সুদেষ্ণা মহাজন অর্পা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের দাবিতে ছড়াচ্ছে এক বছরের পুরোনো ভিডিও
সুদেষ্ণা মহাজন অর্পা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের সঙ্গে ছাত্র, শিক্ষক ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে এমন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, এটি ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর “ভারতীয় আগ্রাসন” প্রতিরোধে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দৈনিক প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের একটি পুরোনো ভিডিও।
“ঢাবিতে পুলিশের সাথে ছাত্রদের ব্যপক সংঘর্ষ চলছে,, শিক্ষক এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উপর পুলিশের ব্যপক লাঠিচার্জ চলছে”— এমন বিবরণে গত ৯ সেপ্টেম্বর সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়াতে দেখা যায়। একই বিবরণ দিয়ে আরও দুটি প্রোফাইল (১, ২) থেকে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়। “ডাকসু সার্কাস-২০২৫” এবং #স্টেপডাউনফেসিস্টইউনূস হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করতে দেখা যায়। ভিডিওটি ফেসবুকে বিভিন্ন পেজ ও প্রোফাইল থেকেও (১, ২ , ৩ , ৪ , ৫ , ৬ ) শেয়ার করা হয়।

এক মিনিট ২১ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে দেখা যায় কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে পুলিশ ধস্তাধস্তি করছে। পুলিশকে লাঠিচার্জ করতেও দেখা যায় সেখানে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও সশস্ত্র অবস্থান নেয়। এই প্রতিবেদন লেখার আগপর্যন্ত পোস্টটি ৮৫ হাজার বারের বেশি দেখা হয়েছে এবং প্রায় ৭০০ বার শেয়ার করা হয়েছে।
মন্তব্যের ঘরে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। একজন লিখেছেন, ‘বি এন পি দলের কোনো অবিভাবক নেই।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘দেশে গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়ে নিজেই ক্ষমতায় থাকবে কাকু এটাই তার লক্ষ্য 🙄🙄😑😑,’ একজন মন্তব্য করেছেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সারাদেশের ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দিন।’ কয়েকজন আবার পুরো ঘটনাটি ভুয়া বলেও উল্লেখ করছেন।
ডিসমিসল্যাব ভিডিওটির কিফ্রেম সার্চ করে ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর একটি ফেসবুক পেজে দুই মিনিট ২১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও খুঁজে পায়। ওই ভিডিওটির প্রথম এক মিনিট ২১ সেকেন্ডের সঙ্গে ছড়িয়ে পরা ভিডিও ফুটেজের হুবহু মিল পাওয়া যায়। ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, “প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের মতো বিতর্কিত স্বৈরাচারের দালাল পত্রিকা অফিসের সামনে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা করা হলো। দেশ কাদের হাতে, কারা চালায় আমরা জানতে চাই।”

ভিডিওর ক্যাপশন থেকে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ওই একই দিনে নাটশেল টুডে’ নামে একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা ৫১ সেকেন্ডের ভিডিও পাওয়া যায়, যার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষের দাবিতে ছড়ানো ভিডিও ক্লিপটির মিল আছে। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা “কারওয়ান বাজারে আজ প্রথম আলো অফিসের সামনে”।

ভিডিও যে স্থানে ধারণ করা হয়েছে তার প্রকৃত অবস্থান জানতে গুগলে খোঁজ করে দেখা যায় তা প্রথম আলো অফিসের সামনে। ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে যে স্থাপনা দেখা যায়, তার সঙ্গে গুগল ম্যাপে পাওয়া স্থাপনার হুবহু মিল রয়েছে। এছাড়া ভিডিওতে ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির (ইবিএল) একটি এটিএম বুথ দেখতে পাওয়া যায়, যা গুগল ম্যাপের ছবিতেও রয়েছে।
একই বিষয়ে একুশে টেলিভিশন নিউজের ভেরিফায়েড পেজ থেকেও ২৪ নভেম্বর বিক্ষোভ পরবর্তী একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যার ক্যাপশনে লেখা ছিল, ‘ভারতীয় আগ্রাসন প্রতিরোধে প্রথম আলোর সামনে “গরু জবাই” কর্মসূচি। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের তওবা করানোর জন্য এ আয়োজন। ছত্রভঙ্গ করে দিলো সেনাবাহিনী ও পুলিশ।’ ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ জানিয়ে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমেও (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭) প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
অর্থাৎ, ভিডিওটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের সঙ্গে ছাত্র, শিক্ষক ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ভিডিও নয়। এটি ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর রাজধানীর কাওরান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালীন একটি ভিডিও।
প্রসঙ্গত, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো পত্রিকা দুটি দেশে ‘ভারতীয় আগ্রাসনে সহায়তা’ করেছে এমন দাবির প্রতিবাদে ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার প্রধান কার্যালয়ের সামনে ‘বাংলাদেশের জনগণ’ ব্যানারে গরু জবাই ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। তবে একপর্যায়ে পুলিশ ওই কর্মসূচিতে বাধা দিলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।