নীতি চাকমা
মজার ছলে যেভাবে ছড়িয়েছে কোকাকোলা নিয়ে ভুয়া তথ্য
নীতি চাকমা
সম্প্রতি ফেসবুকে একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ছবি পোষ্ট করে বলা হচ্ছে, বয়কটের ফলে কোমল পানীয় ব্র্যান্ড কোকাকোলা লোকসানের মুখে পড়ে ফিলিস্তিনকে সমর্থন করতে বাধ্য হচ্ছে। ছবিটি রেফ্রিজারেটরে রাখা কিছু কোমল পানীয় বোতলের, যেগুলোর মধ্যে একটি বাদে স্পষ্টত সবকটিই কোকাকোলার বোতল। কোকাকোলার নাম দেখা যায় না এমন একমাত্র বোতলটিতে লেখা রয়েছে “উই সাপোর্ট প্যালেস্টাইন”। কিন্তু যাচাইয়ে দেখা গেছে ফিলিস্তিনকে সমর্থন করা বোতলটি কোকাকোলার নয়, মোজো নামে ভিন্ন একটি পানীয়র।
বিভিন্ন ক্যাপশন দিয়ে ছবিটি একাধিক ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬), ফেসবুক পেজ (১, ২, ৩, ৪, ৫) এবং গ্রুপে (১, ২, ৩, ৪) শেয়ার করা হচ্ছে। একটি পোষ্টে প্রায় ৪০০ রিয়্যাকশন এবং ২৯টি শেয়ার দেখা গেছে।
ছবিটির সূত্র খুঁজতে গেলে দেখা যায়, “দেশ বিদেশের বিজ্ঞাপন” নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ছবিটি গত ৯ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) পোস্ট করা হয়েছিল। ছবিটির বিবরণে লেখা হয়েছিল, “আন্ডারকাভার এজেন্ট”। পোস্ট করার পরপরই ফেসবুকে সাড়া ফেলে ছবিটি। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত পোস্টটিতে ৪৩ হাজারের কাছাকাছি রিয়্যাকশন দেখা যায়। পোস্টটিতে “পার্টি বাদাল লিয়া সা…লা”, “ছাগলের খালে নেকড়ে”, “শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো অবস্থা”, “মুখে মধু অন্তরে বিষ” – এমন অনেক মন্তব্য করেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা।
তবে এর দুদিন পরে, ১১ ফেব্রুয়ারি একই ফেসবুক পেজ থেকে আরেকটি পোস্ট করা হয়। সেখানে বলা হয় “উই সাপোর্ট প্যালেস্টাইন” লেখা বোতলটি কোকাকোলার নয়, বরং আরেকটি কোমল পানীয় ব্র্যান্ড মোজো’র। এবং এতে জানিয়ে দেওয়া হয়, “এটি (ছবি সম্বলিত প্রথম পোস্টটি) একটি ফানি পোস্ট।” ১১ ফেব্রুয়ারির ওই পোস্টে বলা হয়, “পরশুদিন এক দোকানে চা খেতে গেছি। গিয়ে দেখি কোকের ফ্রিজে সব কোক, শুধু একটি বোতল মোজোর। মোজোর নাম দেখা যাচ্ছেনা, দেখা যাচ্ছে উই সাপোর্ট ফিলিস্তিন অংশটুকু। কোক আর মোজো দুটিরই সেম কালার। তো আমি সেটার ছবি তুলে পেইজে পোস্ট করে লিখলাম, আন্ডারকাভার এজেন্ট। …”। এছাড়া, বিভিন্ন পোষ্টে পাওয়া মোজোর বোতলের ছবি থেকেও তথ্যটি নিশ্চিত করা যায়।
“দেশ বিদেশের বিজ্ঞাপন” নামের পেজটি তৈরি করা হয়েছিল ২০১১ সালের ১৭ নভেম্বর। পেজটির অ্যাবাউট সেকশনে বলা হয়েছে, ‘বিজ্ঞাপনে আগ্রহী মানুষকে দেশ এবং দেশের বাইরের কিছু সুন্দর এবং বিখ্যাত বিজ্ঞাপন এর সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দেয়ায় দেশ বিদেশের বিজ্ঞাপনের মূল উদ্দেশ্য।’
এই পেজ থেকে পোস্টটি মজার ছলে দেওয়া হলেও ফেসবুকে অনেকেই সেটি প্রচার করেছেন মোজোর বোতলকে কোকাকোলার বোতল ধরে নিয়ে। এবং তারা সত্যিই মনে করেছেন যে, কোকাে-কোলা তাদের বোতলে “উই সাপোর্ট প্যালেস্টাইন” লিখেছে। যেমন, এক পোস্টে বলা হচ্ছে, “কোঁকাকোলা কোম্পানিরই হলো ইসরায়েলের। তাদের লভ্যাংশের একটা অংশ ইসরায়েলীদের কাছে জমা হয়। সেই টাকা দিয়েই ফিলিস্তিন দখল করেছে এবং মুসলিম নিধনে সরাসরি কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী। আর তারাই লিখে রেখেছে ফিলিস্তিন সাপোর্ট কথা। এরা ইসলাম বিদ্ধেষীদের আবার মুনাফিকিও!!!!!!“
আবার কেউ কেউ বলছেন, বয়কট ক্যাম্পেইনের ফলে কোকাকোলা লোকসানের মুখে পড়ে ফিলিস্তিনকে সমর্থন করার প্রচারণা শুরু করতে বাধ্য হয়েছে। ভারতের পণ্যও একইভাবে বর্জন করা উচিত। এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে। পোস্টদাতা #ভারত_খেদাও – এই হ্যাশট্যাগও সংযুক্ত করেন।
প্রসঙ্গত, কোকাকোলা বয়কট ক্যাম্পেইনের মাঝে কোমল পানীয় ব্র্যান্ড মোজো ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় তাদের বোতলের মোড়কে “উই সাপোর্ট প্যালেস্টাইন” নামে একটি প্রচারণা চালু করে, যেটির অংশ হিসেবে বিক্রয়কৃত প্রতিটি মোজোর বোতল থেকে ১ টাকা যাবে ফিলিস্তিনিদের সহায়তায়। গণমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এই প্রচারণার পর মোজো’র বিক্রি ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়।
কোকাকোলা সম্পর্কে নানাবিধ ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিকবার এমন ভুল তথ্য ছড়ানোর চিত্র দেখা যায় এবং সেগুলো নিয়ে সেসময় ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যেমন, ফিলিস্তিনের সমর্থনে রোনালদো কোকাকোলার বোতল সরিয়ে রাখছেন এবং বয়কটের মুখে কোকাকোলার মোড়ক পরিবর্তন।