তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকের ছবি ও তথ্য নিয়ে নজরদারির দাবি সত্য নয়
This article is more than 3 months old

হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকের ছবি ও তথ্য নিয়ে নজরদারির দাবি সত্য নয়

তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক ও ম্যাসেজ শেয়ারিং মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ নতুন নিয়ম চালু করছে দাবি করে সম্প্রতি বিভিন্ন ধরনের পোস্ট ছড়াতে দেখা গেছে। এসব পোস্টে দাবি করা হচ্ছে আগামীকাল থেকে বাংলাদেশে নতুন নিয়ম কার্যকর করবে হোয়াটসঅ্যাপ ও মেটাসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম। দাবি অনুসারে, হোয়াটস্যাপের সকল ‘ফোনকল’ রেকর্ড করা হবে। এছাড়া ‘হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটারসহ সব সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নজরদারি করা হবে’ বলেও দাবি করা হয়। ‘ইউসিসি আইনের অধীনে’ ফেসবুক ও মেটা ব্যবহারকারীদের ছবি ও অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করবে দাবি করেও বিভিন্ন পোস্ট ছড়াতে দেখা যায়। তবে এসব দাবির কোনোটিই সত্য নয়। বিগত বছরগুলোতেও একই দাবিতে এধরনের পোস্ট ও টেক্সট ছড়াতে দেখা গেছে এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফ্যাক্টচেকিং সংস্থাও ইতোমধ্যে এধরনের দাবিগুলো খণ্ডন করেছে। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টিকটক হোয়াটসঅ্যাপ টেক্সটসহ বিভিন্ন পোর্টালের মাধ্যমেও ছড়িয়েছে এসব দাবি। বাংলা ও ইংরেজি দু’ভাষাতেই এসব বার্তা ছড়াতে দেখা গেছে। 

ব্যবহারকারীদের টেক্সট বা কল শুনতে পারে না হোয়াটসঅ্যাপ

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক পোস্টে (, , ,,, ) আগামীকাল থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোনকল রেকর্ড করবে বলে একটি দাবি ছড়াতে দেখা যায়। ম্যাসেজ শেয়ারিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপেও একই ধরনের বার্তা ছড়ায়। ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকেও (,, ) একই বার্তা ছড়িয়েছে। এছাড়া কয়েকটি ওয়েব পোর্টালেও (,) একই সংবাদ মিলে। পোস্টের লেখা অনুসারে, “আজকে থেকে বাংলাদেশে হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফোন কলের নতুন যোগাযোগের নিয়ম কার্যকর করা হবে”। পোস্টগুলোতে আরও বলা হয়, “বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক বা ধর্মীয় বিষয়ে বার্তা লেখা বা পাঠানো অপরাধ…এটি করলে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার হতে পারে। পুলিশ বিজ্ঞপ্তি জারি করবে… এর পর সাইবার ক্রাইম… এর পর অ্যাকশন হবে এটা খুবই গুরুতর।” একই ধরনের কিছু পোস্টে (, ,) এও লেখা হয়, “আপাতত বাংলাদেশের সাথে যুক্ত গ্রুপ গুলোতে কোন প্রকার ভয়েজ করা থেকে বিরত থাকবেন। আবেগের বসে যদি কারো মুখ থেকে সরকার বিরোধী কোন কথা আসে তাহলে আমাদের ব্যবসায় এর প্রভাব পড়তে পারে।”

ইংরেজিতেও একই বার্তা ফেসবুক (, , ) ও হোয়াটস্যাপ টেক্সটিং এর মাধ্যমে ছড়াতে দেখা গেছে। যাচাইয়ে দেখা যায়, এধরনের পোস্ট অতীতেও ছড়িয়েছে। ২০২৩ সালে সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে এধরনের দাবি (, , ) ছড়াতে দেখা যায়। এমনকি ২০২০ সালেও একই পোস্ট পাওয়া যায়। ইতোপূর্বে ফ্যাক্টচেকের মাধ্যমেও এধরনের দাবি খণ্ডন করা হয়। 

যাচাইয়ে দেখা যায়, হোয়াটসঅ্যাপের ম্যাসেজ বা ফোনকলে বার্তা আদান-প্রদানের বিষয়টি এন্ড টু এন্ড এনক্রিপ্টেড নিরাপত্তার দ্বারা সুরক্ষিত। প্ল্যাটফর্মটির ব্যাখ্যা অনুসারে, “হোয়াটসঅ্যাপের এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড কোনো ম্যাসেজের বিষয়বস্তু দেখার বা কল শোনার কোনো ক্ষমতা নেই। এর কারণ হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো এবং প্রাপ্ত বার্তাগুলোর এনক্রিপশন এবং ডিক্রিপশন সম্পূর্ণরূপে ডিভাইসে ঘটে। অর্থাৎ, কোনো বার্তা আপনার ডিভাইস থেকে প্রাপকের কাছে যাওয়ার সময় একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক লক দিয়ে সুরক্ষিত থাকে এবং শুধুমাত্র প্রাপকের কাছেই এই লকের চাবি থাকে৷”

