নোশিন তাবাসসুম

এনসিপি নেতার অব্যাহতি নিয়ে গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর খবর ও ছবি প্রচার
নোশিন তাবাসসুম
সমকামিতার অভিযোগে এনসিপি নেতা মুনতাসির মাহমুদকে অব্যাহতি – এমন একটি দাবি ছড়াতে দেখা গেছে বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে। তবে ডিসমিসল্যাব ফ্যাক্টচেক করে দেখেছে, সংগঠক মুনতাসির মাহমুদকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তাছাড়া সংবাদে ব্যবহৃত ছবিটি মুনতাসির মাহমুদের নয়, অ্যাক্টভিস্ট মো. মুনতাসির রহমানের।
গত ১২ অক্টোবর থেকে একাধিক গণমাধ্যমে (১, ২, ৩, ৪) “সমকামিতার অভিযোগে এনসিপি নেতাকে অব্যাহতি” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে একই দাবিটি ছড়াতে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ (১, ২, ৩, ৪, ৫) এবং প্রোফাইলে (১, ২, ৩)।

বার্তা বাজারের ১২ অক্টোবরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, “সমকামিতার অভিযোগে সমালোচনার পর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক মুনতাসির মাহমুদকে দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। রোববার (১২ অক্টোবর) দলের দপ্তর সেলের সদস্য সাদিয়া ফারজানা দিনা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে অব্যাহতির বিষয়টি জানানো হয়েছে।”

তবে যাচাই করে দেখা যায়, যার ছবি ব্যবহার করে এই সংবাদগুলো করা হয়েছে, তিনি প্রকৃতপক্ষে এনসিপির সংগঠক পদে থাকা মুনতাসির নন। তিনি অ্যাক্টিভিস্ট মো: মুনতাসির রহমান। তার সঙ্গে এনসিপির বর্তমানে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্ট দেন মুনতাসির রহমান। পোস্টে তিনি বলেন, “মো: মুনতাসীর রহমান যুগ্ম সদস্য সচিব জাতীয় নাগরিক পার্টি”। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর আংশিক কমিটি ঘোষণা করে।
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে, জুলাই আন্দোলনে শহিদ মো. ইসমাইল হাসান রাব্বির বোন মিম আক্তার দলটির নাম ঘোষণা করেন। ২৮ ফেব্রুয়ারিতে ঘোষিত ১৭১ সদস্যের আংশিক কমিটিতে মুনতাসির রহমানকে যুগ্ম সদস্য সচিবের পদ দেওয়া হয়। এই ঘোষণা নিয়ে সে সময় একাধিক (১, ২, ৩, ৪) সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই সব প্রতিবেদনে যুগ্ম সদস্য সচিব পদে মুনতাসির রহমানের নাম লক্ষ্য করা যায়।
পরবর্তীতে মার্চ এর ২ তারিখে এনসিপি নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আনুষ্ঠানিক ভাবে কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করে। তবে সেই তালিকায় মো: মুনতাসির রহমান নামের কেউ যুগ্ম সদস্য সচিব পদে ছিল না। তবে সংগঠক পদে মুনতাসির মাহমুদ ছিলেন।

অধিকতর যাচাই এর জন্য, ডিসমিসল্যাব জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ যাচাই করে দেখে। এনসিপির পেজে ১২ অক্টোবর, সন্ধ্যা ৭.৪৫ এ একটি বিজ্ঞপ্তি পোস্ট করতে দেখা যায়। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা, “কারণ দর্শানো নোটিশ প্রেরণ ও অব্যাহতি আদেশ প্রদান-”। বিজ্ঞপ্তিটি সংগঠক মুনতাসির মাহমুদকে বরাবর করে লেখা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “আপনার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এমতাবস্থায় আপনার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যাওয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টি – এনসিপির আহবায়ক জনাব নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব জনাব আখতার হোসেনের নির্দেশ মোতাবেক আপনাকে দলের সকল প্রকার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড থেকে এতদ্বারা সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করা হলো। এ অব্যাহতি আদেশ আজ হতে কার্যকর হবে।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “একইসাথে আপনাকে কেনো স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দেওয়া হবে না তার লিখিত ব্যাখ্যা কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা কমিটি’র প্রধান জনাব অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল-আমিনের নিকট আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রদান করার জন্য অনুরোধ করা হলো।” বিজ্ঞপ্তির নিচে দলের দপ্তর সেলের সদস্য সাদিয়া ফারজানা দিনার স্বাক্ষর রয়েছে।
এছাড়া, যাচাইয়ে দেখা যায়, এনসিপির সংগঠক পদে থাকা মুনতাসির মাহমুদ ১৪ অক্টোবর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে, এনসিপির বিজ্ঞপ্তির পোস্টটি শেয়ার করেন। পোস্টের ক্যাপশনে লিখেন, “আসসালামু আলাইকুম। আমি আজ সন্ধ্যা ৭টায় বাংলামোটর কেন্দ্রীয় অফিসে যাবো, কারণ দর্শানো নোটিশের লিখিত জবাব দিতে। সাংবাদিক এবং যারা যোগাযোগ করতেছেন, চাইলে আসতে পারেন।” এছাড়াও, একই দিনে তিনি প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন শেয়ার করে, নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
প্রসঙ্গত, ১৩ অক্টোবর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মুনতাসির মাহমুদ রেড ক্রিসেন্টে উপপরিচালক পদে চাকরি করতেন, তবে রেড ক্রিসেন্টে মুনতাসির মাহমুদের চাকরিটি ছিল অস্থায়ী। কয়েক দিন ধরে তিনি রেড ক্রিসেন্টের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছিলেন। এনসিপির পক্ষ থেকে নিষেধ করার পরও গত ১২ অক্টোবর তিনি সেখানে বিক্ষোভ করেন। ওই দিন রেড ক্রিসেন্টের বোর্ড সভায় তাঁকে চাকরি থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়। তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠকের পদ থেকেও তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এ বিষয়ে একাধিক (১, ২, ৩, ৪) সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
অর্থাৎ, সমকামিতার অভিযোগে মুনতাসির মাহমুদকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, দাবিটি সত্য নয়। মুনতাসির মাহমুদকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে।