নোশিন তাবাসসুম

অস্ত্রসহ জামায়াত-শিবির কর্মী আটকের দাবিতে ছড়াচ্ছে আরসা সদস্যের ছবি
নোশিন তাবাসসুম
জামায়াত ও শিবির কর্মী অস্ত্রসহ আটক হয়েছে দাবিতে একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ডিসমিসল্যাব ফ্যাক্টচেক করে দেখেছে, ছবিগুলো আসলে ২০২৩ সালের ২৬ অক্টোবরে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশন এলাকায় র্যাব-১৫ এর একটি অভিযানে গ্রেপ্তার আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) দুইজন সদস্য এবং তাদের থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের ছবি।
ফেসবুকের একটি ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে ছবিগুলো পোস্ট করা হয়। ক্যাপশনে বলা হয়, “দেখেন ভাই জামাত-শিবিরের কাছে কি পরিমান অস্ত্র জামাত-শিবিরের কর্মীদের কাছে যদি এত পরিমান অস্ত্র থাকে তাহলে এবার চিন্তা করেন জামাতের সিনিয়ার নেতাদের কাছে কি পরিমাণ অস্ত্র থাকতে পারে, আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই আমাদের চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় যত জামাত-শিবিরের কর্মী নেতা আছে প্রত্যেকের বাড়ি ঘর তলাশী করা হোক দেখবেন কি পরিমাণে অস্ত্র পাওয়া যায়।” এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পোস্টটি ৩ হাজার ৬০০ বার শেয়ার হয়েছে। একই দাবি করে ফেসবুকের একাধিক (১, ২, ৩, ৪) ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকেও ছবিগুলো পোস্ট হতে দেখা যায়। এছাড়া ইনস্টাগ্রামেও একই দাবিতে ছবিগুলো পোস্ট করা হয়।

ডিসমিসল্যাব ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দৈনিক গণকণ্ঠের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায়। ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে ব্যবহৃত ছবির সাথে ছড়িয়ে পড়া পোস্টের ছবিগুলো হুবহু সাদৃশ্যপূর্ণ।
“কক্সবাজারে গোয়েন্দা সংস্থা’র ডিজিএফআই এর কর্মকর্তা হত্যার সাথে জড়িত সালমান গ্রেফতার” শিরোনামে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, “কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং শরনার্থী ক্যাম্প-৪ এ র্যাবের অভিযানে গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এর কর্মকর্তা হত্যাকান্ডে জড়িত ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত এবং সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা’র শীর্ষ কমান্ডার ও আরসা’র ওলামা বডি ও টর্চার সেলের প্রধান দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ওসমান প্রকাশ সালমান মুরব্বীসহ ২জনকে আটক করেছে র্যাব-১৫।”
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ২৬ অক্টোবর রাতে র্যাব-১৫ এর অভিযানে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কক্সবাজারের উখিয়া থানাধীন কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আরসা’র শীর্ষ কমান্ডার, আরসা’র ওলামা বডি ও টর্চার সেলের প্রধান মোঃ ওসমান প্রকাশ সালমান মুরব্বীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে তার তথ্যের ভিত্তিতে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডস্থ মধুরছড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন পাহাড়ে আরসার তৈরি একটি গোপন টর্চার সেলের সন্ধান পায় এবং সেখান থেকে টর্চার সেলের সদস্য মোঃ ইউনুসকে গ্রেফতার করা হয়।
এছাড়া নিউজ বাংলা ২৪ এর একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “সহযোগীসহ গ্রেপ্তার আরসার ‘টর্চার সেলের’ প্রধান।” ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবরে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে ব্যবহৃত ছবির সাথে ছড়িয়ে পড়া পোস্টের ছবিগুলো হুবহু সাদৃশ্যপূর্ণ।

অধিকতর যাচাইয়ে, সংশ্লিষ্ট কিওয়ার্ড সার্চ দিয়ে এ ঘটনার একাধিক (১, ২, ৩, ৪) প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনগুলোতেও ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলো দেখা যায়। দ্য ডেইলি স্টারের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ২৭ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনে জানান সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা’র শীর্ষ কমান্ডার ও আরসা’র ওলামা বডি ও টর্চার সেলের প্রধান দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ওসমান প্রকাশ সালমান মুরব্বীসহ দুইজনকে আটক করেছে র্যাব-১৫।
অর্থাৎ, অস্ত্রসহ জামায়াত এবং শিবির কর্মী আটক হওয়ার দাবির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। ছবিগুলো মূলত ২০২৩ সালে র্যাবের অভিযানে আরসা সংগঠনের দুইজন সদস্যকে গ্রেপ্তারের।