ফাতেমা তাবাসুম

নেপালিদের ছত্রাক সংগ্রহের ভিডিওকে ইসরায়েলিদের পালানোর দৃশ্য দাবিতে প্রচার
ফাতেমা তাবাসুম
একটি পাহাড়ের ঢাল বেয়ে অনেক মানুষ দৌড়াচ্ছে; কারও কাঁধে ব্যাগ, কারও সঙ্গে শিশু। এমন একটি ভিডিও শেয়ার করে সামাজিক মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, এটি ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যে ইসরায়েলিদের দেশত্যাগের দৃশ্য। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবে অনেকেই একই ভিডিও শেয়ার করে একই দাবি করছেন। তবে যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটি অন্তত দুই সপ্তাহ পুরোনো এবং এটি নেপালের একটি পাহাড়ি এলাকায় ছত্রাক (ইয়ার্সাগুম্বা) সংগ্রহের দৃশ্য।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক ব্যবহারকারী (১, ২, ৩, ৪) ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করেছেন, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত শুরুর পর ইসরায়েলিরা এভাবেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। একই দাবিতে ভিডিওটি ছড়াতে দেখা গেছে ইউটিউব (১, ২, ৩, ৪), এক্স, ও ইনস্টাগ্রামেও। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও দেখা হয়েছে ৯০ লাখের বেশিবার। পোস্টটি শেয়ার হয়েছে ৩২ হাজারের বেশিবার। এছাড়াও পোস্টটিতে দেখা গেছে ১৩ হাজারের বেশি প্রতিক্রিয়া ও ৭০০-র বেশি মন্তব্য। প্রায় প্রতিটি পোস্টে ইসরায়েলি পতাকার ইমোজি ব্যবহার করা হয়েছে, এবং পোস্টের বিবরণে লেখা হয়েছে, যুদ্ধের শুরুতেই যদি ইসরায়েলিরা এভাবে পালিয়ে যায় যুদ্ধ সামাল দিবে কে।

ভিডিওটির একটি কি-ফ্রেম ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে দেখা যায়, এটি গত ১৩ জুন, ইরান-ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাত শুরুর প্রায় দুই সপ্তাহ আগেই ইউটিউবে প্রকাশিত হয়। গত ৩০ মে “জুমলানেপাল” নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটি আপলোড করা হয়। ভিডিওটির শিরোনাম এবং ইউটিউবের লোকেশন অপশনে নেপালের ‘ডোলপা’ অঞ্চলের নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। ভিডিওটির শিরোনাম দেওয়া হয়েছে নেপালি ভাষায়। সেটির অনুবাদ করলে জানা যায়, এটি একটি বিশেষ ধরনের ছত্রাক, ইয়ারসাগুম্বা সংগ্রহের দৃশ্য।

আরো যাচাইয়ে ‘গ্লোবাল ভয়েসেস’-এ সঞ্জিব চৌধুরীর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেপালের ডোলপা অঞ্চলে প্রতি বছর মে মাসে ইয়ারসাগুম্বা নামের ছত্রাক সংগ্রহ শুরু হয়। এই ছত্রাককে ‘ক্যাটারপিলার ফাঙ্গাস’ বা ‘হিমালয়ান ভায়াগ্রা’ও বলা হয়। ঔষধি গুণাগুণ থাকায় এর দাম ও চাহিদা নেপালিদের কাছে অনেক বেশি। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে যখন এই ছত্রাক সংগ্রহের মৌসুম শুরু হয়, তখন স্কুল বন্ধ থাকায় নারী, পুরুষ ও শিশুরা একসঙ্গে এই পাহাড়ি এলাকায় গিয়ে ছত্রাক সংগ্রহে অংশ নেয়। ভিডিওটিতে যে দৃশ্য দেখা যায়, তা এই বার্ষিক সংগ্রহ অভিযানেরই অংশ — যার সঙ্গে চলমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কোনো সম্পর্ক নেই। এ ব্যাপারে লেখক সঞ্জিব চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি নিশ্চিত করেন এই স্থানটি নেপালের ডোলপা অঞ্চলের পাহাড়ের আপার ডোলপো ট্রেকিং সাইটের দৃশ্য।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ১৩ তারিখে ইরানে আক্রমণ করে ইসরায়েল। পরবর্তীতে ইরানও পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে। দুই রাষ্ট্রের সংঘাতে এখন পর্যন্ত চার শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানা যায়।