আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

পার্থ প্রতীম দাস

এনগেজমেন্ট এডিটর, ডিসমিসল্যাব

মিনহাজ আমান

রিসার্চ-লিড, ডিসমিসল্যাব
ফেসবুকে সংঘবদ্ধ রাজনৈতিক প্রচারণার বট নেটওয়ার্ক
This article is more than 3 months old

ফেসবুকে সংঘবদ্ধ রাজনৈতিক প্রচারণার বট নেটওয়ার্ক

আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

পার্থ প্রতীম দাস

এনগেজমেন্ট এডিটর, ডিসমিসল্যাব

মিনহাজ আমান

রিসার্চ-লিড, ডিসমিসল্যাব

এবছর ২১ জুন, “কালার প্রিন্টারে ছাপানো প্রতিটি পৃষ্ঠায় থাকে অদৃশ্য কোড?” শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের অনলাইন গণমাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে। সাধারণত এ ধরনের খবর রাজনীতির একনিষ্ঠ পাঠকদের মনোযোগ এড়িয়ে যায়, তবে ডিসমিসল্যাবের এক গবেষকের চোখ আটকায় ফেসবুকে সেই পোস্টের নিচে, একটি মন্তব্যে: 

“এবারের নির্বাচন স্বচ্ছ হবে। আগামী নির্বাচনে জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে। আর এবার ভোট চুরি করতে পারবে না বলেই বিএনপি নির্বাচনে আসতে ভয় পাচ্ছে আর এত কাহিনী করছে।”

চক্ষু রীতিমতো চড়কগাছ হয় সেই পোস্টের নিচে পরবর্তী মন্তব্যগুলো দেখে। নির্বাচনের প্রায় ছয় মাস পরে এসে ব্যবহারকারীরা তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপির সমালোচনা, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফল ও সুষ্ঠুভাবে হওয়ার আশাবাদ, ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন আয়োজনের দাবি সহ নানা রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে একের পর এক মন্তব্য করে যাচ্ছেন। কিন্তু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার এতদিন পরে কেউ এমন মন্তব্য কেন করবেন, তা-ও আবার সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একটি খবরে?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ১৩৬৯টি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের একটি বট নেটওয়ার্কের সন্ধান পায় ডিসমিসল্যাব। নেটওয়ার্কটি মাত্র ছয় মাসে, তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সরকার বিরোধী দলের ফেসবুক পেজের ১৯৭টি পোস্টে সমন্বিতভাবে ২১ হাজারের বেশি মন্তব্য করেছে। তারা বিভিন্ন পোস্টে একই মন্তব্য করেছেন, আবার একই মন্তব্য বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়েছে।

এই গবেষণার জন্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের সেই ফেসবুক পোস্ট থেকে প্রতিটি মন্তব্য সংগ্রহ করা হয়। সেই তালিকা ধরে গুগলে সার্চ দিয়ে একই মন্তব্য রয়েছে এমন আরো ১৯৬টি পোস্ট বের করা হয়। সেই সব পোস্ট থেকে আবার প্রতিটি মন্তব্য স্ক্র্যাপ করে প্রায় ৩৫ হাজার মন্তব্যের একটি ডেটাবেস তৈরি করা হয়। সেই ডেটাবেস থেকে বট অ্যাকাউন্ট এবং তাদের করা ২১ হাজারের বেশি রাজনৈতিক মন্তব্য আলাদা করা হয়। চূড়ান্ত ডেটাবেসে শুধু সেসব মন্তব্য রাখা হয়, যা ১০ বারের বেশি পোস্ট করা হয়েছে। বট অ্যাকাউন্ট এবং তাদের করা মন্তব্যের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। কারণ, এই গবেষণাটি করা হয়েছে মোট ১৯৭টি পোস্টে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে। 

ডিসমিসল্যাবের গবেষণায় দেখা যায়, বট নেটওয়ার্কটি সক্রিয় হয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগ দিয়ে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত তারা ঘুরেফিরে ৪৭৪টি রাজনৈতিক মন্তব্য করেছে। কমেন্টগুলো নির্বাচনের আগে তৈরি করা, কিন্তু তারা নির্বাচনের পরেও একই মন্তব্য পোস্ট করে গেছে। তারা লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে, দেশের প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম এবং তৎকালীন বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পেজগুলোকে।

