তাসনিম তাবাস্সুম মুনমুন

ইরানে ভারতীয় ও ইসরায়েলি গুপ্তচরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর দাবিতে ছড়াচ্ছে সিরিয়ায় আইএস সদস্য আটকের ভিডিও
তাসনিম তাবাস্সুম মুনমুন
ইরানে আটক ভারতীয় ও ইসরায়েলি গুপ্তচরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ফ্যাক্টচেক করে ডিসমিসল্যাব দেখতে পেয়েছে, ছড়ানো ভিডিওটি সিরিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলে চালানো এক অভিযানে অর্ধশতাধিক আইএস সদস্য আটকের।
“ইরানে আটক ভারতীয় ও ইসরায়েলি গুপ্তচরের মৃত্যুদন্ড কার্যকর” লেখা ভিডিওতে একটি দেওয়ালের পাশে বেশ কিছু মানুষকে চোখ ও হাত বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। তাদের সামনে বিপুল সংখ্যক উদ্ধারকৃত অস্ত্র। একদিকে সবুজ, নীল ও হলুদ রং-এর তিনটি পতাকা লক্ষ্য করা যায়।

এ পর্যন্ত আড়াই লাখেরও বেশি ব্যবহারকারী ভিডিওটি দেখেছেন, শেয়ার করেছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার জন। পোস্টে একজন মন্তব্য করেছেন, “বাংলাদেশে ভারতীয় গুপ্তচর দের খুঁজে বের করে —-”। আরেকজন লিখেছেন, “ইরানের মত বাংলাদেশেও ইজরাইল ও ভারতের রয় এজেন্টদের খুইজা খুইজা ধরা উচিত এবং ইসরাইলের গুপ্তচর ও মুনাফিক ইসরায়েল এদেরকে খুঁজে বের করে পাশাপাশি ভারতের এজেন্টদের রায়দের কে খুজে খুজে বের করে শাস্তি দেওয়া উচিত আইনের আওতায় না শাস্তি দেওয়া হোক ও শাসনের প্রতি ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা রইল”।
ভিডিও-এর কিফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে চ্যানেল এইট নামের এক সংবাদমাধ্যমের ফেসবুক পোস্টে একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায় যা এই ভিডিও-এর সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। তাছাড়া কিফ্রেম সার্চে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন (১, ২, ৩, ৪, ৫) পাওয়া যায়।
চ্যানেল এইটের প্রকাশিত ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা, “হাসাকা অঞ্চলে সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ), ইন্টার্নাল সিকিউরিটি ফোর্সেস (আসায়িশ) ও উমেন্স প্রোটেকশন ইউনিট (ওয়াইপিজে)-এর যৌথ অভিযানে আইএসআইএস-এর ৫১ জন সশস্ত্র সদস্যকে আটক করা হয়েছে।” প্রতিবেদনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর হাসাকায় “পিপলস পার্মানেন্ট সিকিউরিটি অপারেশন” নামে তিন বাহিনীর ১৪ ঘণ্টার যৌথ অভিযান চলে। অঞ্চলটি সিরিয়ার রোজাভা নামের স্বঘোষিত স্বায়ত্তশাসিত প্রশাসনের অংশ।
এসডিএফ-এর বরাতে ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলের রুডাও মিডিয়া নেটওয়ার্ক জানায়, তিন হাজার সশস্ত্র বাহিনীর সম্মিলিত এই অভিযানে ৫১ জন আইএস সদস্যকে আটক করা হয়েছে। অভিযানের সময় ৫০টি কালাশনিকভ রাইফেল, ১৫৫টি ম্যাগাজিন, ১৬টি পিস্তল, একটি মেশিনগান, গ্রেনেড এবং বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ জব্দ করা হয়েছে। এই অস্ত্র ও গোলাবারুদই যাচাই করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে।
তাছাড়া ভিডিওতে যে তিনটি পতাকা দেখা যায় তা অভিযান চালানো তিন বাহিনীর। সবার বামে সবুজের মাঝে লাল তারকাযুক্ত পতাকাটি উমেন্স প্রোটেকশন ইউনিট-এর। মাঝের আকাশি রং-এর পতাকাটি ইন্টার্নাল সিকিউরিটি ফোর্সেসের আর সবার ডানের হলুদ পতাকা সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের।

অর্থাৎ, ভিডিওটি সিরিয়ার হাসাকায় তিন বাহিনীর যৌথ অভিযানে ৫১ জন আইএসআইএস সদস্য আটকের। এর সঙ্গে ইরানে ভারতীয় ও ইসরায়েলি গুপ্তচরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কোনো সম্পর্ক নেই।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জুন মাসে ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের পর মোসাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ও দেশটিতে গোয়েন্দা কার্যক্রমে সহায়তার অভিযোগ বাড়তে থাকে। সেই সময় ইরানে ৭৩ জন ভারতীয় আটকের এক দাবি ছড়িয়ে পড়লে ফ্যাক্টচেকে জানা যায়, এ বিষয়ে সরকারি বিবৃতি বা সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে আটককৃতদের কাউকেই ভারতীয় নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। ১২ দিনের ইরান- ইসরায়েল যুদ্ধের পর মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরান এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। তবে তাদের মধ্যে কেউ ভারতীয় ছিল কিনা এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।


