আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের দ্বন্দ্ব ঘিরে ছড়াচ্ছে যেসব ভুয়া তথ্য
This article is more than 1 year old

ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের দ্বন্দ্ব ঘিরে ছড়াচ্ছে যেসব ভুয়া তথ্য

আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

যেকোনো বড় ধরনের দুর্ঘটনা বা যুদ্ধ, সহিংসতার সময় সামাজিক মাধ্যমে ছড়াতে দেখা যায় ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য। সম্প্রতি ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যকার সহিংসতার ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে একই চিত্র। এই দ্বন্দ্ব ঘিরে ছড়াচ্ছে ভুয়া তথ্য ও ভিডিও। 

আফগানিস্তানের তালেবান সরকার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ইরান, জর্ডান ও ইরাকের কাছে অনুমতি চেয়েছে এমন কিছু পোস্ট (, , , , ) সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক ও এক্সে (পূর্ববর্তী টুইটার) প্রচার হতে দেখা গিয়েছে। তবে এমন কোনো খবরের সত্যতা পাওয়া যায়নি। আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক্স (পূর্ববর্তী টুইটার) অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করা বিবৃতিতে তালেবান সরকার জানায়, তারা মনোযোগ সহকারে ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। তারা ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে মুসলিম বিশ্ব ও সংস্থাগুলোকে এই সমস্যা সমাধানের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করতে সেনা প্রেরণের অনুমতি চাওয়ার মতো কোনো বক্তব্য তালেবানদের বিবৃতিতে পাওয়া যায়নি। 

অন্য একটি ভুয়া ছবির সূত্রে দেখা যায়, হামাস বন্দী ইসরায়েলিদের আমাজন ডট কমে বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছে– এমন কিছু পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে (, , )। কিন্তু আমাজন মিশরের সাইটে এমন কোনো বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়নি। ‘স্ক্রিনশট’-টি ৮ অক্টোবরে ফেসবুক এবং এক্সে (পূর্ববর্তী টুইটার) শেয়ার হয় (, , )। তুর্কিপিডিয়া নামক পেইজ এই ছবিটি তথ্য আকারে শেয়ার করে। পরবর্তীতে অনেকেই এই ছবিটিকে সত্য ধরে নিয়ে বিভ্রান্তিকর পোস্ট দেয় (, , )। 

আরেকটি ভিডিও প্রচার হতে দেখা গিয়েছে যেখানে দাবি করা হয়েছে, হামাসের সৈন্যরা ইসরায়েলের একটি ভবনে প্যারাসুট ব্যবহার করে অবতরণ করছে। কিন্তু ফ্যাক্টচেকিং সংগঠন বুমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে এটি মূলত মিশরের মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে প্যারাট্রুপারদের প্রশিক্ষণের একটি ভিডিও। 

সামাজিক মাধ্যম এক্সে (পূর্ববর্তী টুইটার) একটি ভিডিও শেয়ার হয় যেখানে একটি শিশুর গলা কাটা হচ্ছে এবং এই ভিডিওর সাথে #IsraelUnderAttack #IslamIsTheProblem #HamasTerrorists এই হ্যাশট্যাগগুলো ব্যবহার করা হয়। একই পোস্টে অনেকেই এটিকে পুরোনো ভিডিও হিসেবে শনাক্ত করে। পরবর্তীতে এই পোস্ট ফেসবুক ও এক্সে ছড়িয়ে পড়ে। বুমের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই ভিডিওটি ২০১৬ সালে সিরিয়ার আলেপ্পোর একটি ঘটনা।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়: হামাস ইসরায়েলের হেলিকপ্টারকে গুলি করে ধ্বংস করছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমও এই ভিডিও শেয়ার করে এবং পরবর্তীতে তারা ভিডিওটি সরিয়ে নেয়। নিউজচেকারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়: এই ভিডিওটি মূলত একটি ভিডিওগেমের ফুটেজ।

ইসরায়েলের পাল্টা অপারেশন আয়রন সোর্ডস-এর আওতায় গাজা টাওয়ার ধ্বংস, ফাইটার জেট পরিবহন, ইরানের সংসদে “ডেথ টু আমেরিকা” স্লোগানের কিছু ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এই ভিডিওগুলো পুরোনো বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বুম। 

এই দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশেও বিভিন্ন ভুয়া তথ্য ছড়িয়েছে। “ফিলিস্তিনের শান্তি রক্ষার দাবি জানানো আমাদের এজেন্ডায় নেই”- এমন একটি বক্তব্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে প্রচারিত হয়েছে। রিউমর স্ক্যানারের বরাতে জানা গেছ, মির্জা ফখরুল এ ধরনের কোনো বক্তব্য দেয়নি। মির্জা ফখরুলের নামে আরো একটি বক্তব্য ফেসবুকে শেয়ার হয় যেখানে তিনি হামাসের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে বলে প্রচার হয়। পরবর্তীতে প্রথম আলোর এই তথ্যকে ভুয়া সংবাদ বলে সনাক্ত করেন।

গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলে হামলা করে। এই হামলাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এইসব ভুল ছবি-ভিডিও এবং খবর ছড়িয়ে পড়ে। এ ধরনের ভুয়া তথ্য কীভাবে সনাক্ত করা যায়– তার কিছু পরামর্শ সম্বলিত একটি লেখা প্রকাশ করেছে পয়েন্টার। পয়েন্টার বলছে গাজার যুদ্ধ কেন্দ্রিক ভুয়া তথ্য সনাক্ত করতে প্রতিটি তথ্যের ব্যাপারে ৩টি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে:

১) তথ্য সরবরাহ করছে কে? তথ্যের যোগানদাতা কে এবং কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট সে বিষয়ে খোঁজ নেয়া। 

২) প্রমাণ কি? কোনো ছবি বা ভিডিও পেলে তা ডাউনলোড করে অথবা স্ক্রিনশট নিয়ে গুগল লেন্স বা টিনআই এর মাধ্যমে সেই ছবি বা ভিডিওর সূত্র খুঁজে বের করা।

৩) সূত্র কি বলে? সামাজিক গণমাধ্যমের উপর নির্ভরশীল না হয়ে, বিশ্বস্ত গণমাধ্যমকে অনুসরণ করা।

আরো কিছু লেখা