বট নেটওয়ার্কটি সাধারণত রাজনৈতিক পোস্টেই মন্তব্য করে এবং ফেসবুক পোস্টে নির্দিষ্ট কিছু রাজনৈতিক কিওয়ার্ড বা শব্দ পেলে তারা সেই পোস্টে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু কখনো কখনো তাদের ভুল হয়। যেমনটি হয়েছে ”ইসি” (নির্বাচন কমিশন) শব্দের ক্ষেত্রে। বিডিনিউজের ক্ষেত্রে কালার প্রিন্টার সংক্রান্ত খবরটির সারাংশে ”মেশিন আইডেন্টিফিকেশন কোড (এমআইসি)” এর উল্লেখ ছিল, সেখানে ”ইসি” শব্দাংশ দেখেই তারা শ’খানেক মন্তব্য করেছেন। বটের বোকামির এমন আরো বেশকিছু নজির গবেষণায় উঠে এসেছে।

চূড়ান্ত ডেটাবেস থেকে বট নেটওয়ার্কটির ব্যবহার করা সম্ভাব্য রাজনৈতিক কিওয়ার্ড ও মন্তব্যের তালিকা সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি অ্যাকাউন্টকে আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে তাদের বেশিরভাগেরই: প্রোফাইল লক বা প্রাইভেট করা, সেগুলো সক্রিয় হয়েছে নির্বাচনের আগে, প্রোফাইল ছবি নেই অথবা চুরি করা, তাদের বন্ধুসংখ্যা খুব কম বা নেই, এবং বেশিরভাগ অ্যাকাউন্ট দুটি নির্দিষ্ট পেজকে ফলো করে। আর এই বৈশিষ্ট্যগুলো রাজনৈতিক বটের প্রচলিত সংজ্ঞার সঙ্গে মেলে। 

এই প্রোফাইলগুলোর কার্যক্রম মেটার কোঅর্ডিনেটেড ইনঅথেনটিক বিহেভিয়ার (সিআইবি) বা সমন্বিত বিরূপ প্রচারণার সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। মেটা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সংজ্ঞায় বলেছে, “আমরা সিআইবিকে দেখি এমন একটি সমন্বিত কার্যক্রম হিসেবে, যেখানে একটি কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের জন্য জনপরিসরের বিতর্ককে প্রভাবিত করা হয়। এসব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রীয় অংশে থাকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় করে এবং ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের মাধ্যমে অন্যদের বিভ্রান্ত করে যে তারা আসলেই কারা এবং কী করছে।”

দৃশ্যত, এই বট নেটওয়ার্কের কার্যক্রম পুরোপুরি না হলেও, অন্তত আংশিকভাবে কম্পিউটেশনাল বা স্বয়ংক্রিয়। তারা একটি তালিকা থেকে নির্দিষ্ট কিওয়ার্ড ধরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পোস্ট বাছাই করে এবং আরেকটি তালিকা থেকে বেছে নিয়ে মন্তব্য পোস্ট করে। তাদের প্রক্রিয়ায় কোথায় কী মন্তব্য পোস্ট করা হচ্ছে, সেখানে মানুষের নজরদারি নেই বললেই চলে।

ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের ফিলিপ মেরিল কলেজ অব জার্নালিজম এবং ইনফরমেশন স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক ড. নাঈমুল হাসান বলেছেন, “ডিসমিসল্যাবের এই অনুসন্ধানের ফলাফল ইঙ্গিত দিচ্ছে যে এখানে কম্পিউটেশনাল টুলের ব্যবহার হয়েছে।” তবে, এই বিশ্লেষণটির সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ। একই ধরনের কমেন্ট সমন্বিতভাবে বারবার করার বিষয়টি কম্পিউটেশনাল পদ্ধতির ইঙ্গিত দিলেও এই অনুসন্ধানে সেটির পক্ষে প্রত্যক্ষ কোনো প্রমাণ হাজির করা যায়নি।

বটেরা দেখতে কেমন

ডিসমিসল্যাব এই গবেষণায় মোট ১৩৬৯টি অ্যাকাউন্ট খুঁজে পেয়েছে। এই প্রোফাইলগুলোর বেশিরভাগই (৭৭%) নারীদের নামে। সেই নামেও রয়েছে অদ্ভুত মিল। যেমন, নারী প্রোফাইলের ২৪% এর নাম “আক্তার” (Akter, Aktar, আক্তার) দিয়ে শেষ হয়েছে। যেমন: দিয়া আক্তার, রিয়া আক্তার, লিজা আক্তার, লিমা আক্তার, লিসা আক্তার, মিসা আক্তার ইত্যাদি। 

পুরুষদের প্রোফাইলগুলোতে একটি বড় অংশের (১৬%) শেষ নাম হিসেবে ব্যবহার হয়েছে “আহমেদ।” যেমন: নাঈম আহমেদ, নাদিম আহমেদ, কামিল আহমেদ, মাহিন আহমেদ, সামির আহমেদ, ইত্যাদি। যে অভিন্ন বৈশিষ্ট্য নারী-পুরুষ দুই ধরনের অ্যাকাউন্টে দেখা গেছে সেটি হলো, ৯০ শতাংশ নামই দুই শব্দের। কোথাও কোথাও বেশি কষ্ট না করে একটি নামকেই ভেঙ্গে দুই শব্দ করা হয়েছে। যেমন: রি পা, মি না, লি জা, যু থি, লাম ইয়া, মু না, নে হা, জোস না ইত্যাদি।  

ফেসবুকের একটি প্রোফাইল আসল নাকি নকল, তা যাচাইয়ের জন্য সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্যের দিকে নজর দিতে বলেছে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান স্নোপস এবং সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ক্লাউডফ্লেয়ার ও ম্যাকাফি (,,)। বৈশিষ্ট্যগুলো হলো: বট প্রোফাইলগুলোতে অতিরিক্ত গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়, নিজের সম্পর্কে (অ্যাবাউট সেকশনে) পর্যাপ্ত তথ্য দেওয়া হয় না, প্রোফাইলে পোস্ট সংখ্যা হয় খুব কম নয়তো খুব বেশি থাকে, প্রোফাইল ছবি ইন্টারনেটের অন্য কোনো জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং বন্ধুসংখ্যা সচরাচর কম হয়।

এর সঙ্গে মিল রেখে, ডিসমিসল্যাব ১৩৬৯টি প্রোফাইলের প্রাইভেসি সেটিংস, বন্ধু সংখ্যা, পোস্ট করার প্রবণতা, পরিচিতি তথ্য এবং প্রোফাইল ছবি পর্যালোচনা করেছে। এতে দেখা গেছে, ২৪৭টি প্রোফাইল লকড অবস্থায় ছিল। বাকি ১১২২টি অ্যাকাউন্টের মধ্যে ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে প্রোফাইল ছবি ইন্টারনেটের অন্য কোনো জায়গা থেকে সংগ্রহ করা। অর্থাৎ, ছবিগুলো অন্যের। কোথাও কোথাও একই ছবি বিভিন্ন প্রোফাইলে ব্যবহার করা হয়েছে।

যেমন, ইন্টারনেটে অন্য কোথাও পাওয়া যায় নি— এমন একটি প্রোফাইল ছবি ব্যবহার হতে দেখা গেছে ফাহাদ ইসলাম (Fahad Islam), রাজিব আহমেদ (Rajib Ahmed), মামুন আহমেদ (Mamun Ahmed), আহমেদ তাহসিন (Ahmed Tahsin), রিয়াদ খান (Riyad Khan), তানজিম আহমেদ (Tanjim Ahmed), জাহাঙ্গীর আলম (Jahangir Alom) ও আরিয়ান ইসলাম (Ariyan Islam) সহ মোট ৮টি অ্যাকাউন্টে। সবগুলো প্রোফাইলেই ছবিটি আপলোড করা হয়েছে একই দিনে, ২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর। এমন আরও ১৯টি প্রোফাইল ছবির ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে সেগুলো ইন্টারনেটে পাওয়া যায় না, কিন্তু একাধিক প্রোফাইলে ব্যবহার হচ্ছে। মোট ১১১টি অ্যাকাউন্ট এই ২০টি প্রোফাইল ছবি ব্যবহার করেছে, যেগুলো ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে অন্য কোথাও পাওয়া যায়নি।

নারীদের নামে খোলা অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রেও একই প্রোফাইল ছবি ভিন্ন ভিন্ন অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করা হয়েছে। ভুয়া ফেসবুক প্রোফাইল শনাক্তের কৌশল বর্ণনা করতে গিয়ে ম্যাকাফি বলছে, “বট এবং প্রতারণামূলক অ্যাকাউন্টগুলো ‘বন্ধুদের’ প্রলুব্ধ করার জন্য সৌন্দর্যকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এবং প্রায়শই তাদের প্রোফাইল বা পেজগুলোতে সুন্দর-আকর্ষণীয় নারী বা সুদর্শন পুরুষের ছবি ব্যবহার করে।” এই নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা গেছে। বেশ কিছু অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশের আশনা হাবিব ভাবনা, তমা মির্জা, নাঈলা নাইম, এবং দক্ষিণ ভারতের মালাভিকা মেননের মতো অভিনেত্রী ও মডেলদের ছবি প্রোফাইলে ব্যবহার করা হয়েছে।   

লকড না থাকা ১১২৪টি প্রোফাইলের মধ্যে ৮৫ শতাংশের অ্যাবাউট সেকশনে কোনো পরিচিতি তথ্য নেই। ৯৩ শতাংশের ক্ষেত্রে প্রোফাইল ছবি, কাভার ফটো ছাড়া অন্য কোনো পাবলিক পোস্ট নেই। প্রায় অর্ধেক (৪৯ শতাংশ) প্রোফাইলে বন্ধু সংখ্যা দেখা যায় না এবং ৪৫ শতাংশ প্রোফাইলে বন্ধু-সংখ্যা ২০০-র নিচে। কেবল মাত্র সাতটি অ্যাকাউন্টকে নিয়মিত পোস্ট করতে দেখা যায় এবং সেগুলোও প্রায়ই একই ধরনের পোস্ট শেয়ার করে।

একটি বট অ্যাকাউন্ট প্রথম কবে আধেয় পোস্ট করেছে সেই সময়কে সক্রিয়তার নির্দেশক হিসেবে ধরে নিয়ে তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রোফাইলগুলো সক্রিয় হয়েছে মূলত গত বছরের জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে, নির্বাচনের আগ দিয়ে। তবে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে, অর্ধেক অ্যাকাউন্টই সক্রিয় হয়ে ওঠে। শুধু নভেম্বরের ২৩ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে প্রথমবারের মত পোস্ট করে ৩৪৪টি অ্যাকাউন্ট। এর আগে ২ থেকে ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২৪০টি প্রোফাইল সক্রিয় হয়।

আন্তসংযুক্ত বট নেটওয়ার্ক ও সমন্বিত আচরণ 

এই গবেষণায় রাজনৈতিক মন্তব্য পাওয়া গিয়েছে ২১,২২১টি। কিন্তু এগুলোর মধ্যে স্বতন্ত্র বা ইউনিক মন্তব্য ছিল মাত্র ৪৭৪টি। অর্থাৎ, বটগুলো বিভিন্ন পোস্টে ঘুরে ফিরে এই ৪৭৪টি মন্তব্যই করেছে। বটগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ স্পষ্টভাবে দেখা যায় (নিচের ভিজুয়ালাইজেশনে দেখুন)। যেমন, রিয়া আক্তার নামের একটি প্রোফাইল থেকে গত ছয় মাসে বিভিন্ন পোস্টে ১৩৮টি মন্তব্য করা হয়েছে। গত ১৮ মে, নির্বাচনের অনেক পর, তার করা একটি মন্তব্য ছিল এরকম: “বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ। এখানে আইনের মাধ্যমে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করা হয়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে, আশা করছি।” বিভিন্ন সময় মোট ৯৬টি পোস্টে একই মন্তব্য করা হয়েছে দিয়া আক্তার, রাইসা, রাফিয়া আক্তার, নাহিদ ও নিপাসহ মোট ১০৯টি বট অ্যাকাউন্ট থেকে।

আবার “ভয় তারাই করে যাদের জনগণের প্রতি কোনো আস্থা নেই। তাই বিএনপি নির্বাচনে যেতে ভয় পায়” — এই মন্তব্যটি পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি, ২৪৪ বার। মোট ২১৭টি বট প্রোফাইল থেকে বিভিন্ন পোস্টে মন্তব্যটি করা হয়। চ্যানেল আইয়ের ফেসবুক পেজের একটি খেলার খবরে, আরিয়ান মুন্না, নুসরাত ফারিয়া ও রতনা আক্তারসহ মোট আট জন ব্যক্তিকে একই মন্তব্য করতে দেখা যায়। 

এমন ডজন খানেক নজির রয়েছে, যেখানে একাধিক বট অ্যাকাউন্ট হুবহু একই ভুল বানানের শব্দসহ মন্তব্য পোস্ট করেছে।  ২০২২ সালে চীনের একটি সিআইবি নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রেও এমন ভাষাগত ভুলের কথা উল্লেখ করেছিল মেটা। 

প্রোফাইলগুলোর মধ্যে এক ধরনের সংযোগ থাকার আরেকটি চিত্র পাওয়া যায় দুইটি নির্দিষ্ট পেজে লাইক দেওয়ার প্রবণতা থেকে। প্রোফাইল লকড নেই, এমন ১১২৪টি অ্যাকাউন্টের ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সেগুলো বাংলার খবর ও আওয়ামী লীগ মিডিয়া সেল (৫ আগস্ট, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগ মিডিয়া সেল পেজটি আর পাওয়া যাচ্ছে না।); এই দুইটি পেজের কোনো একটিকে বা দুইটিকেই ফলো করে। 

ফেসবুক পোস্টে কমেন্ট করার সময় বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৮৮ শতাংশ ক্ষেত্রে কমেন্টগুলো করা হয়েছে দুই ঘন্টার মধ্যে। অর্থাৎ, একেকটি পোস্টে প্রথম বট-মন্তব্য থেকে শেষ বট-মন্তব্যের মধ্যে সময়ের পার্থক্য দুই ঘন্টার কম। যেমন, প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত একটি খবরের লিংকের নিচে থাকা ১৫১টি বট কমেন্ট করা হয়েছে সকাল ১১টা ৪৫ থেকে দুপুর ১টা ৪০ পর্যন্ত, ১ ঘন্টা ৪০ মিনিটের মধ্যে।

সমন্বিত বিরূপ প্রচারণার জন্য এর আগে মেটা বাংলাদেশের বিভিন্ন পেজ ও প্রোফাইলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তারা মুছে দিয়েছিল ৯টি ফেসবুক পেজ ও ৬টি প্রোফাইল। এবং ২০২৪ সালে মুছে দিয়েছিল ৯৮টি পেজ ও ৫০টি প্রোফাইল। দুই ক্ষেত্রেই এসব পেজ ও প্রোফাইল থেকে সরকার-পন্থী ভাষ্য শেয়ার করা হতো বলে উল্লেখ করে মেটা।

বটেদের ভাষ্য ও লক্ষ্যবস্তু

বট নেটওয়ার্কটি ৪২ ফেসবুক পেজকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে, যা মূলত বিভিন্ন গণমাধ্যম ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের। এর মধ্যে ৬৮ শতাংশ পেজ প্রথম সারির ও পরিচিত গণমাধ্যমের এবং এককভাবে ৩১ শতাংশ পেজ বিএনপির বা বিএনপি সংশ্লিষ্ট। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণসংহতি আন্দোলনের পেজকেও লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়।

আধেয় পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বট কমেন্টগুলোর ৮৬ শতাংশেই বিএনপি ও দলটির নেতা-নেত্রীদের সমালোচনা বা তাদের প্রতি আক্রমণ করা হয়েছে। যেমন, “আগুন-সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপি। এদের শাস্তির দাবী জানাচ্ছি” বা “আত্মসাৎ, অর্থপাচার করে বাংলাদেশকে লুটপাট করার হাওয়া ভবন করার চক্রান্ত করছে বিএনপি” বা “আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে নিয়ে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তার মূল ক্রীড়নক হিসেবে বিএনপি কাজ করছে।” বাকি ১৪ শতাংশ কমেন্টের বিষয়বস্তু ছিল সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রশংসা এবং নির্বাচন শান্তিপূর্ণ বা সুষ্ঠু করার আহ্বান।

