মো. তৌহিদুল ইসলাম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব বলে ভারতের মুর্শিদাবাদের দৃশ্য প্রচার
মো. তৌহিদুল ইসলাম
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে সাউন্ড স্পিকার ভাড়া করে গান শোনাচ্ছে– এমন দাবিতে একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ফ্যাক্টচেকে দেখা যায়, দৃশ্যটি ভারতের মুর্শিদাবাদের একটি পুরোনো ঘটনার– যা এর আগে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চল চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঘটনা দাবিতেও ছড়িয়েছিল।
গত ৩১ অক্টোবর খবর প্লাস নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। এতে দেখা যায়, একটি ইটের ভাটার পাশে অবস্থিত বিস্তৃত সবুজ জমির দুই দিক থেকে অনেকগুলো মাইক ও সাউন্ড বক্স মুখোমুখি বসিয়ে উচ্চ শব্দে গান বাজানো হচ্ছে। ক্যাপশনে লেখা, “ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলাকাবাসীর দুই পক্ষের দ্বন্দ্বে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে সাউন্ড স্পিকার ভাড়া করে গান শোনাচ্ছে।” এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভিডিওটি তিন হাজারের অধিক বার বেশি শেয়ার হয়েছে। প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে ৮০ হাজারের বেশি।

খবর প্লাস পেজ ছাড়াও ফেসবুকের একাধিক পেজ ও প্রোফাইল থেকে ভিডিওটি একই দাবিতে পোস্ট করা হয়েছে (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮)। এছাড়া কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেল থেকেও দৃশ্যটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বলে আপলোড করা হয়েছে (১, ২, ৩)।

ভিডিওর সত্যতা যাচাইয়ে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে সার্চ করলে, “গোলাপ পাগলী” একটি ফেসবুক প্রোফাইলে নয় মাস আগে (১৫ জানুয়ারি) আপলোড হওয়া হুবহু একই দৃশ্যযুক্ত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা ছিল “মুর্শিদাবাদ Vs নদীয়া open a competition।” এখন পর্যন্ত ৪০ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে এই ভিডিও, শেয়ার হয়েছে আট শর অধিক। এর পাশাপাশি এই পোস্টে ৩৩ হাজার প্রতিক্রিয়া ও সাড়ে তিন শর বেশি মন্তব্য ছিল।
অধিকতর যাচাইয়ে “মুর্শিদাবাদ Vs নদীয়া open a competition” ক্যাপশনটি প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড হিসেবে গুগলে সার্চ করা হলে, “রবিউল ফানি ভিডিও” নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে হুবহু একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। পাশাপাশি গুগল সার্চের ফলাফলে ভারতের সংবাদমাধ্যম আজ তক বাংলায় গত ২৫ জানুয়ারি প্রকাশিত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন সামনে আসে। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছর ২২ জানুয়ারি ভারত- বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চল চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঘটনা দাবিতে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে আজ তক বাংলা দাবিটিকে “মিথ্যা” বলে চিহ্নিত করে।
আজ তক বাংলার ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে যা বলা হয়
প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ দিয়ে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের দাবিতে ছড়ানো কিছু পুরোনো পোস্ট (১, ২) খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। সেগুলোর কয়েকটিকে ফেসবুক মিথ্যা তথ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে বলে দেখা যায়। পোস্টগুলোর ক্যাপশনে লেখা, “চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে চলছে গান ফাইট বাংলাদেশ সীমান্তে মাইকের পরিমাণ আরো বাড়ানো হোক, টাকা আমি হালের গরু বেইচ্চা দিমু।”

আজ তক বাংলার ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মূল ঘটনাটি ভারতের মুর্শিদাবাদের ডোমকল থানার অন্তর্গত গোবিন্দপুর এলাকার। চাঁপাইনবাবগঞ্জের দাবিতে পোস্টটি ছড়িয়ে পড়লে ভিডিওটির স্ক্রিনশট রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আজ তক বাংলাও রবিউল ফানি নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের একই ভিডিও খুঁজে পায়। এরপর ওই চ্যানেলে আপলোড হওয়া অন্যান্য ভিডিও যাচাই করে একটি শর্ট ভিডিওতে “সুপার সাউন্ড” লেখাটি খুঁজে পায়। সেখানে যোগাযোগের নম্বর এবং ঠিকানাও উল্লেখ করা ছিল। শর্ট ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা ছিল- ‘পিকনিক 2025 সাল।’
এরপর আজ তক বাংলা গুগল ম্যাপে সার্চ করে ভারতের “সুপার সাউন্ড” প্রতিষ্ঠানটির সম্ভব্য অবস্থান খুঁজে বের করে। এরপর ভিডিওতে উল্লেখিত যোগাযোগের নাম্বারে কল দিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শাহিন শেখের সঙ্গে কথা বলে। শাহিন শেখ আজ তক বাংলাকে জানান, তিনি নদীয়া জেলার বাসিন্দা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই ধরনের সাউন্ড সিস্টেম সাপ্লাই করেন ও সাউন্ডের কাজ করেন।

আজ তক বাংলার প্রতিবেদন অনুযায়ী শাহিন শেখ আরও জানান, “ভাইরাল ভিডিওটি আসলে মুর্শিদাবাদের ডোমকল থানার অন্তর্গত গোবিন্দপুর এলাকার। যেখানে দুটি পৃথক ইটভাটা কর্তৃপক্ষ পিকনিকের আয়োজন করেছিল এবং নিজেদের মধ্যে আনন্দ করার জন্য একপ্রকার সাউন্ড প্রতিযোগিতা করা হয়।”
অর্থাৎ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা বলে ছড়ানো ভিডিওটি মূলত ভারতের মুর্শিদাবাদের ঘটনা, যা এর আগে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চল চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঘটনা দাবিতেও ছড়িয়েছিল।