ফাতেমা তাবাসুম
ড. ইউনূস ও বিকাশকে জড়িয়ে ফেসবুকে ভুয়া বিজ্ঞাপন
ফাতেমা তাবাসুম
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৪০০০ টাকা নাগরিক ভাতা দিচ্ছেন– এমন দাবিতে সম্প্রতি বিজ্ঞাপন চলতে দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। মেটা অ্যাড লাইব্রেরিতে গত ১৩ জানুয়ারি এমন ১২০০ বিজ্ঞাপন দেখতে পাওয়া যায়। এগুলো প্রচারিত হয়েছে মোট ৭টি ফেসবুক পেজ থেকে। বিজ্ঞাপনগুলোতে মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের লোগো যুক্ত করা হয়েছে। তবে বিকাশের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে এ ধরনের ভাতা প্রদান সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
“৪০০০ টাকা নাগরিক ভাতা পেতে ক্লিক করুন”– লিখে মেটা অ্যাড লাইব্রেরিতে সার্চ করলে দেখা যায় গত ১৩ জানুয়ারি থেকে অন্তত ৭টি ফেসবুক পেজে এ পর্যন্ত হাজারেরও বেশি বিজ্ঞাপন চালানো হয়েছে। বিজ্ঞাপনে যুক্ত লিংকে প্রবেশ করলে এটি ব্যবহারকারীকে ‘সুরক্ষিত নয়’ এমন একটি ওয়েবপেজে নিয়ে যায়। ওয়েবপেজটিতে বিকাশের লোগো এমনভাবে ব্যবহার করা হয়েছে যা দেখতে অনেকটা বিকাশের অফিসিয়াল ওয়েবপেজের মত। পেজটির নেভিগেশন বারে ‘ক্যাম্পেইন’, ‘সার্ভিসেস,’ ও বিজনেসসহ কয়েকটি অপশন রয়েছে; যার প্রতিটিতে ক্লিক করলে একই অনিরাপদ ওয়েবপেজে নিয়ে আসে। এই নেভিগেশন বারে ‘বিকাশ অ্যাপ’ নামের একটি অপশনও রয়েছে; যা সরাসরি প্রতিষ্ঠানটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে নিয়ে যায়।
নেভিগেশন বারের ঠিক নিচেই “দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাইকে ৪০০০ টাকা নাগরিক ভাতা দিচ্ছেন ড.ইউনুস” শিরোনামটি দেখা যায়। এর নিচেই বলা আছে “এই ৪০০০ টাকা উপহার আপনি বিকাশে নিতে পারবেন।” লেখাটার ঠিক নিচেই একটি গ্রাফিক অংশে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর নামসহ, তারা ইতিমধ্যেই টাকা পেয়েছেন এমন দাবিগুলো একটির পর একটি দেখানো হয়। এর নিচের বিস্তারিত অংশে লেখা, ১৭ বছরের বেশি বয়সী সকল নাগরিক ৪০০০ টাকা নাগরিক ভাতা পাবেন, এবং একটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে একবারই এই ভাতা গ্রহণ করা যাবে। এছাড়া নাগরিক ভাতা পেতে একটি ফরম পূরণ করার কথাও বলা হয় সেখানে।
‘ফর্ম পূরণ করুন’ অংশে ব্যবহারকারীর কাছে– তার নাম, গ্রাম/এলাকার নাম, জেলার নাম, কত বছর যাবৎ বিকাশ ব্যবহার করা হয়, বর্তমানে বিকাশ অ্যাকাউন্টে কত টাকা রয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন/স্টুডেন্ট আইডি নম্বর, বয়স, জাতীয় পরিচয়পত্র আছে কি না, এবং বিকাশের সার্ভিস ‘ভালো’ লাগে না ‘খারাপ’ লাগে– এসব তথ্য জানতে চাওয়া হয়।
বিকাশ অ্যাকাউন্টে কত টাকা রয়েছে এই প্রশ্নের উত্তরে যেকোনো সংখ্যা লিখলে সাইটটি “বাবু এন্টারপ্রাইজ” নামের বিকাশের একটি পেমেন্ট গেটওয়েতে নিয়ে যায়। এই পেমেন্ট গেটওয়েতে অ্যাকাউন্ট নাম্বার, ওটিপি এবং পিনকোড চাওয়া হয়। এই সকল তথ্য দিলে আগে উল্লেখ করা সমপরিমাণ টাকা কেটে নেয়া হয়।
দেখা যায়, যে ৭টি পেজ থেকে এই লিংক ফেসবুকে বিজ্ঞাপন আকারে প্রচার করা হয়েছে সেই পেজগুলোতে এই সংক্রান্ত কোন পোস্ট নেই। তবে কিছু পেজের রিভিউ অংশে ও পোস্টের নীচে একাধিক ফেসবুক ব্যবহারকারীকে মন্তব্য করেছেন যে তারা এই পেজের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। “বিকাশ অফার” নামক পেজে একজন ব্যবহারকারী রিভিউ লেখেন, “চিটার এরা। থানায় জিডি করছি আমি। মানুষের টাকা মারা বের করব তোর।” একই পেজের আরও একজন ব্যবহারকারী রিভিউ লেখেন, “ধোঁকাবাজ! এই ফাঁদে পা দেবেন না।” এই ৭টি ফেসবুক পেজের মোট ১৪জন অ্যাডমিন রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইন্দোনেশিয়ার ১২জন, বাংলাদেশের ২ জন।
বিকাশ নিয়ে ভুয়া বিজ্ঞাপনের বিষয়টি নতুন কোনো ঘটনা নয়। প্রায়শই বিভিন্ন অফার কিংবা উপহারের নামে ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে মানুষের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয়া হয়। গেল বছরের অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ডিসমিসল্যাব এ ধরনের একাধিক প্রতারণাচক্র চিহ্নিত করে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। প্রতিটি চক্রের প্রতারণার পদ্ধতি ছিল প্রায় একই রকমের। এছাড়াও, মেটা অ্যাড লাইব্রেরিতে এধরনের প্রতারণামূলক সাইটের লিংক শেয়ার নিয়ে ইতিপূর্বেও প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব।