তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
সংসদ ভবনে গণকবরের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি
This article is more than 1 month old

সংসদ ভবনে গণকবরের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি

তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সংসদ ভবন এলাকায় গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে দাবি করে সামাজিক মাধ্যমে বেশকিছু ভিডিও এবং ছবি ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। তবে ডিসমিসল্যাবের পক্ষ থেকে সংসদ ভবন ও গণভবন এলাকা পরিদর্শন করে এ দাবির কোনো সত্যতা মেলেনি। বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গণকবর থেকে লাশ উদ্ধারের কোনো সত্যতা পাননি। এছাড়া গণকবর থেকে লাশ উদ্ধারের নামে বেশকিছু ছবিও ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা গেছে ছবিগুলো ভিন্ন ঘটনার।

গতকাল সামাজিক মাধ্যমে সামিরা ইসলাম আফরোজ নামের একটি আইডি থেকে দুটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। একটি ভিডিওর ক্যাপশন অনুসারে, “সংসদ ভবনে গণকবর, লাশ এর গন্ধে ঢুকা যাচ্ছে না”। অপর ভিডিওতে দাবি করা হয়, “যেসব ছাত্রছাত্রীদের গণকবর দেওয়া হয়েছে, তাদের বইখাতা পাওয়া গেছে সংসদ ভবনে।” তবে যাচাইয়ে কোনো ভিডিওতেই কোনো লাশ বা গণকবর দেখা যায়নি।

কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আইডি থেকে ভিডিও দুটো সরিয়ে ফেলা হয়। আইডিটি থেকে পরবর্তীতে লাইভে এসে ভিডিওকারী জানান, তিনি বিজয় মিছিলে অংশ নিতে সংসদ ভবন এলাকায় যান। সংসদ ভবনের পেছনের গেট দিয়ে ঢোকার সময় শুনতে পান সবাই বলছে ভেতরে গণকবর ও শিক্ষার্থীদের বইখাতা পাওয়া গেছে। তিনি আরও জানান, সন্ধ্যার পর অনেকে মাটি খুড়ছিল। তবে তিনি কোনো লাশ দেখতে পাননি। ভিডিওতে তিনি আরও বলেন, “বাসায় আসার পর বুঝতে পারলাম আসলে নিউজটি গুজব। তারপর আমি পোস্টটা সাথে সাথে ডিলিট করে দেই।” 

তবে লাইভের আগেই সামিরা ইসলামের ভিডিওগুলো বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও আইডি (, ,, ) থেকেও ছড়াতে দেখা যায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলমের নামে পরিচালিত ফেক আইডি থেকেও একটি ভিডিও ছড়ানো হয়। 

ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে ডিসমিসল্যাবের এক তথ্য যাচাইকারী সদস্য সংসদ ভবন এলাকা পরিদর্শন করেন। তবে তিনি সেখানে কোনো গণকবরের সন্ধান পাননি। বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও স্বতন্ত্রভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গণকবরের বিষয়টিকে গুজব হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। 

কালবেলার প্রতিবেদক আকরাম হোসাইন তার ফেসবুক পোস্টে জানান, “সংসদ ভবনে গণকববের সন্ধানে যা পাওয়া গেল। যমুনা টিভি, কালবেলাসহ আমরা কয়েকজন সাংবাদিক কিছুক্ষণ আগে সংসদ ভবনের পেছনে গণকবরের সন্ধানে গিয়ে কিছু বই খাতা পেয়েছি। এবং গন্ধ পেয়েছি। বই খাতা- বই খাতা গুলোতে ২/৩ জনের নাম পেয়েছি। তারমধ্যে ১ জনের মোবাইল নাম্বার পেয়েছি যার নাম নাইমুর রহমান। নাম্বারে কল দিয়ে জানতে পারি তিনি সংসদ ভবনের কর্মচারী তার ছেলের নাম নাইমুর রহমান। তাদের বাসায় ভাংচুর করা হয়েছে এবং ছেলের বউ খাতা সবকিছু নিয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে বই খাতা গুলো কেউ ফেলে রেখে গেছে। গন্ধ- আমরা একটা গন্ধ পেয়েছি। তবে আমরা কোনো কবরের সন্ধান পাই নাই। আর যে গন্ধ টা পাওয়া যাচ্ছে সেটা নির্দিষ্ট কোনো জায়গা থেকেও আসছে না। ধারণা করা হচ্ছে কোনো মৃত প্রাণীর গন্ধ হতে পারে। সুতরাং সংসদ ভবনে গণকববের সন্ধান বিষয়টা গুজব।”

আরেক সাংবাদিক মাহাবুর আলম সোহাগও তার ফেসবুক পোস্টে একই তথ্য জানান। 

গণকবর থেকে উদ্ধার হওয়া লাশ দাবি করা ছবিগুলো ভিন্ন ঘটনার

সংসদ থেকে উদ্ধার হওয়া লাশের নামে বেশ কয়েকটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে (,, ,) ভাইরাল হতে দেখা গেছে। ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায় ছবিগুলো ভিন্ন একটি ঘটনার। সামাজিক মাধ্যমসহ টেলিগ্রাম চ্যানেলে ছড়িয়ে পড়া বেশকিছু ভিডিওর (, , ) সঙ্গে ছবিগুলোর সাদৃশ্য পাওয়া যায়। দাবি অনুসারে, মৃতদেহটি ঝিনাইদহ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা ৯নং পোড়াহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম হিরণের। বিক্ষুদ্ধ জনতা সোমবার তার মৃতদেহ নগরীর পায়রা চত্বরে নিয়ে আসে। ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলোতেও একটি লাশকে পায়রা চত্বরে ঝুলানোর দৃশ্য দেখা যায়।

ঢাকা পোস্টদৈনিক ইনকিলাবসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ঘটনাটি নিশ্চিত করা হয়। অর্থাৎ, সংসদ ভবনে গণকবরের সন্ধান পাওয়ার বিষয়টি গুজব এবং গণকবরের লাশের ছবিগুলোও ভুয়া । 

আরো কিছু লেখা