আহমেদ ইয়াসীর আবরার
সুইস আদালতে শেখ হাসিনার আইনজীবী নিয়োগের দাবিটি সত্য নয়
আহমেদ ইয়াসীর আবরার
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা লড়তে সুইজারল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসে আইনজীবী নিয়োগ করেছেন- এমন একটি দাবি সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ছড়াতে দেখা গেছে। পোস্টে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলায় আদালতে আইনজীবী মাইক পাপানতোনিওর ব্রিফিং দাবিতে একটি ভিডিও ছড়ানো হয়। তবে যাচাই দেখা যায়, ভিডিওটি একজন মার্কিন সিনেটরের সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়ে রাখা বক্তব্য। এছাড়া, সুইস আদালতে শেখ হাসিনার আইনজীবী নিয়োগের দাবিও সঠিক নয় বলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ডিসমিসল্যাবকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে ফেসবুকে (১, ২, ৩, ৪) একাধিক পোস্টে একটি ভিডিও ও ছবিসহ দাবি করা হয় সুইজারল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে সরাসরি ব্রিফিং করেছেন সুইজারল্যান্ডের আইনজীবী মাইক পাপানতোনিও। এছাড়া শেখ হাসিনার হয়ে এই মামলা লড়বেন মার্ক শেরম্যান নামক একজন আইনজীবী। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়, “রাখে আল্লাহ মারে কে……… একসাথে শুরু হলো ভারতের ট্রাভেল ডকুমেন্ট পাশ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ যা দিয়ে তিনি বিশ্ব ভ্রমন করতে পারবেন। ২। সুইজারল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসে লইয়ার নিয়োগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে মামলাটি লড়বেন সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত লইয়ার Mark Sherman ৩। ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিসে ডা: ইউনুসের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে সরাসরি ব্রিফিং করছেন সুইজারল্যান্ডের আইনজীবী Mike Papantonio”। আরেকটি পোস্টে ভিডিওটি সংযুক্ত করে দাবি করা হয় সুইজারল্যান্ডের আইনজীবী রুডি গিলিয়ানি এই মামলা লড়ছে।
ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায় ভিডিওতে কথা বলা ব্যক্তি মাইক পাপানতোনিও নন, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর শেলডন হোয়াইটহাউজ। তার পুরো বক্তব্য পাওয়া যায় এমএসএনবিসির অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা একটি ভিডিওতে। পুরো ভিডিওতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা সম্পর্কিত কোনো বক্তব্য ছিল না। বরং, মাগা (মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন) ক্যাম্পেইন নিয়ে কথা বলতে শোনা যায় সিনেটর হোয়াইটহাউজকে। মার্কিন গণমাধ্যম এমএসএনবিসির সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান “লাস্ট ওয়ার্ডস উইথ লরেন্স ও’ডনেল”-এ তিনি এই বক্তব্য রাখেন। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি বন্ধ করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ১২ জন সিনেটর। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন সিনেটর শেলডন হোয়াইটহাউজ।
পোস্টে দুইজন নারী আইনজীবীর ছবিও ছিল। রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায় এই দুইজন নারী হলেন রুথ বেডার গিনসবার্গ এবং সোনিয়া সোতোমায়োর। তারা দুইজনই যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ছিলেন। এদের মধ্যে রুথ বেডার গিনসবার্গ, ২০২১ সালেই মৃত্যুবরণ করেছেন। অর্থাৎ, ছবিতেও পোস্টে দাবিকৃত কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
ঘটনাটি নিশ্চিত হতে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল মেইলে (Info@albd.org)। ফিরতি মেইলে তারা জানায় এই দাবিগুলোর সবগুলোই ভিত্তিহীন। এছাড়া, পোস্টে উল্লেখ করা দুইজন আইনজীবীকেও মেইল করা হয়েছে। তারা উত্তর দিলে তা পরবর্তীতে যুক্ত করে দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি শেখ হাসিনা ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে’ বিদেশ সফর করবেন এমন আরেকটি দাবি ছড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে বলা হয় বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২৪ অক্টোবর শেখ হাসিনা সুইজারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তুরস্ক সফরে যাবেন। ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায় দাবিটি ভিত্তিহীন।