মিনহাজ আমান
নেপাল বিমান দুর্ঘটনার বিভ্রান্তিকর ছবি গণমাধ্যমে
মিনহাজ আমান
গত ১৫ জানুয়ারি, রোববার নেপালের পোখারায় অভ্যন্তরীন রুটে চলাচলকারী একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। ইয়েতি এয়ারলাইন্সের এই বিমানটি রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে পোখারায় যাচ্ছিল। খবরে জানা যায়, বিমানটিতে সব মিলিয়ে ৭২ জন যাত্রী ছিল এবং তাদের অন্তত ৭০ জন নিহত হয়েছে।
খবরটি বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়। তবে, দেশের অন্তত পাঁচটি গণমাধ্যম সাম্প্রতিক এই ঘটনার খবরের সঙ্গে পুরোনো দুর্ঘটনার ছবি চালিয়ে দিয়েছে। এদের মধ্যে চারটি ছবির কোনো ক্যাপশন দেয়নি; অপরটি ক্যাপশনে ছবির সময় বা সূত্র উল্লেখ করেনি, যা বিভ্রান্তি তৈরি করেছে।
১৭ জানুয়ারি দৈনিক যুগান্তরে নেপালের বিমান দুর্ঘটনার একটি খবর প্রকাশিত হয় যার শিরোনাম ছিল, “মোবাইলে মিলল নেপালের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার মুহূর্তের ভিডিও”। খবরটির সঙ্গে যে ছবি যুক্ত করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে: একটি বিধ্বস্ত বিমানে আগুন জ্বলছে এবং তার আশেপাশে নিরাপত্তাবাহিনীর কয়েকজন সদস্য রয়েছেন। ক্যাপশনে ছবিটির উৎস বা প্রেক্ষিত সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি।
সার্চ করে দেখা যায়, ছবিটি নেপালের পোখারায় সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনার নয়। ছবিটি, ২০১৮ সালের ১২ মার্চে নেপাল ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমানের। দৈনিক যায়যায়দিনেও একই ছবির আরেকটি সংস্করণ পোখারা-দুর্ঘটনার খবরের সঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছে। এই ছবিটি ব্লুমবার্গে প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ১৩ মার্চে।
গতকাল দৈনিক ইত্তেফাকের ওয়েবসাইটে “নেপালে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা ৭২ আরোহীর সবাই নিহত” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর সঙ্গে বিধ্বস্ত বিমানের যে ছবি প্রকাশ করা হয়েছে সেটিও ২০১৮ সালের মার্চের। তখন রয়টার্সের সূত্রে এই ছবিটি প্রকাশ করেছিল ভয়েস অফ আমেরিকাসহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। বিএনএনিউজ২৪ নামের একটি নিউজ পোর্টালেও রবিবারের বিমান দুর্ঘটনার খবরের সঙ্গে এই ছবির আরেকটি সংস্করণ প্রকাশ করা হয়। এই চারটি গণমাধ্যমের কোনটিই ছবির ক্যাপশন দেয়নি।
গত ১৫ জানুয়ারি সময় টিভির অনলাইনেও নেপালের পোখারায় দুর্ঘটনায় নিপতিত হওয়া বিমানের খবর প্রকাশিত হয়েছে। “নেপালে যেভাবে ঘটল মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনা” শিরোনামের সেই খবরের সঙ্গে বিধ্বস্ত বিমান ও উদ্ধারকর্মীদের একটি ছবি যুক্ত করা হয়। ক্যাপশন ছিল: “দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকর্মীদের তৎপরতা। ছবি: সংগৃহীত”।
এই ছবিও পুরোনো। এটি পাওয়া যায়, ২০১৮ সালে ইউএস-বাংলা বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে বিবিসি ও গার্ডিয়ানে প্রকাশিত খবরে। কিন্তু সময় টিভির প্রতিবেদনে বিধ্বস্ত বিমানের ছবিটি যে পুরোনো সেটির উল্লেখ ছিল না।
এর বাইরে সামাজিক মাধ্যমেও নেপালের সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনার খবরের সঙ্গে একাধিক পুরোনো ছবি পোস্ট হতে দেখা গেছে। যেমন, একটি ফেসবুক পেজ থেকে ১৫ জানুয়ারি নেপালে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানের খবরটি পোস্ট করা হয়। কিন্তু সার্চ করে দেখা গেছে, ছবিটি ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের একটি দুর্ঘটনার। মূলত নেপালের লুকলা থেকে কাঠমান্ডু যাওয়ার পথে ছোট বিমানটি বিধ্বস্ত হয় এবং ৩ জন নিহত হন। তখন এই ছবি ও খবর প্রকাশিত হয়েছিল দ্য কুইন্টসহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে।
ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত তিন দশকে নেপালে ২৭টি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে, যেগুলোতে ৬০০-র বেশি যাত্রী নিহত হয়েছেন। নেপালে আবার এমন একটি বিমান দুর্ঘটনার পর আগের ঘটনার ছবি নানাভাবে নতুন দুর্ঘটনার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে।
অর্থাৎ নেপালে সাম্প্রতিক বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবরের সঙ্গে প্রেক্ষিত ও সূত্র ছাড়াই পুরোনো ছবি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।