নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
অক্টোবর ৩০, ২০২৫
১৬:০৫:০৬
যুক্তরাজ্যের এটিএম মেশিন চুরির ঘটনা ছড়াচ্ছে বাংলাদেশের দাবিতে

যুক্তরাজ্যের এটিএম মেশিন চুরির ঘটনা ছড়াচ্ছে বাংলাদেশের দাবিতে

অক্টোবর ৩০, ২০২৫
১৬:০৫:০৬

নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

বাংলাদেশে একটি এটিএম বুথ ক্রেন দিয়ে টেনে নিয়ে গেল চোর– এমন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ডিসমিসল্যাব ফ্যাক্টচেক করে দেখেছে, ভিডিওটি যুক্তরাজ্যের মিল্টন কিন্স এলাকার চলতি বছরের ২৬ অক্টোবরের একটি ঘটনা। 

ফেসবুকের একাধিক (, ) ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে একে বাংলাদেশের দাবিতে পোস্ট করা হয়। ক্যাপশনে উল্লেখ না থাকলেও, ভিডিওর ভেতরে ঘটনাকে বাংলাদেশের বলে দাবি করতে দেখা যায়। একটি ভিডিওর ভেতরে লেখা “এই হলো বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি”।

আরেকটি ভিডিওর ভেতরে লেখা, “এটাই বাংলাদেশ এটা আফগানিস্তান নইরে বাবা।” (বানান অপরিবর্তিত) এ ভিডিওতে মাছরাঙা টেলিভিশনের লোগো দেখতে পাওয়া যায়। অন্য এক অ্যাকাউন্ট থেকে একই ভিডিও পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়, “ভেকু দিয়ে প্রকাশ্যে এটিএম বুথ চুৱি #দেশে স্বাধীনতা কোথায়।” এই ভিডিওতে দেখা যায় প্রথম আলোর লোগো। 

ভিডিওতে দেখা যায়, রাতের বেলা একটি হলুদ রঙের ক্রেন একটি বুথ ভেঙ্গে একটি এটিএম মেশিন টেনে বের করছে। পরবর্তীতে একটি সাদা গাড়িতে মেশিনটি তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

ফেসবুকে একাধিক ব্যক্তিগত আইডি (, , , ) থেকে একই লেখা পোস্ট করে ঘটনাস্থল বাংলাদেশ বলে দাবি করা হচ্ছে। 

ভিডিওর উৎস যাচাই করতে গেলে ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে প্রথম আলোর পেজ থেকে প্রকাশিত একটি ভিডিও রিল। রিলের ক্যাপশন হলো, “যুক্তরাজ্যে ক্রেন দিয়ে পুরো এটিএম মেশিন তুলে নিয়ে যাওয়া হলো প্রকাশ্যে।” মাছরাঙা টেলিভিশনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট হওয়া ভিডিও রিলে একই ঘটনার দৃশ্য দেখা যায়। এই রিলের ক্যাপশন ছিল, “পুরো এটিএম বুথ ক্রেন দিয়ে টেনে নিয়ে গেলো চোর।” ভিডিওর ৩৫ সেকেন্ডে একে ইংল্যান্ডের ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়, “ক্যাশ মেশিন চুরি করতে টেলিহ্যান্ডলার ব্যবহার করায় একটি সেইনসবারির দোকানের সামনের অংশে (শপ ফ্রন্ট) ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। টেমস ভ্যালি পুলিশ জানিয়েছে, মিল্টন কিনসের ব্রুকল্যান্ডস স্কোয়ারে সুপারমার্কেট চেইনের লোকাল স্টোরটিতে ভাঙচুর চালাতে নির্মাণ/কৃষি কাজে ব্যবহৃত এই যানটি ব্যবহার করার পর তারা একটি চুরির ঘটনার তদন্ত করছে।” 

একই ঘটনায় প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, “মুখোশধারী একদল লোক একটি চুরি করা জেসিবি টেলিহ্যান্ডলার ব্যবহার করে বাকিংহ্যামশায়ারের একটি সেইনসবারির দোকান থেকে ক্যাশ মেশিন উপড়ে নিয়ে গেছে। মুখোশধারী দলটি গত ২৬শে অক্টোবর, রবিবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টা ৫০ মিনিটে মিল্টন কিনসের ব্রুকল্যান্ডস স্কোয়ারের দোকানটিকে টার্গেট করে। তারা জেসিবি ব্যবহার করে দোকানের সামনের অংশ থেকে এটিএমটি তুলে নেয়, যার ফলে জানলা ভেঙে যায়, এবং সেটিকে একটি সাদা পিক-আপ ট্রাকে তোলে। এরপর চোরেরা জেসিবিটিকে দোকানের সামনে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় বলে মনে করা হচ্ছে।”

এই ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে দেখা যায় বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমকেও (, , )। কালের কণ্ঠের প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “টাকা নয়, প্রকাশ্যেই তুলে নিয়ে গেল পুরো এটিএম মেশিন”। প্রতিবেদনটি পড়লে জানা যায়, ঘটনাটি যুক্তরাজ্যের। প্রতিবেদনে বলা হয়, “ক্রেন দিয়ে দোকানের একটি অংশ ভেঙে প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে একটি এটিএম মেশিন। সম্প্রতি এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। টিআরটি মিডিয়া জানিয়েছে, ঘটনাটি যুক্তরাজ্যের। ভিডিওতে দেখা যায়, একদল লোক ক্রেন দিয়ে দোকানের সামনের অংশ ভেঙে এটিএম মেশিনটি বের করে আরেকটি বাহনে করে সেটি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।”

অর্থাৎ, ভিডিওটি আসলে যুক্তরাজ্যের একটি এটিএম মেশিন চুরির ঘটনা, এর সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই। 

আরো কিছু লেখা