মিনহাজ আমান
এটি বাস্তব কোনো বজ্রপাতের ভিডিও নয়, কৃত্রিমভাবে তৈরি করা দৃশ্য
মিনহাজ আমান
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক গ্রুপে (১, ২, ৩) ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিওকে বল লাইটনিং বা বল সদৃশ বজ্রপাত সংক্রান্ত দৃশ্য বলে দাবি করা হচ্ছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি আলো রেললাইনের ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। পোস্টদাতার দাবি, এটি বজ্রপাতের পরিবেশ তৈরির আগের ভিডিও।
পোস্টে আরো বলা হয়, একটি গ্যাসের কুণ্ডলী উচ্চগতির বিদ্যুতের তারের কাছাকাছি এসে যাওয়ায় বজ্রপাতের পরিবেশ তৈরি হওয়ার দৃশ্য ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে। তিনটি ফেসবুক গ্রুপ মিলিয়ে পোস্টটি প্রায় দেড়শবার শেয়ার করা হয়েছে।
কিন্তু ডিসমিসল্যাব যাচাই করে দেখেছে, ভিডিওটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা; বাস্তব কোনো বজ্রপাত সংক্রান্ত ভিডিও নয়।
রিভার্স সার্চিং টুল ব্যবহার করে ২৩ সেকেন্ডের আসল ভিডিওটি খুঁজে পেয়েছে ডিসমিসল্যাব।
২০১৯ সালে ভিডিওটি আপলোড করেন আন্দ্রে ট্রুখোনয়েটস নামের একজন। ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে, ‘বল লাইটনিং কট অন ভিডিও নিয়ার রেইলওয়েজ [CGI]’ যার বঙ্গানুবাদ হল: ‘রেলওয়ের পাশে বলের মত বজ্রের ভিডিও ধারণ’। সঙ্গে ব্র্যাকেটে লেখা হয়েছে, ‘সিজিআই’।
সিজিআই বলতে সাধারণত বুঝানো হয় কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজ বা কম্পিউটারের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি বা ভিডিও। অর্থাৎ, ক্যাপশনেই বলা হয়েছে, ভিডিওটি বাস্তবের কোনো ঘটনার নয়।
আরো খোঁজ করে ‘আন্দ্রে ট্রুখোনয়েটস’-এর নামে আর্টস্টেশনে একটি প্রোফাইলও পাওয়া যায় যেখানে বলা হয়েছে, তিনি একজন থ্রিডি চিত্রশিল্পী।
একই নাম সার্চ করে এএফপির একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন পাওয়া গেছে, সেখানে এই শিল্পী বলেছেন, মূলত অ্যাডোবি আফটার ইফেক্টস দিয়ে তিনি এই ভিডিওটি তৈরি করে ২০১৯ সালে ইউটিউবে আপলোড করেছেন।
এছাড়া ভিডিওর দৃশ্যমান রেললাইনটি বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে অবস্থিত বলে জানান তিনি। এএফপির ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে।
একই ভিডিও ২০২০ সালে যাচাই করেছে ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা স্নোপস।
ভিডিওটি কৃত্রিমভাবে তৈরি বলে সাব্যস্ত করা হলেও বল-সদৃশ বজ্রপাত বা বল-লাইটনিং ঘটার সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।
বিজ্ঞান ও পরিবেশ ভিত্তিক প্লাটফর্ম আর্থস্কাই ডট ওআরজির বরাতে স্নোপস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “এখন বিজ্ঞানীদের মধ্যে বল সদৃশ বজ্র বা বল লাইটনিংয়ের বিশ্বাস আরও শক্তিশালী, কিন্তু এটি এখনও এমন যে, আপনি অনলাইনে যে ছবিগুলিকে বল লাইটনিং বলে অভিহিত করতে দেখছেন তার বেশিরভাগই সাধারণ বজ্রপাতের অতিরঞ্জিত ছবি। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের জিজ্ঞাসা করা কোনও বিশেষজ্ঞই প্রকৃতিতে বল বজ্রপাতের কোনো বাস্তব ছবি চিহ্নিত করতে পারেনি।”
ইতোমধ্যে সিজিআই বা কম্পিউটার-জেনারেটেড ইমেজের মাধ্যমে ক্ষতিকর ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ার বেশ কিছু নজির পাওয়া গেছে।
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি সিজিআই ভিডিও দিয়ে দাবি করা হয়েছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনা গোয়েন্দা বেলুন। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও গত বছর সিজিআই ভিডিও দিয়ে অপতথ্য ছড়ানোর প্রমাণ মিলেছে।