আহমেদ ইয়াসীর আবরার
ফিলিস্তিনের পক্ষে আফগানিস্তানের যুদ্ধে নামার দাবিতে ছড়িয়েছে ইয়েমেনের পুরোনো ভিডিও
আহমেদ ইয়াসীর আবরার
ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়ে আফগানিস্তান যুদ্ধে নেমেছে– এমন দাবিতে একটি ভিডিও পোস্ট হতে দেখা যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। তবে যাচাইয়ে দেখা যায় ভিডিওটির সঙ্গে আফগানিস্তানের যুদ্ধে নেমে পড়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি ইয়েমেনের ঈদ-আল-নাশুর নামের উৎসব উদযাপনের ভিডিও।
“আফগানিস্তান সরাসরি পক্ষ নিল ফিলিস্তিনের মাঠে যুদ্ধের জন্য নেমে গেল আলহামদুলিল্লাহ্”- এমন ক্যাপশনে ভিডিওটি পোস্ট হতে দেখা যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। ৬ এপ্রিল থেকে এটি বিভিন্ন পেজ ও প্রোফাইল থেকে পোস্ট হচ্ছে (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬)। ভিডিওটিতে দেখা যায় অস্ত্র হাতে অনেক মানুষ একটি খোলা ময়দানে সমবেত হয়েছেন। নেপথ্যে আরবি গান বাজতে শোনা যায়।

ভিডিওটি যাচাই করতে বিভিন্ন কী-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ২০২৪ সালের ২৭ জুনে ইউটিউবে আপলোড হওয়া একটি ভিডিওর সন্ধান পায় ডিসমিসল্যাব। তাহা মাতার নামের একটি চ্যানেল থেকে আপলোড হওয়া এই ভিডিওটির শিরোনাম হলো, “সবচেয়ে শক্তিশালী ইয়েমেনি গোত্র। ঘাওলাত আজিব গোত্রের ঈদ আল-নাশুর। ওদের বলো, হে দুর্ভেদ্য পাহাড়।” ভিডিওটির বিবরণে লেখা হয়েছে, “ঈদ আল-নাশুর হল একটি ইয়েমেনি গোত্রীয় রীতি যা কয়েক শতাব্দী ধরে চলে আসছে, যেখানে ঘাওলাত আজিব গোত্রী (আল-ঘুলা) এবং আমরান অঞ্চলের প্রতিবেশী গোত্ররা একে অপরকে শুভেচ্ছা জানাতে, করমর্দন করতে এবং গোত্রীয় বন্ধন জোরদার করতে একত্রিত হয়।” এই ভিডিওটির সঙ্গে ফেসবুকে ভুল দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর হুবহু মিল পাওয়া যায়।

এছাড়া ভিডিওতে যে গান শোনা যায়, ইউটিউবে সেটির সুর সার্চ করে মূল গানটিও পাওয়া যায়। আরবীতে গানটির নাম, “হে দুর্ভেদ্য পাহাড়, তাদের বলে দাও।” এটি লিখেছেন ইয়েমেনি কবি আব্বাস আল দায়লামি এবং সুর করেছেন ইয়েমেনি সুরকার আহমেদ বিন সালেহ বিন গোদেল।
এই বিষয়ে আরও জানতে আরব আমিরাত ভিত্তিক সাংবাদিক ও ফ্যাক্টচেকার মাহমুদ ঘাজায়েলের সাথে যোগাযোগ করে ডিসমিসল্যাব। তিনি নিশ্চিত করেন যে ভিডিওটি ইয়েমেনেরই এবং এটি ঈদ আল-নাশুর নামের একটি উৎসব। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই দিনে গোত্রগুলো ক্ষমা, পুনর্মিলন, প্রতিকূলতার সময়ে ঐক্য ধরে রাখাকে উৎসাহিত করতে একত্রিত হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও বিরোধ নিয়ে আলোচনা করে। এটি হজ্বযাত্রীদের স্বাগত এবং ঈদুল আযহাকে বিদায় জানানোরও একটি উপলক্ষ। ইয়েমেনের বেশিরভাগ উৎসবের মতো এটিও উদযাপন করা হয় গুলিবর্ষণ করে। তবে এখানে কোনো রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক বা দলীয় ব্যানার বা বার্তা থাকে না।” অর্থাৎ, এই ভিডিওটি আফগানিস্তানের নয় এবং এর সঙ্গে ফিলিস্তিনের পক্ষে যুদ্ধে নামারও কোনো সম্পর্ক নেই।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ মার্চ, যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে ইসরায়েলের নতুন করে শুরু হওয়া হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয় আফগানিস্তান ইসলামি আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়ে বলা হয়, “আরও একবার, ইসলামিক আমিরাত সংশ্লিষ্ট এবং প্রভাবশালী দেশগুলোকে আহ্বান করছে ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের পক্ষে শক্তিশালী সংহতি জানাতে এবং দখলদারিত্বের ইতি টানতে বাস্তববাদী ও চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে।” তবে ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়ে আফগানিস্তান যুদ্ধে নামবে এমন কোন ঘোষণা খুঁজে পায়নি ডিসমিসল্যাব।
ফিলিস্তিনে চলমান হামলার প্রতিবাদে ৭ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী সাধারণ হরতাল আহ্বান করা হলে বাংলাদেশেও তা পালিত হয়েছে।