তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
শেখ হাসিনা কী ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে’ বিদেশ সফরে যাচ্ছেন?

শেখ হাসিনা কী ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে’ বিদেশ সফরে যাচ্ছেন?

তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে একটি ভুয়া দাবি ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে বলা হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আগামী ২৪ অক্টোবর শেখ হাসিনা সুইজারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তুরস্ক সফরে যাচ্ছেন। কিন্তু ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায় দাবিটি ভুয়া। ভারতীয় গণমাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে খোঁজ করে এ ধরনের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া দাবিটি সঠিক নয় বলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ডিসমিসল্যাবকে নিশ্চিত করা হয়েছে। 

শেখ হাসিনার সরকার প্রধান হিসেবে বিভিন্ন দেশে সফরের ভুয়া দাবি ফেসবুকে ছড়ানো হয় গত ১৩ অক্টোবর থেকে। একাধিক ব্যক্তিগত প্রোফাইল (, , ), পেজ (, , ) এবং গ্রুপ (, , ) থেকে একই বিবরণীতে শেখ হাসিনার ভিন্ন ভিন্ন ছবি যোগ করে ফেসবুকে পোস্ট করতে দেখা যায়। এছাড়া একই দাবিতে ভারতে ইউটিউব ভিডিও ছড়াতে দেখা যায়।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোর বিবরণীতে লেখা, “নিজের অবস্থান জানাতে ও বিশ্ব জনমত গড়তে আগামী ২৪শে অক্টোবর শেখ হাসিনা সুইজারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তুরস্ক সফরে যাচ্ছেন, প্রতিটি দেশে তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবেই যাচ্ছেন।”

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে সূত্র দাবি করে ওই পোস্টে আরও বলা হয় আগামী ৩০ অক্টোবর তিনি ভারতে ফিরবেন এবং দেশটির প্রধামন্ত্রীর সঙ্গে শীঘ্রই দ্বিপাক্ষিক সাক্ষাতে মিলিত হবেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সূত্র ধরে দাবিটি ছড়ানো হলেও সেখানে দেশটির কোন সংবাদমাধ্যমে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে তার কোনো সূত্রের উল্লেখ নেই। ডিসমিসল্যাব দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে অনলাইনে খোঁজ করে এমন কোনো সংবাদ খুঁজে পায়নি।

ভারতীয় গণমাধ্যমে এ সম্পর্কে কোনো খবর পাওয়া না গেলেও বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যমে একই দাবির একটি ভিডিও ইউটিউবে খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার একদিন পর অর্থাৎ ১৪ অক্টোবর ভিডিও প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় ‘বাংলা টিভি’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে। সেখানে সূত্র হিসেবে শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট দেখানো হয়।

তবে ২০১৯ সালের বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই। শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে পুতুলের নামে ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলেছে দুর্বৃত্তরা বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে। এসব ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে নানা রকম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য-সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে বলেও জানানো হয়। তবে পুতুলের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট না থাকলেও আরেক সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটারে) একটি ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সেখানে খোঁজ করে তার মায়ের অর্থাৎ শেখ হাসিনার সফর সম্পর্কিত এমন দাবির কোনো পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ভুয়া দাবিতে বানানো বাংলা টিভির সেই ভিডিও প্রতিবেদনটি পোস্ট আকারে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায় ফেসবুকেও (, , )। 

ছড়িয়ে পড়া দাবিটির সত্যতা সম্পর্কে জানতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল মেইলে (Info@albd.org) যোগাযোগ করে ডিসমিসল্যাব। ফিরতি মেইলে তারা জানায় দাবিটি সঠিক নয়। এমন কোনো সফরে যাচ্ছেন না শেখ হাসিনা।

প্রসঙ্গত ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। এরপর তার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হলে ঠিক কোন স্ট্যাটাসে তিনি ভারতে আছেন তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। গত ১০ অক্টোবর দেশের একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। সেখানে আরও বলা হয় এই ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে তিনি এখন বিশ্বের যেকোনো দেশের ভিসা নিয়ে ভ্রমণ করতে পারবেন। তবে হাসিনাকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেওয়া হয়েছে কি না সেটি সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি ভারত সরকার।

হাসিনার এই ট্রাভেল ডকুমেন্ট পাওয়ার সংবাদ প্রকাশের পরেই তার এই বিদেশ সফরের ভুয়া দাবিতে পোস্ট হতে থাকে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে।

আরো কিছু লেখা