জুন ভোলার তজুমদ্দিনে চাঁদা না পেয়ে এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়। ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটি কুমিল্লার ঘটনার, ভোলার নয়।

দৈনিক আজকের কণ্ঠ’ নামের একটি পেজ থেকে গত পহেলা জুলাই একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, ভিডিওটি ভোলার। ক্যাপশনে দাবি করা হয়, “ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার কামারপট্টি এলাকায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে মারধর ও স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে শ্রমিক দল ও ছাত্রদল নেতাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী। রোববার (২৯ জুন) সকালে এ ঘটনা ঘটে। তজুমদ্দিন থানার ওসি মো. মহব্বত খান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।”

ভিডিওতে দেখা যায়, হলুদ জার্সি পরা এক ব্যক্তি এক পুরুষকে মারধর করছেন। মারধরের সময় তার পোশাকও ছিঁড়ে ফেলা হয়। ভিডিওটিতে একজন নারীকেও যৌন নিপীড়ন করতে দেখা যায়। ঘরের ভেতর আরও কিছু মানুষের কণ্ঠ শোনা যায়। ভিডিওর প্রথম ২২ সেকেন্ডজুড়ে ওপরের অংশে ‘আজকের কণ্ঠ’ পেজের নাম স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। এটি পরে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ (, ) ও প্রোফাইলে একই দাবিতে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রায় ৭০ হাজার সদস্যের ‘Crack Platoon (ক্র্যাক প্লাটুন) – আওয়ামী একটিভিস্ট গ্রুপ’ নামের একটি গ্রুপে ‘মুজিব ফোর্স- Mujib Force’ নামের একটি পেজ আজকের কণ্ঠের এই ভিডিওটি পোস্ট করে। ভিডিওটি এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ২৩ হাজারের বেশি ভিউ পায়। 

কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে দৈনিক বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার তিন বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মারধর ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তবে অভিযোগের সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির সম্পর্ক আছে কি না– তা যাচাই করতে ডিসমিসল্যাব টিম ভোলা জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শরীফুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি জানান, ভাইরাল ভিডিওটি ওই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এবং সেটি ভিন্ন ঘটনার ফুটেজ। 

এ বিষয়ে ভোলা জেলা পুলিশ পরিচালিত ফেসবুক পেজেও একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, “আজকের কণ্ঠসহ কয়েকটি অনলাইন মাধ্যমে  একটি এডিটেড ভিডিওকে ভোলা জেলার তজুমদ্দিন থানার ঘটনা বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ভোলা জেলার তজমুদ্দিন থানায় এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। যাচাই-বাছাই ছাড়া এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারণা হতে  সচেতন থাকার জন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সম্মানিত নাগরিকবৃন্দকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।” শরীফুল হক জানান, ভিডিওতে যে ঘটনা দেখা যাচ্ছে তা ভোলায় ঘটেনি– এই বিষয়টি নিশ্চিত করতেই তিনি নিজেই ওই বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। 

এর আগে গত ২৬ জুন রাতে কুমিল্লার মুরাদনগরের হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে রামচন্দ্রপুর পাঁচকিত্তা গ্রামের ফজর আলী নামে এক ব্যক্তি এলাকার লোকজনের হাতে আটক ও মারধরের শিকার হন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কিছু লোক তাৎক্ষণিকভাবে ভুক্তভোগীর ভিডিও ধারণ করে, যা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ধর্ষণ, মারধর ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি আইনে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যা নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন, প্রথম আলো, বিবিসি বাংলাসহ একাধিক গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করা হয়েছে। 

ভোলার ঘটনা দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটির কি-ফ্রেম পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, একটি হলুদ রঙের নয় নম্বর জার্সি পরা একজন ব্যক্তি ভুক্তভোগীদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করছেন। একই ধরনের পোশাক পরা এক ব্যক্তিকে সম্প্রতি মুরাদনগরের ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতেও দেখা যায়। ভিডিওটি সেই ঘটনারই অংশ কি না, তা নিশ্চিত করতে ডিসমিসল্যাব কুমিল্লার মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি নিশ্চিত করেন, এটি মুরাদনগরের ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফির মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত ভিডিওচিত্র। 

অর্থাৎ, ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার স্বামীকে মারধর ও স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার ফুটেজ দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি মূলত কুমিল্লার মুরাদনগরের ভিন্ন একটি ঘটনার।

আরো কিছু লেখা