ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
এনসিপি নিয়ে বক্তব্যটি খালেদ মুহিউদ্দীনের নয়

এনসিপি নিয়ে বক্তব্যটি খালেদ মুহিউদ্দীনের নয়

ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের একতি বক্তব্য বেশ ভাইরাল হতে দেখা গেছে। দুটি ফটোকার্ডে সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের ছবি ব্যবহার করে একটি উক্তি তাঁর নামে ছাপানো হয়। যেখানে লেখা ছিল, “জুলাইয়ে হাজারো প্রাণের বিনিময়ে নাহিদরা NCP নামক একটি দল খুলল। দলের চেতনা দিল জুলাই, অথচ জুলাইয়ের আহতরা চিকিৎসার দাবিতে শাহবাগে আন্দোলন করতে হচ্ছে-নেই শুধু চেতনাধারীরা। NCP দলে এক গাদা সাম|কা|মী জায়গা হলেও জুলাইয়ের কোনো আহতের জায়গা হয়নি।” (বানান অপরিবর্তিত) তবে যাচাই করে দেখা গেছে, খালেদ মুহিউদ্দীন এই মন্তব্য দেননি। বিষয়টি তিনি নিজেই ডিসমিসল্যাবকে নিশ্চিত করেন।

সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে দুটি ফটোকার্ড (, ), যেগুলোর একটিতে ‘খাম্বারকেল্লা’ এবং অন্যটিতে ‘প্রেস টিভি লিমিটেড’ নামের পেজের লোগো রয়েছে। উভয় কার্ডেই সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের ছবি ব্যবহার করে একটি মন্তব্য তাঁর নামে প্রচার করা হয়। বিশেষ করে ‘খাম্বারকেল্লা’ লোগোযুক্ত কার্ডটি একাধিক ব্যবহারকারী (, , , ) ফেসবুকে পোস্ট করতে থাকেন। পরে অনেকে একই বক্তব্য খালেদ মুহিউদ্দীনের নামে টেক্সট আকারেও (, ) ছড়াতে শুরু করেন। পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়, সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–কে ঘিরে মন্তব্য করেছেন যে, জুলাইয়ে বহু প্রাণ হারানোর পর সাবেক উপদেষ্টা ও দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এনসিপি গঠন করলেও, সেই দলকে চেতনা দিয়েছে জুলাই মাস। অথচ তখনকার আহতদের এখনও চিকিৎসার দাবিতে শাহবাগে আন্দোলন করতে হচ্ছে। তার মতে, এনসিপিতে জুলাই আন্দোলনকারী চেতনাধারীদের অনুপস্থিতি এবং সমকামী সদস্যদের স্থান হলেও, জুলাইয়ের কোনো আহত ব্যক্তি সেখানে জায়গা পাননি।

এ নিয়ে যাচাইয়ে সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীনের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল, পেজ এবং ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন নামে আরেকটি অফিসিয়াল পেজে এবং একই নামে পরিচালিত ইউটিউব চ্যানেলেও এমন কোনো বক্তব্য বা সংশ্লিষ্ট তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, খালেদ মুহিউদ্দীন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সংক্রান্ত কোনো মন্তব্য করেননি। বরং যাচাইযোগ্য উৎস ছাড়া একটি ভুয়া বক্তব্য তার নামে ছড়ানো হচ্ছে। এই বক্তব্য তার কি না এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে খালেদ মুহিউদ্দীন ডিসমিসল্যাবকে বলেন, “এই বক্তব্য আমার নয়। আমি এমন কোনো মন্তব্য করিনি।”

এর আগেও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহকে সমর্থন দিয়েছেন– এই দাবি করে খালেদ মুহিউদ্দীনের নামে একটি ফ্যানপেজের পোস্টকে তাঁর বক্তব্য হিসেবে ধরে একাধিক সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করে। তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, পোস্টটি খালেদ মুহিউদ্দীনের নয়। সে সময় এ নিয়ে ডিসমিসল্যাব একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। 

সম্প্রতি ডিসমিসল্যাবের এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে– মাত্র এক সপ্তাহে (২৫–৩১ মার্চ) অন্তত ২৯টি ইউটিউব চ্যানেলে তার বিভিন্ন টকশোর খণ্ডিত ও ভুয়া ক্লিপ ব্যবহার করে বানোয়াট তথ্য ছড়ানো হয়েছে; যেখানে ৫০টি চ্যানেল থেকে ২৮৮টি ভিডিও পর্যালোচনায় দেখে ডিসমিসল্যাব। এর মধ্যে খালেদ মুহিউদ্দীনের অসংখ্য ভুয়া টকশোও পাওয়া যায়।

প্রসঙ্গত, খালেদ মুহিউদ্দীন দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত। তিনি একজন লেখক, ঔপন্যাসিক, টক শো উপস্থাপক এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবেও পরিচিত। বর্তমানে তিনি ঠিকানা ও রিভারটেলে কর্মরত। এর আগে তিনি ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন এবং বাংলা ভাষার জনপ্রিয় টক শো ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ সঞ্চালনা করতেন।

আরো কিছু লেখা