বাংলাদেশ ছাড়াও এর আগে ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ঘানায় এ ধরনের পোস্ট ছড়ায়। সর্বশেষ মালয়েশিয়াতেও একই দাবি ছড়াতে থাকলে ফ্যাক্টচেকের মাধ্যমে তা খণ্ডন করা হয়।

ফেসবুকে বিবৃতি দিয়ে সুরক্ষা পাওয়ার দাবিটি মিথ্যা

ফেসবুকে সম্প্রতি একটি পোস্ট কপি করে সবাইকে শেয়ার ও পোস্ট করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। এসব পোস্টের দাবি অনুসারে, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের নতুন, পুরোনো এমনকি মুছে ফেলা ছবি ও ব্যক্তিগত তথ্যও ব্যবহার করতে করবে। ফেসবুক (, , , , ) ছাড়াও ইন্সটাগ্রাম চ্যানেলেও এসব বার্তা ছড়াতে দেখা গেছে। বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই তা ছড়িয়েছে। 

পোস্টে লেখা হয়, “নতুন ফেসবুক/মেটা নিয়ম শুরু হবে যেখানে তারা আপনার ছবি ব্যবহার করতে পারবে। ভুলে যা‌বেন না, আজ শেষ দিন! তাই একটা কাজ ক‌রে রাখুন। এটি আপনার বিরুদ্ধে মামলায় ব্যবহার করা যেতে পারে; আপনি যা কিছু পোস্ট করেছেন – এমনকি মেসেজ যা মুছে ফেলা হয়েছে। এতে কোন খরচ নেই, শুধু কপি করে পোস্ট করুন,পরে আফসোস করার চেয়ে ভালো হ‌বে।” 

পোস্ট অনুসরণ করে অনেকেই তাদের ব্যক্তিগত প্রফাইল থেকে পোস্ট (, ,) শেয়ার করে লিখেন, “ইউসিসি আইনের অধীনে ১-২০৭, ১-৩০৮… আমি আমার অধিকার সংরক্ষণ আরোপ করছি…আমি ফেসবুক/মেটা বা অন্য কোন ফেসবুক/মেটা সম্পর্কিত ব্যক্তিকে আমার ছবি, তথ্য, বার্তা বা বার্তা ব্যবহার করার অনুমতি দিচ্ছি না, অতীতে এবং ভবিষ্যতে কোন সময়েই।”

ইন্সটাগ্রাম একটি চ্যানেলে বাংলা ও ইংরেজি দু’ভাষাতেই পোস্টটি শেয়ার করে লেখা হয়, “আপনার টাইমলাইনে পোস্ট করুন। এটি সরকার ও মেটা গাইডলাইন অনুযায়ী পরিষ্কার বিবৃতি”।

যাচাইয়ে দেখা যায়, ব্যবহারকারীদের ডেটা ও তথ্য নিয়ে মেটার  টার্মস অব সার্ভিস বলছে, “আমরা কারও ব্যক্তিগত তথ্য এবং এমন সব তথ্য যা দিয়ে সরাসরি কাউকে চিহ্নিত করা যায়, (যেমন কারও নাম, ইমেইল বা অন্যান্য যোগাযোগের তথ্য) কোনো বিজ্ঞাপনদাতার সঙ্গে শেয়ার করি না, যদি না আমাদের নির্দিষ্ট অনুমতি দেওয়া হয়ে থাকে’।

ফ্যাক্টচেক সংস্থা স্নোপসের মতে, এধরনের পোস্টের দাবি মিথ্যা। ফেসবুক কিংবা মেটার অধীনস্ত কোনো প্ল্যাটফর্মেই ব্যবহারকারীরা তাদের প্রোফাইলে বিবৃতি দানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কোনো নীতিমালা পরিবর্তন করতে পারবে না কিংবা কোনো আইনি সুরক্ষাও পাবে না।স্নোপসের মতে, এধরনের পোস্টগুলোকে বলা হয় কপিপাস্তা অর্থাৎ, কপি-পেস্টের মাধ্যমে তৈরিকৃত পোস্ট। এ ধরনের পোস্টে সাধারণত ব্যবহারকারীদের জন্য সতর্কবার্তা বা পরামর্শ থাকে এবং অন্যদের সঙ্গে এটি শেয়ার করার অনুরোধ করা হয়। অনেক সময় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর থেকে আর্থিক কোনো সুবিধাপ্রাপ্তির কথাও বলা হয়। তবে এই পোস্টগুলো প্রতারণামূলক হয়ে থাকে। এ ধরনের পোস্ট যারা শেয়ার করে থাকে, অন্যদের সামনে তাদের ‘বিব্রত’ করতে বা ‘বোকা বানাতে’-ই মূলত কপিপাস্তা পোস্টগুলো তৈরি করা হয়ে থাকে।

আরো কিছু লেখা