নীতি চাকমা
আড়ং-এ নারী ক্রেতাকে প্রবেশে বাধা দেওয়ার ভিডিওটি পুরোনো
নীতি চাকমা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যায়, নিকাব পরিহিত একজন নারীকে একটি শোরুমে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ভিডিওর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া ক্যাপশনের দাবি অনুসারে, হিজাব ও নিকাব পরায় একজন নারী ক্রেতাকে আড়ং-এর গুলশান ব্রাঞ্চে প্রবেশে বাধা দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে যাচাইয়ে দেখা যায়, এটি করোনা মহামারির কারণে আরোপিত লকডাউনের সময়ের একটি ভিডিও। এছাড়া, নিকাবের কারণে নয়, বরং কর্তৃপক্ষ সেসময় দাবি করে যে, করোনার বিধিনিষেধ না মানায় ওই নারীকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল না।
গত ৩১ মার্চ একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি পোস্ট করে বলা হয়, “সমকামীদের আশ্রয়ে লালিত আড়ং গুলশান ব্রাঞ্চে হিজাব পড়ায় শোরুমে প্রবেশ করতে দেয়নি এক বোরকা নিকাব পরিহিত মহিলাকে। সাথে তার স্বামী ও বাচ্চা ছিল। এসব বদমাশদেরকে দেশ ছাড়া করা ছাড়া বিকল্প আর কোন পথ নাই। (আর্কাইভ ভিডিও)।”
একই ক্যাপশন দিয়ে ভিডিওটি অনেকে পোস্ট করেছেন (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯)।
আরেক ফেসবুক অ্যাকাউন্টে উক্ত ক্যাপশনের সঙ্গে যোগ করে পোস্ট করা হয়, “আসলেই সত্যি কিনা প্রশাসনের উচিৎ দেখা”। একটি ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করে একই ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হচ্ছে, “ইসলাম বিদ্বেষী কান্ড করলো এক নারী ক্রেতার সাথে”। “৯০% মুসলমানদের দেশে যদি ইসলামী বিধি বিধান নিয়ে এত সমস্যা থাকে তাহলে এখন প্রশ্ন করার সময় এসেছে পার্সেন্টিসটা কি শুধু আদমশুমারির পারসেন্টিস নাকি আসলেই মুসলমান”- এমনটি যোগ করা হয় অন্য আরেকটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে হওয়া পোস্টে। অনুরূপ ক্যাপশন জুড়ে একই ভিডিও আরো বেশ কয়েকটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়।
তবে যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটি অন্তত সাড়ে তিন বছরের পুরোনো। সেসময় দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক লকডাউন চালু ছাড়াও ঘরের বাইরে বেরোলে মাস্ক পরিধানকে বাধ্যতামূলক করে নির্দেশনা জারি করে সরকার। এছাড়া হিজাব কিংবা নিকাব পরিধানের জন্য নয়, বরং ওই নারী করোনাকালীন বিধি মেনে মাস্ক না পরায় তাকে শোরুমে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি বলে সেসময় কর্তৃপক্ষ দাবি করে।
এতে ভিডিও ধারণকারীসহ কালো রঙের নিকাব পরিহিত একজন নারী ও তাঁর শিশু সন্তান এবং আড়ংয়ের একজন প্রতিনিধিকে (বিক্রয়কর্মী নাকি ব্যবস্থাপক তা নিশ্চিত নয়) দেখা যায়। ভিডিও ধারণকারীকে আড়ংয়ের ওই প্রতিনিধির উদ্দেশ্যে বলতে শোনা যায়, “আমি বলতে চাচ্ছি যে, আপনি যেটা পরে রইছেন, এটা মাস্ক। আর এই নেকাব মাস্ক না কেন? আমি এটার ব্যাখ্যা চাচ্ছি আপনাদের কাছে।”
আড়ং প্রতিনিধির পরা মাস্ককে দেখিয়ে তিনি আরও বলেন, “আপনার এটা মাস্ক হয় কীভাবে? আপনার এটার কি কোনো মেডিক্যাল অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন আছে কি না?”
ভিডিও ধারণ করা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তিনি বলেন, “ভিডিও আপনার অবশ্যই করতে দিতে হবে। কারণ আপনি আমাকে ঢুকতে দেন নাই রেজিস্ট্রেশন করার পরেও। তাই না?” তিনি প্রশ্ন করেন, “নেকাব কেন মাস্ক না, আর আপনারটা কেন মাস্ক? আমাকে এই ব্যাখ্যাটা দেন, প্লিজ।”
ভিডিওধারণকারী আরও যোগ করেন, “আমি এখন গুলশান আড়ংয়ে (লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড আড়ংয়ের গুলশান শাখার শোরুমে) আছি। এখানে একটা জিনিস চেঞ্জ করব। আমার ওয়াইফকে আমি মাস্কে (মাস্ক পরিহিত) নিয়ে আসি নাই। বাচ্চারটা আছে। এখন তার নেকাবটাকে মাস্ক বলতে চাচ্ছে না। বাট তারা যেটা পরে আছে সেটা কীভাবে মাস্ক হয়? আমি এই জিনিসটা সবার কাছে প্রশ্ন করতেছি।”
ভিডিওটিতে আড়ংয়ের কর্তৃপক্ষের কোনো বক্তব্য শোনা যায়নি।
এই ভিডিওর সবচেয়ে পুরোনো পোস্ট পাওয়া যায় ২০২০ সালে। সে বছরের ৭ আগস্ট শাবীব তাশফী নামক এক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। ক্যাপশনে বলা হয়, “এদেরকে থামানোর মতো কেউই কি নেই? কাপড়ের মাস্ক মুখে লাগিয়ে সেলসম্যানরা হরদম ডিউটি করছে। অথচ মুখে নিক্বাব লাগানো লাগানো থাকার কারণে বোরকাবৃত মহিলাদেরকে আড়ং ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না! কিছুদিন আগে এক ভাই পোস্ট দিয়ে জানিয়েছিলেন যে, তার স্ত্রীকে আড়ংয়ের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয় নি। আর আজ এই ভাইয়ের ভিডিওটা সামনে এলো। কর্তৃপক্ষের মূল আপত্তি কি মাস্ক না পড়ায়? নাকি নিক্বাব আর হিজাবেই আপত্তি?”
প্রায় দেড় হাজারবার শেয়ারকৃত এই ভিডিওতে কমেন্ট পড়েছে ২৭৯টি। মন্তব্যের ঘরে কেউ কেউ দাবি করেন, সার্জিক্যাল মাস্কের চেয়ে নিকাব বেশি নিরাপদ। একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী কমেন্টে বলেন, “নিক্বাব সার্জিকাল মাক্সের চেয়েও নিরাপদ। একটু মাথা খাটিয়ে চিন্তা করুন।”
উল্লেখ্য যে, সামাজিক মাধ্যমে বেশ কিছুদিন ধরেই ব্র্যাক ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান আড়ং-কে ঘিরে বিতর্ক চলছে। সম্প্রতি আড়ং পাঞ্জাবির ডিজাইনের মাধ্যমে সমকামিতার প্রচারণা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠে। এর আগে পাঠ্যবইয়ের পৃষ্ঠা ছেঁড়ার ঘটনায় ‘অশিক্ষকসুলভ আচরণ’-এর দায়ে আসিফ মাহতাবের খণ্ডকালীন চাকরির চুক্তি নবায়ন করা হবে না বলে এক বিবৃতিতে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেসময়ও রূপান্তরকামীদের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে ব্র্যাক ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।