সম্পাদকীয় নীতি
ডিসমিসল্যাব (dismislab.com) একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ এবং অরাজনৈতিক অনলাইন ভেরিফিকেশন ও মিডিয়া গবেষণা প্লাটফর্ম। এটি কোনোও সংবাদমাধ্যম নয়; এটি নিছক একটি ফ্যাক্টচেকিং সাইট নয়; এর যাত্রা শুরু একটি ইনফরমেশন ল্যাবরেটরি হিসেবে যা সমসাময়িক তথ্য প্রবাহের ওপর নজর রাখবে, গবেষণা করবে, তথ্য যাচাই করবে এবং সর্বোপরি গণমাধ্যমকর্মী ও পাঠকের ‘ক্রিটিক্যাল থিংকিং’ সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করবে। আমাদের কাজের ধারা গবেষণা-নির্ভর।
লক্ষ্য: অনলাইনে তথ্যের অবাধ প্রবাহের এই যুগে অপতথ্য (disinformation) ও ভুলতথ্য (misinformation) পৃথিবীজুড়ে মানুষের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ‘ডিস’ ও ’মিস’ শব্দ দুটি থেকেই ডিসমিসল্যাবের নামটি এসেছে। ডিসমিস (dismiss) শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ‘বাতিল’ করাও বটে। আমরা পোস্ট ট্রুথ যুগে ভুয়া ও ক্ষতিকর তথ্যকে ‘ফ্যাক্ট’ উপস্থাপনের মাধ্যমে বাতিলও করতে চাই।
অনলাইনে ছড়ানো অসংখ্য তথ্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যেসব অপতথ্য ও ভুলতথ্য মিশে থাকে সেগুলোকে চিহ্নিত করে মানুষকে যথাসম্ভব সঠিক তথ্য জানানো এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করার কাজটিকেই আমরা লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছি। অনলাইনে পাওয়া ভুল তথ্যের কারণে মানুষের সম্ভাব্য ক্ষতি কমানো, এবং এমন তথ্য ও প্রচারণা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করাই আমাদের কাজের মূলমন্ত্র।
উদ্দেশ্য: রাজনীতি, ধর্ম ও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যসহ নানা বিষয় আমাদের সমাজকে ক্রমেই বিভক্ত করে তুলছে। প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের প্রসার এই বিভক্তিকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। শুধু রাজনীতি, শুধু স্বাস্থ্য, শুধু ধর্ম – আমাদের কাজের ক্ষেত্র নয়। তথ্যে বিষয়বস্তু যা-ই হোক না কেন, ভুয়া খবর বা তথ্য যেখানে জনস্বার্থকে বিপন্ন করছে, সেখানটাতেই আমাদের কাজের জায়গা। নিছক যাচাইয়ের জন্য যাচাই নয়, নিছক বিশ্লেষণের জন্য বিশ্লেষণ নয়; ভালো বা মন্দ তথ্যের সঙ্গে মানুষের জীবনের ভালো-মন্দের সংযোগ যেখানে আছে, আমরা সেখানেই কাজ করি।
আমাদের চারটি মৌলিক উদ্দেশ্য রয়েছে:
১. গবেষণা ও আধেয়ের মাধ্যমে সকল স্তরে গণমাধ্যম সাক্ষরতা তৈরি ও প্রসারে কাজ করা।
২. অনলাইনে বিদ্যমান ভুয়া ও অপতথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য তুলে ধরা।
৩. ভুয়া ও ক্ষতিকর তথ্যের ফাঁদ এড়িয়ে সঠিক তথ্য জানাতে গণমাধ্যমকে সহায়তা করা।
৪. বিদ্যমান উপাত্তকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে মানুষের জন্য সহজবোধ্যভাবে উপস্থাপন করা।
পেশাগত সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতার সমন্বয়ে তৈরি আমাদের একটি নিবেদিত টিম সর্বদা অনলাইন পরিসরে মনিটরিং এবং তথ্যের যাচাই-বাছাইয়ের জন্য কাজ করে থাকে। আমাদের গবেষণা দল শুধু তথ্য যাচাই করে না, বরং এর উৎসের সন্ধান করে, এবং সমাধানের পথও বাতলে দেয়। তাদের নিবেদিত পরিশ্রমের ফসল আমরা ডিসমিসল্যাবের সাইটে, পাঠকদের জন্য তুলে ধরি।
কাজের ক্ষেত্র: আমাদের ওয়েবসাইটে চারটি মূল অংশ দেখতে পাবেন: ফ্যাক্টচেক, মিডিয়া লিটারেসি, মিডিয়া ওয়াচডগ এবং গবেষণা। আমরা ফ্যাক্টচেক করি, কিন্তু শুধু ফ্যাক্টচেকের মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখি না। আমাদের মিডিয়া লিটারেসি (বুঝিব কেমনে) সেকশন নিছক কী করা উচিত তা না বলে, মানুষের জীবনের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক উদাহরণ তুলে ধরার মাধ্যমে সচেতন করার চেষ্টা করে। আমাদের মিডিয়া ওয়াচডগ (‘মিডিয়ার সৃষ্টি’) শুধু গণমাধ্যমকে জবাবদিহি করার চেষ্টা করে না বরং ভুয়া তথ্যের জোয়ারে তাদের যাচাই সক্ষমতা বাড়ানোরও চেষ্টা করে। গবেষণা বিভাগটিতে শুধু আমাদের নিজস্ব গবেষণা পাওয়া যাবে– এমন নয়, আমাদের বাজারের জন্য প্রাসঙ্গিক বিদেশী গবেষণাগুলোর সন্ধানও পাবেন।