সংবাদমাধ্যমগুলোর পেজের যেসব পোস্টে কমেন্ট করা হয়েছে, সেগুলোর আধেয়র মধ্যে ৩৬ শতাংশ ছিল বিএনপি সংশ্লিষ্ট। অন্যান্য পোস্টগুলোর বিষয়বস্তু ছিল উপজেলা নির্বাচন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন। বিএনপি, জাতীয়তাবাদী দল, নির্বাচন কমিশন, ইসি, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা জাতীয় কিওয়ার্ড যেখানে ছিল, সেসব খবর বা পোস্টেই নেটওয়ার্কটি সমন্বিতভাবে মন্তব্য করেছে। 

বটের বোকামি

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় এবং আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মত সরকার গঠন করে। কিন্তু দেখা যায়, এর পরে ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, মে বা জুন মাসে পোস্ট করা বট-মন্তব্যে “আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন” বা “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে” জাতীয় শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে। অর্থাৎ, মন্তব্যগুলো নির্বাচনের আগে তৈরি করা হলেও তা নির্বাচনের পরেও নির্বিচারে পোস্ট করা হয়েছে। 

যেমন: “আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং একই সাথে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করে তুলতে হবে যাতে অন্য দেশ ও মানুষের কাছে এই নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। আর সে লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছে নির্বাচন কমিশন” — এই মন্তব্যটি করা হয়েছে ৪৯টি পোস্টে, ১২৩ বার। সবগুলো পোস্টই ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে ৭ জানুয়ারির পর। এরকম অন্তত ১৫টি মন্তব্য পাওয়া যায় যেখানে মন্তব্যের প্রেক্ষাপটটি নির্বাচনের আগের, কিন্তু পোস্ট করা হয়েছে নির্বাচনের পরে। অর্থাৎ, মানুষের নজরদারি ছাড়াই মন্তব্যগুলো পোস্ট করা হয়, সেখানে প্রেক্ষাপট যাচাই করা হয় না।

বটের বোকামির আরেকটি নজির হলো, অপ্রাসঙ্গিক সংবাদ পোস্টে রাজনৈতিক মন্তব্য। এমন অন্তত ৬১টি নজির পাওয়া গেছে (মোট পোস্টের প্রায় এক তৃতীয়াংশ) যেখানে প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, খেলাধুলা, অপরাধ, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী এবং এমনকি ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত খবরে অপ্রাসঙ্গিকভাবে বিরোধীদের সমালোচনা ও তৎকালীন সরকারের প্রশংসাসূচক মন্তব্য করা হয়েছে। যেমন, বগুড়ায় ব্যাংকের সিন্দুক ভেঙে টাকা লুট, ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসির মৃত্যু, পাকিস্তানের একটি ক্রিকেট ম্যাচের ভেন্যু বদলাতে আইসিসিকে অনুরোধ বা এক অভিনেত্রীর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর। 

আপাতদৃষ্টিতে এসব পোস্টের নিচে এমন রাজনৈতিক মন্তব্যের যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু এই পোস্টগুলোর সঙ্গে থাকা বিবরণ বা টেক্সট বিশ্লেষণ করলে একটি সাধারণ চিত্র পাওয়া যায়। এসব পোস্টের প্রতিটির বিবরণেই কোনো না কোনোভাবে “ইসি” শব্দটি আছে। যেমন: আইসিইউ, আইসিসি, রইসি, আইএফআইসি, ওআইসি, আইসিটি, ডায়ালাইসিস বা ক্রাইসিস। প্রতিটি শব্দেই আছে “ইসি”। বিডিনিউজের যে কালার প্রিন্টার সংশ্লিষ্ট পোস্ট থেকে এই গবেষণা শুরু হয়েছিল, সেখানেও ”এমআইসি” (মেশিন আইডেন্টিফিকেশন কোড) শব্দটি ছিল। 

