ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
ছবিটি ২০২০ সালের আত্মঘাতী এক কিশোরীর

ছবিটি ২০২০ সালের আত্মঘাতী এক কিশোরীর

ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এক কিশোরীর ছবি শেয়ার হতে দেখা যাচ্ছে। বলা হচ্ছে– প্রথম পিরিয়ডের সময়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যায় মাত্র তেরো-চৌদ্দ বছরের সেই মেয়েটি। একই দাবিতে একাধিক ব্যবহারকারীরা তাদের প্রোফাইল, পেজ ও গ্রুপে ছবিটি শেয়ার করেন। তবে, ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা গেছে ছবিটি পুরোনো এবং এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। মূল ছবিটি ২০২০ সালে আত্মঘাতী এক কিশোরীর।

ফেসবুকের বিভিন্ন প্রোফাইল (, , ), পেজ (, , ) ও গ্রুপে (, , ) একই ছবি পোস্ট করে কিশোরী মেয়েটির প্রথম পিরিয়ডে মৃত্যুর ঘটনা শেয়ার করা হয়। বলা হয় মাসিকের শুরু থেকেই জ্বর, পেটে ব্যথা ও অতিরিক্ত রক্তপাতে ভুগছিল মেয়েটি। দশ দিন বিছানায় থাকার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়া হয়। ঘটনাস্থল সুন্দরবনের কাছের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। মাসিকের সময় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি না মানায় এবং সুচিকিৎসার অভাবে মেয়েটি মারা যায় বলে পোস্টগুলোতে উল্লেখ করা হয়। পোস্টের ছবিগুলোতে দেখা যায়– লাল চাদরে ঢাকা খাটিয়ার ওপর এক অল্পবয়সী মেয়ের নিথর দেহ। প্রতিটি পোস্টের শেষে সূত্র হিসেবে “খালিদ বিন মোজাহিদ” নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়।

ফেসবুকে একাধিক কিওয়ার্ড ধরে সার্চ করে একই ঘটনার সবচেয়ে পুরোনো পোস্টটি পাওয়া যায়, গত ৭ এপ্রিল, ‘নারী’ নামের একটি ফেসবুক পেজে। ‘খালিদ বিন মোজাহিদ’ নামের প্রোফাইলের সঙ্গে যৌথভাবে শেয়ার করা হয়েছিল পোস্টটি। সেই পোস্টে ব্যবহার করতে দেখা যায় একটি ভিন্ন প্রতীকী ছবি। খালিদ বিন মোজাহিদ নামের প্রোফাইলের পরিচালকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা হলে তিনি ডিসমিসল্যাবকে জানান, ঘটনাটি সত্য, এবং পোস্টে ব্যবহৃত লেখাটি তার নিজের। তবে ভাইরাল হওয়া ছবির মেয়েটি এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। খালিদ বলেন, “ঘটনাটি ঘটেছে খুলনা জেলার পশ্চিম ঢ্যাংমারি গ্রামে, বানিশান্তা ইউনিয়নে, দাকোপ থানায়। তারিখ ছিল ৬ এপ্রিল ২০২৫। আমি লিখেছি (পোস্টটি) পরদিন সকালে।” তিনি আরও জানান, “যে ছবিটি এখন ভাইরাল হয়েছে, সেটি আমি তখন ব্যবহার করিনি।”

পোস্টের ছবিটির সূত্র যাচাইয়ে, রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। ২০২০ সালের দুটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম– খবরবাংলা, ও আলোকিত প্রজন্মের প্রতিবেদনে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। টাঙ্গাইলভিত্তিক ই-পত্রিকা খবরবাংলা’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ঝুমা আক্তারের ছবি। ২০২০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আত্মহত্যা করেছিল মেয়েটি। সেই সময়ে ছবি ছাড়া একই ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় আরটিভি, ও ডেলটা টাইমসসহ অন্য কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে। 

অর্থাৎ, এই ছবিটির সঙ্গে খালিদ বিন মোজাহিদের লেখায় বর্ণিত খুলনার প্রত্যন্ত গ্রামের কিশোরীর অকালমৃত্যুর কোনো যোগসূত্র নেই। প্রায় পাঁচ বছর আগের ভিন্ন ঘটনার ছবি সাম্প্রতিক সময়ের বলে ছড়ানো হচ্ছে ফেসবুকে।

আরো কিছু লেখা