সুদেষ্ণা মহাজন অর্পা

ইন্টার্ন, ডিসমিসল্যাব
সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫
১১:৪৮:৪৬
হান্নান মাসউদকে নিয়ে জেদনীর ফেসবুক পোস্ট দাবিতে ছড়ানো স্ক্রিনশটটি সম্পাদিত

হান্নান মাসউদকে নিয়ে জেদনীর ফেসবুক পোস্ট দাবিতে ছড়ানো স্ক্রিনশটটি সম্পাদিত

সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫
১১:৪৮:৪৬

সুদেষ্ণা মহাজন অর্পা

ইন্টার্ন, ডিসমিসল্যাব

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদকে কটাক্ষ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) নেত্রী শ্যামলী সুলতানা জেদনী। এর জেদেই জেদনীকে “জোরপূর্বক” বিয়ে করেছেন এই এনসিপি নেতা – এমন দাবিতে স্ক্রিনশটসহ একটি পোস্ট সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, জেদনীর পোস্ট বলে ছড়ানো স্ক্রিনশটটি সম্পাদিত। গত ১১ জুন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে দেওয়া জেদনীর একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে এমন ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে।

গত ২০ সেপ্টেম্বর একাধিক ফেসবুক প্রোফাইল থেকে একাধিক স্ক্রিনশট (, , , , , ) পোস্ট করা হয়। স্ক্রিনশটটিতে দেখা যায় জেদনীর আইডি থেকে চলতি বছরের ১১ জুন হান্নান মাসউদের একটি ছবি পোস্ট করা হয়েছে। সে ছবির ক্যাপশনে লেখা, “শালা ভিক্ষুকের বাচ্চা! গতবছর ও রাস্তার পাশে তোকে ভিক্ষুকের মতো বোতলে পানি খাইতে দেখসি। আর এখন এতো বড় বড় লেকচার? ফকিন্নির পুত!”। অন্য ছবিতে জেদনীর প্রোফাইলের স্ক্রিনশট। সেখানে তার ছবি দেখা যাচ্ছে, প্রায় ১৯ হাজার অনুসারী আছে এই অ্যাকাউন্টের।

নকীব আশরাফ চৌধুরী নামের আইডি থেকে করা একটি পোস্টের ক্যাপশনে লেখা, “২ মাস আগে মাসুদের নববধূর ফেসবুক স্ট্যাটাস; এরপর জেদ থেকেই সেই মেয়েকে জোরপূর্বক বিয়ে..” এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পোস্টটি ৭০০ বারের বেশি শেয়ার হয়েছে।

স্ক্রিনশটটির সত্যতা যাচাইয়ে, শ্যামলী সুলতানা জেদনীর মূল ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পোস্টগুলো যাচাই করে দেখে ডিসমিসল্যাব। চলতি বছরের ১১ জুন হান্নান মাসউদকে উল্লেখ করে দেওয়া একটি পোস্ট খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। পোস্টে সংযুক্ত হান্নান মাসউদের ছবি, পোস্টের তারিখ এবং প্রোফাইলের কভারে থাকা ছবির হুবহু মিল রয়েছে। তবে, এই পোস্টটির ক্যাপশনের সঙ্গে “ভিক্ষুকের বাচ্চা” বলে দাবিতে ছড়ানো স্ক্রিনশটে থাকা পোস্টের বিবরণের কোনো মিল নেই। মূল পোস্টের ছবিতেও পানির বোতল হাতে রক্তাক্ত অবস্থায় হান্নান মাসউদকে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে।

শ্যামলী সুলতানা জেদনীর ফেসবুক পোস্ট

আর সে ছবির সঙ্গে লেখা, “হান্নান মাসউদের নেতৃত্বকে আপনারা অস্বীকার করছেন, গুলিবিদ্ধ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, মশকরা করছেন। অথচ আপনাদের উচিত ছিলো যাদের কারণে গুলিবিদ্ধ হইছে তাদেরকে উৎখাত করার বন্দোবস্ত করা।”

বিস্তারিত জানতে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করলে, শ্যামলী সুলতানা জেদনীর ১৯ হাজার অনুসারীযুক্ত ফেসবুক প্রোফাইলটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। অধিকতর যাচাইয়ে “ভিক্ষুক’’ বলে কটাক্ষ করা কোনো পোস্টও ডিসমিসল্যাবের সামনে আসেনি। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, জেদনীর ১১ জুনের পোস্টটি সম্পাদনা করেই আলোচিত দাবির স্ক্রিনশটটি তৈরি করা হয়েছে।

এছাড়া পোস্টের বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ে শ্যামলী সুলতানা জেদনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিসমিসল্যাব। তিনি জানান, এমন কোনো পোস্ট তিনি করেননি এবং স্ক্রিনশটের অ্যাকাউন্টটিও তার নয়। তাকে জোরপূর্বক বিয়ে করার দাবিটিও সঠিক নয় বলে জানান এই বাগছাস নেত্রী।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ সেপ্টেম্বর এনসিপি নেতা আবদুল হান্নান মাসউদের সঙ্গে বাগছাস-এর মিডিয়া সেলের সহ সম্পাদক শ্যামলী সুলতানা জেদনীর বাগদান সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকেই দুজনের নাম জড়িয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে যেগুলো একদম ভিত্তিহীন।

আরো কিছু লেখা