ইসি হলো ইলেকশন কমিশনের সংক্ষিপ্ত রূপ। কিন্তু বট নেটওয়ার্কটি তাদের লক্ষ্যবস্তু পেজে যেখানেই ইসি শব্দাংশ পেয়েছে, সেটি প্রাসঙ্গিক হোক বা না হোক, সেখানেই সমন্বিতভাবে রাজনৈতিক মন্তব্য করেছে। এটি ইঙ্গিত করে, নেটওয়ার্কটি কোন পোস্টে মন্তব্য করবে সেটি বাছাইয়ের জন্য কিওয়ার্ড নির্ভর একটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি ব্যবহার করে।

২০২২ সালে মেটা যে রুশ সিআইবি নেটওয়ার্ক শনাক্ত করেছিল সেখানে অনেক অপ্রাসঙ্গিক পোস্টের নিচে বট-মন্তব্যের বিবরণ পাওয়া যায়। সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠানটি তাদের ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকের অ্যাডভার্সারিয়াল থ্রেট রিপোর্টেও একই ধরনের একটি ইজরায়েলী নেটওয়ার্কের কথা উল্লেখ করে। 

কম্পিউটেশনাল প্রোপাগান্ডা ও গণতন্ত্র

ডিসমিসল্যাবের উন্মোচন করা বট নেটওয়ার্কটি কম্পিউটেশনাল অপপ্রচারের একটি উদাহরণ বলে মনে করেন ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের সহকারী অধ্যাপক ড. নাঈমুল হাসান। গবেষণাটির ফলাফল স্বতন্ত্রভাবে পর্যালোচনা করে তিনি বলেন, “আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে, মানুষ এবং কম্পিউটেশনাল টুলের সাহায্যে সংঘবদ্ধভাবে মূলত এই কাজগুলো করা হচ্ছে।” 

এ ধরনের প্রচারণার পুরো বিষয়টিই যে প্রযুক্তির সাহায্যে করা হয়, এমন নাও হতে পারে। স্যামুয়েল সি. উলি ও ফিলিপ এন. হাওয়ার্ড, তাদের কম্পিউটেশনাল প্রোপাগান্ডা: পলিটিকাল পার্টিজ, পলিটিশিয়ানস অ্যান্ড পলেটিকাল ম্যানিপুলেশন অন সোশ্যাল মিডিয়া (২০১৮) বইয়ে যেমনটি বলেছেন, “কম্পিউটেশনাল প্রপাগান্ডার সবচেয়ে কার্যকরী ব্যবহারের জন্য, অ্যালগরিদম নির্ভর বিতরণ ও হিউম্যান কিউরেশন– উভয়ই যুক্ত থাকে। সফটওয়্যার বট ও মানুষ একসঙ্গে কাজ করে।” তাদের তাইওয়ান সংক্রান্ত গবেষণায়ও দেখা যায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় চীনের প্রোপাগান্ডা পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় নয়; বরং, এগুলো সত্যিকারের মানুষেরা কঠোরভাবে সমন্বয় করে। 

২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে শুরু করে ব্রাজিল, রাশিয়া, ইউক্রেন, পোল্যান্ড, ফিলিপাইনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের কম্পিউটেশনাল প্রোপাগান্ডা ও রাজনৈতিক বট ব্যবহারের চিত্র দেখা গেছে। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউটের ২০২০ সালের গ্লোবাল ইনভেন্টরি অব অর্গানাইজড সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানিপুলেশন শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেবছর তারা ৮১টি দেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় কম্পিউটেশনাল প্রোপাগান্ডা ও রাজনৈতিক অপতথ্য ছড়ানোর ঘটনা নথিভুক্ত করেছিল।

গবেষণায় দেখাচ্ছে বট নেটওয়ার্কের বিস্তার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং নির্ভুল তথ্য ব্যবস্থার উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। জার্নাল অব ডেমোক্রেসি (২০১৬)-তে উলি এবং হাওয়ার্ডের প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা অনুযায়ী, এই ধরনের নেটওয়ার্কগুলো অন্যান্য দৃষ্টিভঙ্গিকে দমন করার পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রচার করার মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যকার আলাপ-আলোচনাকে বিকৃত করতে পারে। এই কারসাজি ঐক্যমতের মিথ্যা ধারণা তৈরি করতে পারে, জনমতের মেরুকরণ করতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা নষ্ট করতে পারে।

নাঈমুল হাসান বলেন, “ভবিষ্যতে প্রযুক্তিগুলো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার করে আরও উন্নত হবে। যেমন, একই প্রোফাইল ছবি বিভিন্ন ফেক অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়বে না, এআই দিয়ে নিমিষেই অনেকগুলো প্রোফাইল ছবি তৈরি হয়ে যাবে যাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচারমূলক আক্রমণগুলো চিহ্নিত করা কঠিন হয়। তাই এখন থেকেই এই বিষয়গুলো নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন।”


গবেষণা পদ্ধতি

ডিসমিসল্যাবের এই গবেষণার শুরুটা হয়েছিল বাংলাদেশের অনলাইন সংবাদমাধ্যম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের একটি ফেসবুক পোস্টের নিচে পাওয়া অপ্রাসঙ্গিক রাজনৈতিক কমেন্ট দেখে, যেমনটি শুরুতেই বলা হয়েছে। এ ধরনের কমেন্ট আর কোন কোন পোস্টে করা হয়েছে— তা জানার জন্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের সেই পোস্টের নিচে পাওয়া ১০৯টি কমেন্ট আলাদা করে সার্চ করা হয়েছে গুগলে। সেখান থেকে এমন আরও ১৯৬টি ফেসবুক পোস্ট পাওয়া যায় যেখানে একই ধরনের কমেন্টগুলো করা হয়েছে।

বিডিনিউজের পোস্টটিসহ সব মিলিয়ে ১৯৭টি ফেসবুক পোস্টের নিচে থাকা কমেন্টগুলো স্ক্র্যাপ করা হয়েছে অ্যাপিফাই নামের অনলাইন একটি টুলের মাধ্যমে। সেখানে পাওয়া যায় মোট ৩৫৯৩০টি কমেন্ট। বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে শুধু যেন বট কমেন্টগুলোই থাকে, তা নিশ্চিত করার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে ১০টির বেশি আছে— এমন কমেন্টগুলো। এভাবে তৈরি হয়েছে এই গবেষণার আওতায় থাকা ২১,২২১টি কমেন্টের ডেটাসেট।

এই ডেটাসেট থেকে পাওয়া গেছে ৪৭৪টি ইউনিক কমেন্ট, যেগুলো ১০ বারের বেশি পোস্ট করা হয়েছে। এই কমেন্টগুলো করা হয়েছে ৪২টি ফেসবুক পেজে। এই পেজগুলোকে দুইটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়েছে: সংবাদমাধ্যম এবং বিরোধী রাজনৈতিক দল।

কমেন্টগুলো যে ১৩৬৯টি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে করা হয়েছে সেগুলোর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের জন্য দেখা হয়েছে বন্ধু সংখ্যা, অ্যাবাউট সেকশনের তথ্য, প্রথম পোস্টটি কোন সময়ে করা হয়েছিল, প্রোফাইল লক করা আছে কিনা, এবং প্রোফাইল পিকচার ইন্টারনেটে অন্য কোথাও পাওয়া যায় কিনা।

সীমাবদ্ধতা: এই গবেষণাটি করা হয়েছে শুধু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের ফেসবুক পোস্টটির নিচে পাওয়া কমেন্টগুলো রিভার্স সার্চের মাধ্যমে। ফলে শুধু এমন ফেসবুক পোস্টগুলোই শনাক্ত করা গেছে, যেগুলোর সঙ্গে এই কমেন্টগুলোর সংযোগ ছিল। এর বাইরেও হয়তো এমন আরও কমেন্ট ও সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট আছে— যেগুলো এই গবেষণায় অন্তর্ভূক্ত করা যায়নি। অ্যাপিফাই অ্যাপ ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডেটা সংগ্রহের ক্ষেত্রেও কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, বিশেষত স্ক্র্যাপিংয়ের পর কনটেন্ট মুছে দেওয়া বা পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে।

আরো কিছু লেখা