তাসনিম তাবাস্সুম মুনমুন

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
অক্টোবর ৬, ২০২৫
১৬:৪৩:২৩
অস্ত্রসহ ‘উপজাতি’ আটকের দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে নাটোরে ডাকাত ধরা পড়ার পুরোনো ভিডিও

অস্ত্রসহ ‘উপজাতি’ আটকের দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে নাটোরে ডাকাত ধরা পড়ার পুরোনো ভিডিও

অক্টোবর ৬, ২০২৫
১৬:৪৩:২৩

তাসনিম তাবাস্সুম মুনমুন

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

ব্যাগভর্তি অস্ত্র নিয়ে ‘উপজাতি’ আটক — দাবিতে সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ডিসমিসল্যাব ফ্যাক্টচেক করে দেখেছে, ভিডিওটি প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে নাটোরের গুরুদাসপুরে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে সেনাবাহিনীর হাতে চারজন আটকের ঘটনার। এ ঘটনায় খেলনা পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্রসহ আটক হওয়া সবাই নাটোরের; এর সঙ্গে “উপজাতি” বা পাহাড়ের কোনো সম্পর্ক নেই। 

বাংলাদেশ ডিফেন্স নিউজ নামে ফেসবুক পেজ থেকে ছড়িয়ে পড়া ৪ সেকেন্ডের এক ভিডিওতে সেনাবাহিনীর হাতে চারজনকে ধরা পড়তে দেখা যায়। পোস্ট-এর বিবরণীতে লেখা, “ব্যাগভর্তি অ>স্ত্র নিয়ে কট নান্নামুন্না উপজাতি” (বানান অপরিবর্তিত)।

মন্তব্যের ঘরে একজন লিখেছেন, “এই পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা কেন পাহাড় থেকে সেনা উঠিয়ে নেওয়ার কথা বলে এদেশের জনগণ কিন্তু সেটা বুঝে এই পাহাড় আমাদের লাগবে পাহাড় এদের হুগা দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়া হোক এই অস্ত্র আমাদের দেশ এবং সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এরা ব্যবহার করে এই সন্ত্রাসীদের এখনই কঠোরভাবে দমন না করা গেলে আমাদের সার্বভৌমত্ব হারাতে হবে সেজন্যই সরকার এবং সেনাবাহিনীর কঠোর হতে হবে এদের সাথে ভদ্রতা হলে চলবে না।”

আরেকজন লিখেছেন, “পাহাড়ি স/ন্ত্রাসী। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী এদের রুখে দিন ইনশাআল্লাহ”। একজন শেয়ার করে লিখেছেন, “দেখুন কিভাবে পাহাড়ের টহলরত সেনাবাহিনী আমাদের একটু শান্তিতে অস্ত্র চোরাচালান করতেও দিচ্ছে না। শেষকথা তত্বগ্রাম আমাদের লাগবে। — চিংচ্যাংচুং।”

ভিডিওটি এ পর্যন্ত সাড়ে সাত লাখের বেশি ব্যবহারকারী দেখেছেন, শেয়ার করা হয়েছে অন্তত দেড় হাজার বার। 

ভিডিওটির কিফ্রেম ধরে সার্চ করলে গত ২১ জুনের একাধিক পোস্ট পাওয়া যায়। একই দিনে একাধিক ফেসবুক ব্যবহারকারীকে (, ) এই ভিডিও-এর বর্ধিতাংশসহ শেয়ার করতে দেখা যায়। পোস্টের বিবরণে লেখা, “খেলনা পিস্তল দিয়েই ছিনতাইয়ের চেষ্টা!” এ ভিডিওগুলোতে মূল অডিও পাওয়া যায় যা ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে মিউজিক যোগ করে অস্পষ্ট করে ফেলা হয়েছে।

অডিও থেকে আটক হওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় ও ঘটনাস্থলের সন্ধান পাওয়া যায়। সেই সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চ-এ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ওই ঘটনার একাধিক লিখিত (,) ও ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, গত ২০ জুন গভীর রাতে উপজেলার কালাকান্দর স্লুইসগেট এলাকায় অভিযান চালিয়ে সেনাবাহিনী প্রথমে চারজনকে আটক করে। তাদের দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে পরে নাজিরপুর থেকে ডাকাতদলের দুই শীর্ষ সদস্যকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

এসময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় অস্ত্র ও একটি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা হলেন— উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের সিরাজুল হকের ছেলে ডাকাত দলের প্রধান আব্দুর রাজ্জাক (৩৮) ও মৃত কামাল হোসেনের ছেলে কাওসার আহম্মেদ (২৫), আব্দুল আজিজের ছেলে বিপ্লব হোসেন (২৪), মোবারক আলীর পুত্র মবিদুল ইসলাম (২১), হরদমা গ্রামের রওশন আলীর ছেলে মনিরুল (২৪) ও কালিনগর পাধোয়া গ্রামের আব্দুল সালামের পুত্র সুরুজ আলী (২১)।

পরদিন নাটোর সেনাক্যাম্প থেকে পাঠানো প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। এর বরাতে সময় নিউজ জানায়, “নিয়মিত টহল ও নিরাপত্তা তল্লাশির অংশ চেকপোষ্ট স্থাপন করে সেনাবাহিনী। এরই এক পর্যায়ে চারজন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে তল্লাশি চালান। তল্লাশির একপর্যায়ে আটককৃতদের কাছ থেকে একটি খেলনা পিস্তল এবং কয়েকটি দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা স্বীকার করে,তারা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য এবং দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ডাকাতি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। পরে তাদের দেয়া তথ্যমতে অভিযান পরিচালনা করে আরও দুইজনকে আটক করা হয়।”

অর্থাৎ, ব্যাগভর্তি অস্ত্রসহ ‘উপজাতি’ আটক হয়েছে দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি নাটোরে ডাকাত আটকের ঘটনার পুরোনো ভিডিও যাতে আটক হওয়া সবাই স্থানীয়। প্রসঙ্গত, গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে এক মারমা কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সংঘাতময় সেই পরিস্থিতিতে পাহাড়ি ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে নানা ভুয়া তথ্য।

আরো কিছু লেখা