নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫
১৫:০১:৪০
ডাকসু নির্বাচনে সংঘর্ষের দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার

ডাকসু নির্বাচনে সংঘর্ষের দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার

সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫
১৫:০১:৪০

নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণা করার আগে ছাত্রদল ও শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে, ভিডিওটি পুরোনো এবং ডাকসুর সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। মূলত চলতি বছরের আগস্টে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষের ঘটনার দৃশ্য এটি।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ২৪ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে একটি হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ দৃশ্য দেখা যায়। সেখানে বেশ কিছু আহত ব্যক্তি শুয়ে-বসে আছেন। ভিডিওর ১৬ সেকেন্ডে গোলাপি টি-শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তি ক্যামেরার সামনে এসে বলছেন, “আমাদের অনেক ভাই আহত। আপনারা যেখানে আছেন, দ্রুত চলে আসেন।”

পোস্টের ক্যাপশনে লেখা, “এই মাত্র পাওয়া,,ব্রেকিং নিউজ^ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলের আগেই ছাত্রদল বনাম শিবিরের ব্যাপক সংঘর্ষ! বহু ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়েছে, নিহতের খবর ও শুনা যাচ্ছে। আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে জঘন্যতম একটা রাত পার হতে যাচ্ছে! বহিরাগতরা ভিতরে প্রবেশ করছে।” এই প্রতিবেদন লেখার আগ পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে ভিডিওটি। শেয়ার হয়েছে অন্তত ১ হাজার ৬০০ বার।

ফেসবুকের একাধিক পেইজ থেকে (,,,,,,) ১০ সেপ্টেম্বর রাত থেকে একই দাবিতে ভিডিওটি শেয়ার করতে দেখা যায়।

ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। এতে দেখা যায় হুবহু একই দৃশ্য সম্বলিত ও একই দৈর্ঘ্যের একটি ভিডিও চলতি বছরের ৩১ আগস্ট “সিইউ ইনসাইডারস” (CU Insiders) নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করা হয়েছিল। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল আজ শিক্ষার্থীদের রক্তে পালিত হচ্ছে। স্থানীয়রা সুপরিকল্পিতভাবে রামদা, চাপাতি, রড দিয়ে নিরীহ শিক্ষার্থীদের কুপিয়ে যখন করেছে। রাত ১১ টার দিকে একজন বোনকে শারিরীক আঘাত করা হইছে। আশেপাশের কয়েকজন প্রতিবাদ করতে গেলে দারোয়ান স্থানীয় লোক দিয়ে স্টুডেন্টদের উপর চড়াও হয় এবং চড় থাপ্পর দেয়। এখান থেকে এই ঘটনার সূত্রপাত সকাল হওয়ার আগেই হামলাকারীদের গ্রেফতার করতে হবে। প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে।” 

একই ক্যাপশনে শেষ অধ্যায় নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ৩১ আগস্টে পোস্ট হওয়া ২৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিওর সাথে সম্প্রতি ছড়ানো ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। একই তারিখে একাধিক ফেসবুক প্রোফাইল (,,,,,) থেকেও ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। 

অর্থাৎ্‌, ভিডিওটির সাথে ৯ সেপ্টেম্বর হয়ে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কোন সম্পর্ক নেই।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত সোয়া ১২টা থেকে পরদিন রোববার দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কয়েক দফা সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ এবং অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় ১০ থেকে ১২ জন স্থানীয় বাসিন্দাও আহত হন। সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) নেওয়া প্রসঙ্গে প্রথম আলো ৩১ আগস্ট প্রতিবেদন প্রকাশ করে। 

এদিকে গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনে ভিপি, জিএস ও এজিএস এবং ১২টি সম্পাদক পদের মধ্যে ৯টিতে জয় লাভ করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত “ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের” প্রার্থীরা। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ৯ সেপ্টেম্বর রাতে শাহবাগে ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা শাহবাগে অবস্থান নিতে শুরু করলে উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে কোন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।

আরো কিছু লেখা