ডিসমিসল্যাব

অফিসিয়াল ডেস্ক
সূত্রহীন উক্তি কীভাবে অনুসন্ধান করবেন?
This article is more than 2 years old

সূত্রহীন উক্তি কীভাবে অনুসন্ধান করবেন?

ডিসমিসল্যাব

অফিসিয়াল ডেস্ক

ভাইরাল একটি মিমের মাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জেনেবুঝেই রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্বকে নিয়ে যাচ্ছেন “তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের” দিকে। 

মিমটি বানানো হয়েছে দুইটি ছবি জোড়া দিয়ে। উপরের ছবিটি পুরোনো, যেখানে বাইডেন বলছেন ইউক্রেনে ট্যাঙ্ক পাঠানোর অর্থ হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়া। নিচেরটি বাইডেনের সাম্প্রতিক ছবি, যেখানে তিনি ইউক্রেনে ট্যাঙ্ক পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা জানাচ্ছেন। তাহলে আমরা কি সত্যিই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে আছি?

জানুন, কীভাবে আমরা মিমটি ফ্যাক্টচেক করেছি।

বায়ো চেক করুন

সদ্যই আমরা ইউক্রেন-রাশিয়া দ্বন্দ্বের এক বছর পেরিয়ে এসেছি। এবং এ থেকে আমরা যদি একটি জিনিস শিখে থাকি, তা হলো: যুদ্ধের সময় প্রচুর বিশৃঙ্খলা ও অনিশ্চয়তা থাকে। এবং এটি ভুল তথ্য ছড়ানোর আদর্শ পরিস্থিতি।

তো, প্রথমেই আমরা যা করতে পারি, তা হলো পোস্টটির উৎস শনাক্ত করা। পোস্টদাতার বিষয়ে কিছুটা জানলেই বুঝতে পারবেন তারা বিশ্বস্ত সূত্র কি না। তিনি কি সাংবাদিক? রাজনীতিবিদ? তারকা? এখান থেকেই আপনি তাদের এজেন্ডা ও বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে ধারণা পাবেন।

এই ঘটনায়, পোস্টদাতার নাম টারাবুল। টুইটার বায়ো অনুসারে, তিনি শেয়ার, এনএফটি ও ক্রিপ্টোকারেন্সি বিষয়ে আগ্রহী এবং ফক্স বিজনেসেও এসেছেন। ফলে আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে তাঁর যথেষ্ট ধারণা থাকার কথা না, যেমনটা একজন সম্মানিত সাংবাদিক বা সরকারি কর্মকর্তার থাকবে। অর্থাৎ, আমাদের আরও গভীরে খতিয়ে দেখতে হবে।

নির্ভরযোগ্য প্রমাণ খুঁজুন

পরের ধাপটি হলো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ খুঁজে পাওয়া। বাইডেনের এই উক্তি এসেছে কোথায় থেকে? মিমে কিংবা ক্যাপশনে কোথাও কোনো সূত্রের উল্লেখ নেই। এবং এটিই একটি সতর্ক হওয়ার মতো বিষয়। 

তো এক্ষেত্রে আমি “ইউক্রেন-রাশিয়া দ্বন্দ্বে বাইডেনের হোয়াইট হাউজ বক্তৃতা” এরকম কি-ওয়ার্ড লিখে সার্চ দিই। মিমের তথ্যানুসারে বাইডেনের উদ্বৃতিটি ২০২২ সালের ১১ মার্চের। তাই আমি সার্চ রেজাল্ট সেদিন থেকে যেন শুরু হয় তা নির্ধারণ করে দিই। গুগল সার্চে এরকম ফিল্টার ব্যবহার করতে টুলস অংশে গিয়ে ড্রপডাউন মেন্যুতে ক্লিক করুন। সেখানে ‘এনি টাইম’ মেন্যুতে ক্লিক করলে নিজের ইচ্ছামতো টাইম সেট করা যাবে। এখান থেকেই আমি বাইডেনের মূল বক্তৃতার হোয়াইট হাউজ ট্রান্সক্রিপ্ট পাই।

মূল উৎস পড়া

মিডিয়া লিটারেসির ক্ষেত্রে সরাসরি উৎসে গিয়ে অনুসন্ধান ও পড়ে দেখার যে পরামর্শ দেওয়া হয়– তার আদর্শ উদাহরণ এই ঘটনাটি। এক্ষেত্রে আমাদের পুরো বক্তৃতাটি খুঁজে বের করতে হতো। 

এখন সেখানে উক্তিটি খুঁজে দেখার পাশাপাশি কোন প্রেক্ষাপটে এটি বলা হয়েছে তাও বের করতে হবে। এজন্য আমি বক্তৃতাটিতে command+f ব্যবহার করে ‘ট্যাঙ্ক’ শব্দটি সার্চ দিয়েছি। এবং সেখান থেকেই ওই লাইনটি খুঁজে পেয়েছি। 

পুরো উক্তিটি ছিল এরকম: “আমরা সেখানে আক্রমণাত্মক সব সরঞ্জমাদি এবং প্লেন, ট্যাঙ্ক ও ট্রেনে করে আমেরিকান পাইলট ও সেনা পাঠাচ্ছি– এমন একটি ধারণার কথা ভেবে দেখুন। নিজেকে বোকা বানাবেন না। আপনারা যাই বলুন না কেন – এটাকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলা হবে”।

অর্থাৎ, বাইডেন বলেননি যে, ইউক্রেনে ট্যাঙ্ক পাঠালেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। তিনি বলেছেন, ট্যাঙ্কের সঙ্গে “আমেরিকান পাইলট ও সেনা” পাঠালে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে।

রেটিং

সঠিক নয়: এই টুইটের বক্তব্য অনুসারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে পারে- এমন ধারণা যথার্থ নয় এবং এখানে গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপটও অনুপস্থিত। বাইডেনের মূল বক্তব্য পড়লে দেখবেন যে, ট্যাঙ্ক পাঠালেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে তিনি এমন কিছু বলেননি। তিনি সুনির্দিষ্টভাবেই বলেছেন যে, সৈন্য, ট্রেন ও ট্যাঙ্ক পাঠানো যুদ্ধের আয়োজনের মতো হবে।

এটা মনে রাখা জরুরি যে, যুদ্ধের সময় ছোটখাটো কোনো টুইটার-ইনফ্লুয়েন্সারকে নয়, বরং নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোর দিকে নজর রাখাই সবচেয়ে ভালো। ভাষা একটি হাতিয়ার। এই পরিস্থিতি কিংবা অন্য কোনো দ্বন্দ্বকে “তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে”র তকমা দেওয়া শুধু ভীতিই ছড়াবে। ফলে বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে চলেছে এমন কোনো টুইট বিশ্বাস করার আগে নিজেই সেটি পরীক্ষা করে দেখুন।


এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল পয়েন্টার-এ। অনুমতি নিয়ে এখানে অনুবাদ ও পুনঃপ্রকাশ করা হয়েছে। বাংলায় অনুবাদ করেছেন তামারা ইয়াসমীন তমা।

আরো কিছু লেখা