মো. তৌহিদুল ইসলাম
ডাকসু নির্বাচনে ভোট কারচুপির দাবিতে পুরনো ভিডিও প্রচার
মো. তৌহিদুল ইসলাম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভোট কারচুপি চলছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে, ভিডিওটি এক বছরেরও বেশি পুরোনো। ফেনীর স্থানীয় সংবাদমাধ্যম হিসেবে পরিচয় দেওয়া “ফেনী টিভি” এর ফেসবুক পেজে হুবহু একই ভিডিও গত বছরের জুনে প্রকাশিত হতে দেখা যায়। সেখানে বলা হয়, সে সময়ে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এক ব্যক্তির একাধিক ব্যালটে সিল মারার ঘটনা এটি।
ছড়িয়ে পড়া ১৬ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, পোলো টি শার্ট পরিহিত একজন ব্যক্তি ব্যালট সদৃশ কাগজে ক্রমাগত সিল মারছেন। তার পাশে একটি ব্যালট বাক্স। সেটায় হাত দিয়ে রেখেছেন একজন। আরেক ব্যক্তি প্রথম ব্যক্তির সুবিধার জন্য সিল প্যাড ধরে আছেন। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, “ডাকসু নির্বাচনে জবরদখল করে প্রতিটা কেন্দ্র থেকে প্রশাসনের সহায়তায় শিবির সহ সকল প্রার্থীর এজেন্ট বের করে দিয়ে, সিল মেরে ভোট চুরির মহোৎসব চলছে ছাত্র দলের। এদের কে এখন ই গ্রেফতার করতে হবে। কিন্তু প্রশাসন কোন ব্যাবস্হা নিচ্ছে না।” এই প্রতিবেদন লেখার আগ পর্যন্ত ভিডিওটি এক লক্ষের বেশি ভিউ হয়েছে। শেয়ার করা হয়েছে অন্তত ২ হাজার ৯০০ বার।

ভিডিওটির কিছু কি- ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। এতে দেখা যায় হুবহু একই দৃশ্য সম্বলিত ও একই দৈর্ঘ্যের একটি ভিডিও ২০২৪ সালের ৫ জুন “নাজিম উল্লাহ ভাইয়ের সৈনিক” নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকেও পোস্ট করা হয়েছিল। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “কেমন করে সিল মারে দেখেন সবাই।”

অধিকতর যাচাইয়ে দেখা যায়, ফেনী টিভি(Feni TV) নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট হওয়া এক মিনিটের একটি ভিডিওর প্রথম ১৬ সেকেন্ডের সাথে সম্প্রতি ছড়ানো ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। যা একই দিনে পোস্ট করা হয়েছে। ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২০২৪ একাই সব ব্যালটে সিল মারলেন এই ভোটার।”

প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখা যায়, গত বছর ৫ জুন অনুষ্ঠিত ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া ও বিভিন্ন অভিযোগের বিষয় তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রথম আলো।

এছাড়া, ডাকসু নির্বাচনে ভোটদানের ক্ষেত্রে সতর্কতা জানিয়ে ১৬ ঘন্টা আগে একটি নোটিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অফিশিয়াল পেজ থেকে পোস্ট করা হয় । এতে জানানো হয়, “পছন্দের প্রার্থীর নামের পাশের চারকোণা ঘরে নির্ধারিত কালো কালির কলম দিয়ে গাঢ় ক্রস চিহ্ন দিতে হবে।” এই নোটিশে সিল দেয়ার কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। মানে, ডাকসু নির্বাচনে ভোটদানের ক্ষেত্রে সিল-প্যাডের কোনো ব্যবহার নেই। নোটিশটি চীফ রিটার্নিং অফিসারের অফিস থেকে গতকাল (৮ সেপ্টেম্বর) প্রকাশ করা হয়েছে।

অর্থাৎ ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের ডাকসু নির্বাচনের কোনো ঘটনার নয়। এটি একটি পুরোনো ভিডিও, যা কমপক্ষে ১৫ মাস আগেও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল বলে খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, আজ ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মূল ধারার সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আজ ডাকসু নির্বাচন মূল্য আলোচ্য বিষয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে প্রচার- প্রচারণা চালাচ্ছেন তাঁদের সমর্থকেরা। একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগও করছেন।