আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
ওয়াশিংটন পোস্টের নামে সেনা কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করার ভুয়া প্রতিবেদন প্রচার

ওয়াশিংটন পোস্টের নামে সেনা কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করার ভুয়া প্রতিবেদন প্রচার

আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হতে দেখা যাচ্ছে। ছবি আকারে ছড়ানো এই প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বর্তমান সেনাপ্রধানসহ ৬৭ জন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়াও, বিভিন্ন পদের আরও তিন হাজার ৮৭২ সেনা কর্মকর্তাকেও চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিশ্চিত করা গেছে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। তবে, দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের তরফ থেকে ডিসমিসল্যাবকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, প্রতিবেদনটি তাদের নয়।

“ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মর্কতা এবং হাজার হাজার সেনা সদস্যকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে”- এমন শিরোনামের একটি প্রতিবেদন ছবি আকারে পোস্ট হতে দেখা যায় একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে। পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, “সংশোধনী শিরোনাম: বাংলাদেশে ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মর্কতা এবং হাজার হাজার সেনা সদস্যকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাইডেন সরকার।” প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সশস্ত্র কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীদের গ্রুপগুলোকে সংগঠিত করার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে যেকোনো মূল্যে পদত্যাগে বাধ্য করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।” এছাড়া বিশ্বাসযোগ্য সূত্রের কথা উল্লেখ করে বলা হয় যে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ না করা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার একটি অস্বস্তিকর অবস্থায় রয়েছে। ৬৭ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং তিন হাজার ৮৭২ সেনা সদস্যকে চাকরিচ্যুত করার কারণ হিসেবে বলা হয়, “বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন এটি সেনাবাহিনীর উপর বেসামরিক কর্তৃত্বকে দৃঢ় করতে এবং অন্তর্বর্তী সময়ের যেকোনো বাধা-বিপত্তি রুখতে করা হয়ে থাকতে পারে।”

ডিসমিসল্যাব এই প্রতিবেদনটি যাচাইয়ের জন্য দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটির বিভিন্ন কিওয়ার্ড ব্যবহার করে খোঁজ করে। কিন্তু দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে এমন কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, ভাইরাল প্রতিবেদনটিতে প্রতিবেদকের নাম দেওয়া হয়েছে জ্যাকি আলেমানি। কিন্তু দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে জ্যাকি আলেমানি নামের কাউকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও, কাছাকাছি নামের একজনকে পাওয়া যায়, যার নাম জ্যাকলিন আলেমানি। জ্যাকলিন আলেমানি হলেন দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের একজন প্রতিবেদক। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে তার বাংলাদেশ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ভুয়া প্রতিবেদনটিতে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর। একই দিনে সংবাদমাধ্যমটিতে জ্যাকলিন আলেমানিরও একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটির শিরোনাম হলো, “দ্বিদলীয় টাস্কফোর্সের নতুন প্রতিবেদনে বিপর্যস্ত গোপন সংস্থার সমালোচনা”। এই প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কিত কোনো তথ্য নেই। এটি নিয়ে আরো নিশ্চিত হতে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে জ্যাকলিন আলেমানির সাথে। জ্যাকলিন আলেমানির মেইলের উত্তর আসে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের পাবলিক রিলেশন লিড জেনা লিফের পক্ষ থেকে। ফিরতি মেইলে তিনি ডিসমিসল্যাবকে ওয়াশিংটন পোস্টের পাবলিক রিলেশনের টুইটার হ্যান্ডেলের একটি পোস্ট পাঠান। পোস্টটিতে প্রচারিত ছবিটি যুক্ত করে বলা হয় যে, প্রচারিত এই ছবিটি ভুয়া।

ভুয়া প্রতিবেদনের ছবিটির সবচেয়ে পুরোনো সূত্রটি হলো নেপাল করেসপনডেন্স নামের এক্স অ্যাকাউন্ট। এই অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি পোস্ট করা হয় ২৩ অক্টোবর ১১টা ৪৩ মিনিটে। পরবর্তীতে ২৪ অক্টোবর তারিখে ড. রাব্বি আলম নামক একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেও ছবিটি পোস্ট করা হয়। নেপাল করেসপনডেন্স সম্পর্কে যাচাই করতে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে নেপালের তথ্যযাচাইকারী প্রতিষ্ঠান নেপাল চেকের সম্পাদক দীপক অধিকারীর সাথে। দীপক ডিসমিসল্যাবকে বলেন, “আমি টুইটারে এই হ্যান্ডেলটিকে ফলো করছি। যদিও এটি নেপালের নাম ব্যবহার করে, তবে দেশটি বা তার স্বার্থে এর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এখান থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো নিয়ে প্রপাগান্ডা ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়ানো হয়।”

আরো কিছু লেখা