তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
তিনটি আলাদা ঘটনার সম্পাদিত ভিডিও ভারতের বিমান দুর্ঘটনার বলে প্রচার

তিনটি আলাদা ঘটনার সম্পাদিত ভিডিও ভারতের বিমান দুর্ঘটনার বলে প্রচার

তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ভারতের আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনার দাবিতে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। বেশকিছু ব্যবহারকারী একই ভিডিও শেয়ার করে বলছেন সেটি আহমেদাবাদের বিমান দুর্ঘটনার ঠিক আগের মুহূর্তের দৃশ্য। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে, দাবিটি ভুয়া। তিনটি আলাদা ঘটনার ফুটেজ সম্পাদনা করে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি বানানো হয়েছে, যার সবগুলোই পুরোনো। 

ফেসবুকের বেশকিছু ব্যবহারকারী ১ মিনিট ৪ সেকেন্ডের একটি বিমান দুর্ঘটনার ভিডিও (, , , , , ) শেয়ার করেন। পুরো ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একটি বিমানের ভেতরে যাত্রীরা বসে আছেন এবং বিমানটি বার বার ঝাঁকুনি খাচ্ছে। অডিওতে একাধিক মানুষের চিৎকারের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। 

ফেসবুকে শেয়ার করা এমন একটি ভিডিও এখন পর্যন্ত ১৮ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আড়াই লাখের বেশি ব্যবহারকারী। ভিডিও পোস্টটি শেয়ার করা হয়েছে ১৫ হাজারের বেশিবার। তবে পোস্টের মন্তব্যে অনেকে সেটি ভুয়া বলে জানিয়েছেন। 

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ে ফুটেজগুলোর কিফ্রেম ধরে অনলাইনে সার্চ করে দেখে ডিসমিসল্যাব। দেখা যায়, এই একটি ভিডিও বানানো হয়েছে তিনটি আলাদা ঘটনার পুরোনো ফুটেজ যোগ করে। 

১ম ফুটেজ

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর শুরুর ৪ সেকেন্ডের ফুটেজ প্রায় ২ বছরের পুরোনো। রিভার্স ইমেজ সার্চে ইন্সটাগ্রামের একটি ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে হুবহু একই ভিডিওর ২২ সেকেন্ডের লম্বা সংস্করণ পাওয়া যায়।

ভিনসেন্ট রাদিত্য নামের সেই অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয় ২০২৩ সালের ১৪ জুলাই। পোস্টের বিবরণীতে ইন্দোনেশীয় ভাষায় জানানো হয় এটি বৃষ্টি ও বজ্রপাতের মধ্যে বিমান চালানোর সময়ে ধারণ করা হয়েছে। পোস্ট করা অ্যাকাউন্টটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, এটি পরিচালনা করা হয় ইন্দোনেশিয়া থেকে এবং এর পরিচালনাকারী একজন বিমানচালক। বিমান সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ভিডিও তিনি সেখানে শেয়ার করেন। 

২য় ফুটেজ

ভিডিওর ৫ থেকে ৪০ সেকেন্ড অংশের ফুটেজ নেওয়া হয়েছে অন্য একটি ঘটনার ভিডিও থেকে। এই ৩৬ সেকেন্ড অংশ খুঁজতে গিয়ে একটি যাচাই প্রতিবেদন খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। ভারতীয় তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্ট ক্রেসেন্ডো অসমীয়া ভাষায় সেটি নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

একই দাবিতে অর্থাৎ আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার বলে ভিডিওটি ভারতে ছড়ানো হলে যাচাই প্রতিবেদনে তারা নিশ্চিত করে যে ভিডিওটি আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার নয় বরং দুই বছর আগের। ২০২৩ সালের সেই ভিডিওটি বজ্রপাতের সময় এমিরেটস এ৩৮০ ফ্লাইটে থাকা এক যাত্রীর ধারণ করা বলে জানানো হয় সেখানে। 

৩য় ফুটেজ

৪১ সেকেন্ড থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত মোট ২৪ সেকেন্ডের ফুটেজ নেওয়া হয়েছে পুরোনো আরেকটি ঘটনার ভিডিও থেকে। ২০২৪ সালে ২২ ফেব্রুয়ারি এএফপি ফ্যাক্টচেকের আরবী ভাষায় প্রকাশিত এক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে সে সময়ে একই ফুটেজ যাচাই করা হয়।

ওই সময়ে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতে অতিবৃষ্টির কারণে বিমান দুর্ঘটনার বলে। তবে এএফপির সেই প্রতিবেদনে বলা হয় ভিডিওটি আসলে বৈরি আবহাওয়ার কারণে বিমানের ভেতরে ঝাঁকুনির, যা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। 

অর্থাৎ, পুরোনো তিনটি ঘটনার আলাদা ফুটেজ কেটে নিয়ে তা সম্পাদনা করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সাম্প্রতিক আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার ঠিক আগের দৃশ্য দাবিতে, যা সত্য নয়।

প্রসঙ্গত, গত ১২ জুন এয়ার ইন্ডিয়ার এক বিমান আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের গেটউইকের উদেশ্যে যাত্রার কয়েক সেকেন্ড পরপরই একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। এতে ২৪২ জন আরোহীর মধ্যে একজন ব্রিটিশ নাগরিক ছাড়া বাকি সবাই নিহত হন। এছাড়া দুর্ঘটনার স্থান থেকে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ২৭০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটির চিকিৎসকেরা।

আরো কিছু লেখা