ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
২০ বছরে সেন্টমার্টিনের পরিবর্তন দেখাতে এআই ছবির ব্যবহার
This article is more than 2 months old

২০ বছরে সেন্টমার্টিনের পরিবর্তন দেখাতে এআই ছবির ব্যবহার

ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

সামাজিক মাধ‍্যমে গত ১৪ মে সেন্টমার্টিন দ্বীপের একটি ছবি ছড়াতে দেখা গেছে। ছবিটিতে ২০ বছর আগে ২০০৫ সালে এবং বর্তমানে ২০২৫ সালে সেন্টমার্টিন দ্বীপের কতটা পরিবর্তন ঘটেছে তা দেখানো হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা এই ছবিতে দেখা যায়, ২০০৫ সালে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ঘরবাড়িহীন, সারিবদ্ধ জমি ও সবুজ গাছপালায় ঘেরা ছিল। তবে ২০ বছর পরের চিত্রে দেখা যায়, বর্তমানে দ্বীপটি ঘরবাড়িতে ভরে উঠেছে, যেখানে বাকি আছে অল্প কিছু খোলা জায়গা আর কমে গিয়েছে সবুজ গাছও। অনেকেই ছবিটিকে বাস্তব মনে করে মন্তব্য করলেও ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-নির্মিত একটি ছবি।

ফেসবুকে ‘ট্র্যাভেল ট্র্যাকার’ নামের একটি বাংলাদেশি ট্র্যাভেল এজেন্সি তাদের ৮৯ হাজার ফলোয়ারের পেজ থেকে ছবিটি শেয়ার করে লিখেছে: “২০ বছর পর ধুঁকছে সেন্টমার্টিন‼ চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন এসেছে সেন্টমার্টিন দ্বীপে, কিন্তু এই পরিবর্তন আদৌ কি ইতিবাচক? ২০০৫ সালের সেন্টমার্টিন আর ২০২৫ সালের সেন্টমার্টিন যেন আকাশ-পাতাল পার্থক্যের নামান্তর। …” ছবিটির ডান পাশে ‘ট্র্যাভেল ট্র্যকারের’ লোগো দেখা যায়। এরপর একাধিক (, ) ট্যুর ও ট্রাভেল গ্রুপ থেকে একই বিবরণ যুক্ত করে ছবিটি পোস্ট করতে দেখা যায়। মূলত ২০ বছরে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপে পরিবেশগত যে পরিবর্তন এসেছে, তা বোঝাতেই ২০০৫ ও ২০২৫ সালের সেন্টমার্টিনের দুটি ছবি একসঙ্গে পোস্ট করা হয়েছে।

ট্রাভেল ট্র্যাকার পেজের পোস্টের বিবরণে ছবিটির স্বত্বাধিকারী হিসেবে সাদ্দাম হোসাইন লিপুর নাম উল্লেখ করা হয়। এই নাম সার্চ করে দেখা যায় ফেসবুকে ‘সাদ্দাম হোসাইন লিপু’ নামের একটি প্রোফাইল থেকে গত ১৩ মে সেন্টমার্টিন দ্বীপের ২০০৫ ও ২০২৫ সালের দুটি ছবির তুলনা দেখিয়ে একটি পোস্ট করা হয়েছিল। তবে এখানে ব্যবহার করা হয়েছিল গুগল আর্থ থেকে নেওয়া ছবি। গুগল আর্থে সেন্টমার্টিনের ২০০৫২০২৫ সালের যে স্যাটেলাইট ছবি পাওয়া যায়, সেগুলোর সঙ্গে এই ছবির হুবহু মিল আছে।

গুগল আর্থে পাওয়া ছবিগুলোর সঙ্গে ট্রাভেল ট্র্যাকার পেজ থেকে পোস্ট করা ছবিগুলোর বেশকিছু অমিল দেখতে পাওয়া যায়। যেমন, ২০০৫ সালের ছবিতে দুইটি নৌকা বা জাহাজ ভেড়ানোর জেটি দেখতে পাওয়া যায়, কিন্তু এআই নির্মিত ছবিতে দেখা যায় একটি জেটি। গুগল আর্থে পাওয়া ছবিতে কিছু ঘরবাড়ি ও স্থাপনা দেখতে পাওয়া যায়, যা এআই নির্মিত ছবিতে নেই। এখানে খোলা জমি ও মাঠগুলোর পাশে থাকা গাছগুলো আছে একটি সরল রেখায় সাজানো। কিন্তু গুগল আর্থের ছবিতে গাছের সাড়িগুলো এতো সুবিন্যস্ত অবস্থায় দেখা যায় না।

২০০৫ সালের এআই নির্মিত ছবি এবং গুগল আর্থ থেকে পাওয়া ছবির তুলনা

একইভাবে ২০২৫ সালের ছবির ক্ষেত্রেও পাওয়া যায় কিছু অমিল। এআই নির্মিত ছবির প্রতিটি বাড়িই প্রায় একই আকৃতির এবং দেখতে একই রকম। এছাড়াও সব বাড়ির ছাদের রঙ কমলা ও নীল– এই দুটি রঙেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু গুগল আর্থ থেকে পাওয়া ছবিতে বিভিন্ন ডিজাইন, আকৃতি ও রঙের স্থাপনা দেখতে পাওয়া যায়।


এসব অসামঞ্জস্যতা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় সেন্টমার্টিনের এই ছবি বাস্তব নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা। এআই দিয়ে তৈরি ছবি চিহ্নিত করার দুটি আলাদা টুল দিয়ে ছবিটি যাচাই করে দেখেছে ডিসমিসল্যাব।

ইজইটএআই এবং ডিপফেক-ও-মিটার– এ দুটি টুলই বলছে ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ। 

আরো কিছু লেখা