তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
গণমাধ্যমে প্রচারিত মোবাইল ছিনতাইয়ের ভিডিওটি সাজানো

গণমাধ্যমে প্রচারিত মোবাইল ছিনতাইয়ের ভিডিওটি সাজানো

তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম ডেইলি সানের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে একটি ছিনতাইয়ের ভিডিও পোস্ট করতে দেখা গেছে। ১১ সেকেন্ডের ভিডিওটি পোস্ট করে বলা হয়েছে এটি মোটরসাইকেলে এসে ছুরিকাঘাতে মোবাইল ছিনতাইয়ের দৃশ্য। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে ভিডিওর দৃশ্যটি সাজানো। প্রকৃত ভিডিওতে থাকা ব্যক্তি ডিসমিসল্যাবকে জানান, সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এমন ভিডিও বানানো হয়েছে, এটি বাস্তব কোনো ছিনতাইয়ের ঘটনা নয়।

সংবাদমাধ্যম ডেইলি সানের অফিসিয়াল পেজে গত ৪ মে সন্ধ্যা ৬ টা ৪৭ মিনিটে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। বিবরণে লেখা, “বাইকে এসে ছু রি কা ঘা তে মোবাইল ছি ন তা ই।” হুবহু একই শিরোনাম দিয়ে সেটি পোস্ট করা হয়েছে সংবাদমাধ্যমটির ইউটিউব চ্যানেলেও

ফেসবুকের পোস্টটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেটি এখন পর্যন্ত প্রায় ১৭ হাজারবার দেখা হয়েছে। শেয়ার করা হয়েছে ৮৩ বার। অর্ন্তবর্তী সরকারের সমালোচনা করে পোস্টটি শেয়ার করেছেন এক ব্যবহারকারী। এছাড়া ইউটিউবের ভিডিওটি এখন পর্যন্ত ১০ হাজারবার দেখা হয়েছে। আবার একই দাবিতে অন্য ব্যবহারকারীদেরও ভিডিওটি শেয়ার করতে দেখা গেছে।

ছিনতাইয়ের ঘটনার সত্যতা জানতে শুরুতে ভিডিওটির কিফ্রেম ধরে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। উক্ত সার্চে ফেসবুকে হুবহু একই ভিডিওর সন্ধান পাওয়া যায়। “রাইড উইথ উইজার্ড” (Ride With WizArd) নামের একটি ফেসবুক পেজে ভিডিওটি শেয়ার করা হয় গত ২৮ এপ্রিল রাত ১১টা ৪৮ মিনিটে। 

অর্থাৎ ডেইলি সান পোস্ট করার ৬ দিন আগে “রাইড উইথ উইজার্ড” নামের পেজ থেকে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়। বিবরণে বলা হয়, “চাকরির বাজার খারাপ,পার্ট-টাইম  ছিনতাই করতে হইবো।” এখন পর্যন্ত ভিডিওটি ১৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে, মন্তব্য করেছেন দুইশোরও বেশি ব্যবহারকারী। তবে পোস্টের মন্তব্য যাচাইয়ে দেখা যায় ঘটনার সত্যতা নিয়ে অনেক ব্যবহারকারী সেখানে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এক ব্যবহারকারী লেখেন, “এটা তাদের অভিনয়।” পাল্টা মন্তব্যে পেজ থেকে লেখা হয়, “অভিনয়ের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছে যে এভাবেই ছিনতাই হয়। আমাদের সর্বদাই চোখ-কান খোলা রেখে চলতে হবে।”

আসলেও ভিডিওটি সত্যিকারের ছিনতাইয়ের দৃশ্য নাকি অভিনয়– তা নিশ্চিত হতে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে পেজটির পরিচালক রাকিবুল হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, “ভিডিওটি বানানো হয়েছে বিনোদনের উদ্দেশ্যে ও সচেতনতা বাড়ানোর জন্য। মিরপুর ১২ থেকে ঘরোয়ার মোড় এলাকার রাস্তায় ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে।” ভিডিওতে থাকা অন্যান্য ব্যক্তিদের নাম ও পরিচয়ও জানান তিনি। এছাড়া, মূল ভিডিওটিও তিনি ডিসমিসল্যাবের সঙ্গে শেয়ার করেন, যেখানে কোনো নেপথ্য সঙ্গীত ছিল না এবং সেখানে ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিদের হাসাহাসি করতে শোনা যায়। 

অর্থাৎ, ডেইলি সানের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিওর দাবিটি বিভ্রান্তিমূলক। বিনোদন বা সচেতনতার জন্য বানানো অন্য একটি পেজের ভিডিও সত্যিকারের ছিনতাইয়ের ঘটনা দাবিতে প্রচার করেছে সংবাদমাধ্যমটি।

আরো কিছু লেখা