ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
চট্টগ্রামের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রনি গ্রেপ্তারের দাবিটি মিথ্যা
This article is more than 2 months old

চট্টগ্রামের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রনি গ্রেপ্তারের দাবিটি মিথ্যা

ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে– এমন দাবিতে সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ছড়াতে দেখা গেছে ৩০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও। তবে যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটি আসলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌরসভার যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তারের সময় ধারণ করা হয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ একজন ব্যক্তিকে হাতকড়া পরিয়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এবং পাশে কয়েকজন ব্যক্তি “আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ” ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছে। ভিডিওর বিবরণে লেখা হয়েছে, “চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী নিষিদ্ধ সংগঠনের কুখ্যাত খুনি নুরুল আজম রনি গ্রেফতার।” কিছু পোস্টে আবার বলা হয়েছে, “চট্টগ্রামের শী’র্ষ স’ন্ত্রা’সী নি’ষিদ্ধ সংগঠনের রনি গ্রেফতার” (বানান অপরিবর্তিত)। অর্থাৎ, ভিডিওতে যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, দাবি করা হচ্ছে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া উপ-কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য নুরুল আজিম রনি। ফেসবুকে (, , , ) ও ইউটিউবে একই দাবিতে আরও একাধিক পোস্ট পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনটি তৈরির সময় পর্যন্ত এমন দাবিযুক্ত একটি ভিডিও ফেসবুকে ১ লাখেরও বেশিবার দেখা হয়েছে এবং শেয়ার করা হয়েছে ৬০০ বার।

ভিডিওটিতে হাতকড়া পরানো ব্যক্তিকে যে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সেখানে “হাসনাত ডেন্টাল সার্জারি” নামে একটি সাইনবোর্ড দেখা যায়। গুগল সার্চে দেখা যায়, এই নামে একটি ক্লিনিক আছে ঢাকার ওয়ারী থানার রানকিন রোডে। গুগল ম্যাপে ক্লিনিকটির একটি সাইনবোর্ডের ছবি পাওয়া যায়, যার সঙ্গে ভিডিওতে থাকা সাইনবোর্ডটির মিল আছে। এরপর ওয়ারী থানার সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চে “রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ” নামে একটি প্রোফাইলে ২৭ এপ্রিল পোস্ট হওয়া একটি ভিডিও খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। এখানে বলা হয়, গ্রেপ্তার হওয়া এই ব্যক্তি তারাব পৌরসভার সাবেক কমিশনার ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন। এই ভিডিও এবং ভুল দাবিতে ছড়ানো ভিডিওতে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির চেহারা ও শার্ট-প্যান্টের হুবহু মিল দেখা যায়। একই দিনের আরেকটি পোস্টেও বলা হয় গ্রেপ্তার হওয়া এই ব্যক্তি আনোয়ার হোসেন। ২৭ এপ্রিল, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকেও আনোয়ার হোসেনের গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে একটি পোস্ট করা হয়, যেখানে আনোয়ার হোসেনের একটি ছবিও যুক্ত করা হয়।

এছাড়াও, ফেসবুকে ২০২০ সালে প্রচারিত আনোয়ার হোসেনের একটি ভিডিও দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়, ২৭ এপ্রিলে তাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে পোস্ট হওয়া ভিডিওগুলোতে (, ) দৃশ্যমান অভিযুক্ত ব্যক্তি একই। অর্থাৎ, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিটি নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার তারাব পৌরসভার সাবেক কমিশনার ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি নয়।

নুরুল আজিম রনি ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া উপ-কমিটির সদস্যপদ পান। সেবছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১০ আগস্ট তিনি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল বিভিন্ন গণমাধ্যমে। 

আরো কিছু লেখা