আমরা গণমাধ্যমকর্মীদের এই সাইটের সঙ্গে যুক্ত করতে চাই, বিশেষ করে “মিডিয়ার সৃষ্টি” ও “গবেষণা” সেকশনে। অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের গবেষণা নির্ভর লেখা (মতামত নয়) আমরা এখানে প্রকাশ করতে চাই, সম্মানীর বিনিময়ে। আমাদের জন্য লিখতে বা লেখার আইডিয়া শেয়ার করতে পারেন যে কোনো সময়ে।
সম্পাদকীয় মূলনীতি
ডিসমিসল্যাব তার যাবতীয় সম্পাদকীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে স্বাধীনভাবে এবং দায়িত্বটি সম্পাদকীয় দলের। ফ্যাক্টচেকিংয়ের বৈশ্বিক নীতিমালা এবং দলের কর্মীরা তাদের পেশাগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। মালিকানা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠি বা প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাবের নীতিতে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তার করার অধিকার রাখেন না। গবেষণা বা অন্য নিবন্ধ প্রকাশের ক্ষেত্রে তথ্যের সঠিকতা, প্রাসঙ্গিকতা ও ন্যায্যতা কঠোরভাবে মেনে চলা হয়।
সম্পাদকীয় নীতি: আমরা আমাদের কন্টেন্ট তৈরিতে কঠোরভাবে প্রকাশনার নৈতিক মানদণ্ড এবং ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন)-এর নীতিমালা অনুসরণ করে থাকি।
যাবতীয় কার্যক্রমের জন্য ডিসমিসল্যাব তার পাঠকের কাছে দায়বদ্ধ।
ফ্যাক্টচেক, নিবন্ধ, মিডিয়া ওয়াচডগ বা গবেষণা, ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কন্টেন্টকে পরিস্কারভাবে আলাদা আলাদা ক্যাটাগরিতে আমরা চিহ্নিত করে উপস্থাপন করি, যাতে পাঠকদের মধ্যে সংশয়ের সৃষ্টি না হয়।
যেসব কন্টেন্টে শিশু, নারী, জাতি-ধর্ম-ভাষা ও লিঙ্গগত সংখ্যালঘু বা কোন অপরাধের সাক্ষী ইত্যাদি ব্যক্তির প্রসঙ্গ থাকবে সেসবের শব্দচয়ন ও উপস্থাপনে দেশের শিশু আইন ও সাংবাদিকতার নৈতিকতা অনুসরণে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হয়।
জনস্বার্থে নৃশংস ও আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করতে বাধ্য হলে, সে ক্ষেত্রে আমরা কন্টেন্টের শুরুতেই পাঠকের জন্য সতর্কতা নোটিশ প্রদান করে থাকি।
তথ্য যাচাই প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত সূত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে আমরা স্বচ্ছতা বজায় রাখি। আমরা এমন কোনো উৎস বা সূত্র ব্যবহার করি না যা যথাযথ পরিচয় সহকারে প্রকাশ করা যায় না।
আমরা যে কোন দাবিকে মূলত ওপেন-সোর্স প্রমাণের ভিত্তিতে যাচাই করে থাকি। তবে যাচাইকে আরও অকাট্য করার স্বার্থে আমরা ওপেন-সোর্স নয়– এমন প্রমাণ বা বিশেষজ্ঞের মতামত কিংবা ঘটনা সংশ্লিষ্ট নানান পক্ষের সরাসরি মন্তব্যও আমাদের কন্টেন্টে যুক্ত করে থাকি। কোনো দাবির সঠিকতা নির্ধারণে আমরা কীভাবে এবং কিসের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে পৌঁছাই– তা-ও বর্ণনা করি।
উৎস বিচার: আমরা যতটা সম্ভব নির্দলীয় তথ্য এবং ডেটা উৎসগুলো ব্যবহার করার চেষ্টা করি (যেমন, পিয়ার-রিভিউড জার্নাল, সরকারী সংস্থার পরিসংখ্যান) এবং পাঠকদের সতর্ক করার জন্য রাজনৈতিক অ্যাডভোকেসি সংস্থা এবং পক্ষপাতমূলক থিঙ্ক ট্যাঙ্কের মতো উৎস থেকে তথ্য এবং ডেটা বিবেচনা করে থাকি।
যেকোনো প্রকাশিত উৎস যা আমরা উদ্ধৃত করি, লিঙ্ক করি, পটভূমি তথ্য হিসাবে ব্যবহার করি বা আমাদের যাচাইয়ে উল্লেখ করি প্রতিটি সত্যতা যাচাই নিবন্ধের পাদদেশে উৎস বিভাগে তালিকাভুক্ত করা হয়।
যে ক্ষেত্রে আমরা মন্তব্যের জন্য ই-মেইল বা টেলিফোনের মাধ্যমে ব্যক্তি বা সংস্থার সাথে যোগাযোগ করেছি, সেই তথ্যটি নিবন্ধের পাঠ্যের মধ্যে উল্লেখ করা হয় এবং সাধারণত উৎস বিভাগে আলাদাভাবে তালিকাভুক্ত করা হয় না।
ইউটিউব ভিডিও এবং সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের মতো উদাহরণমূলক বা তথ্যগত উদ্দেশ্যে আমাদের কন্টেন্টের মূল অংশে এমবেড করা মিডিয়াসমূহও উৎস বিভাগে আলাদাভাবে তালিকাভুক্ত নয়৷