তনিমা আক্তার জীম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
চট্টগ্রামে শিবিরের গুলিতে নিহত দাবিতে ছড়াচ্ছে ভারতের এক শিশুর ছবি

চট্টগ্রামে শিবিরের গুলিতে নিহত দাবিতে ছড়াচ্ছে ভারতের এক শিশুর ছবি

তনিমা আক্তার জীম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষে ইফতি নামের এক শিশু শিবিরের গুলিতে নিহত হয়েছে – এমন দাবিতে সংবাদ প্রকাশিত হতে দেখা গেছে একাধিক অনলাইন নিউজ পোর্টালে। একই দাবিতে পোস্ট শেয়ার করা হয়েছে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকেও। তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং স্থানীয়দের মধ্যেকার সংঘর্ষে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। যে শিশুর ছবি শেয়ার করে এমন দাবি করা হচ্ছে, সে আসলে ছিল ভারতের মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের গুলিতে ইফতি নামের শিশু নিহত হয়েছে দাবিতে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে একাধিক অনলাইন নিউজ পোর্টালে (, )।  দৈনিক দিনপত্র নামের একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের শিরোনাম ছিল, “চবিতে শিবিরের গুলিতে শিশু ইফতি নিহত, এলাকায় উত্তেজনা”। প্রতিবেদনে বলা হয়, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এলাকায় ভয়াবহ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ইফতি নামের এক শিশু নিহত হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীদের ছোড়া গুলিতেই এ মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। রোববার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট সংলগ্ন লন্ডনি বিল্ডিং এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।”

দৈনিক আজকের কন্ঠ নামের একটি অনলাইন পত্রিকার ফেসবুক পেজে গত ৩১ জুলাই প্রকাশিত একটি পোস্টে বলা হয় “চবিতে  শিবিরের গুলিতে শিশু ইফতি নিহত”। সেখানে আরো উল্লেখ করা হয় যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে ২ং গেট সংলগ্ন লন্ডনি বিল্ডিং এলাকায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের ছোড়া গুলিতে ইফতি নামের এক শিশু নিহত হয়েছে। 

বাংলা ম্যাগাজিন নামক ফেসবুক অনলাইন পেজ থেকে একই সংবাদ প্রকাশ করা হয়। পোস্টটিতে আরো উল্লেখ করা হয় যে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এই শিশু মৃত্যুর ঘটনাকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন। এছাড়াও ফেসবুকে কিছু প্রোফাইল থেকে এই একই দাবি করে ফটোকার্ড শেয়ার করা হয় (, , )।

ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, যে শিশুটির ছবি ফটোকার্ড এবং সংবাদ প্রতিবেদনে ব্যবহার করা হয়েছে সে আসলে বাংলাদেশের নয়, ভারতের মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা। রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ডিসমিসল্যাব এনডিটিভির একটি প্রতিবেদনের সন্ধান পায় যেখানে বলা হয়েছে, আথারভা গোপাল তায়দে নামের ১৬ বছরের এক বালক পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে মোবাইল ফোন কিনে না দেওয়ায়। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের মহারাষ্ট্রে।

“মা ফোন কিনতে অস্বীকৃতি জানানোয় মহারাষ্ট্রে পাহাড় থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করল কিশোর” শিরোনামে প্রকাশিত নিউজ ১৮-র সংবাদেও একই তথ্য জানা যায়। এছাড়াও গালফ ডেইলি নিউজের অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ১৬ বছর বয়সী আথারভা পুলিশ নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

এ সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিসমিসল্যাব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আলোর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি  সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি নিশ্চিত করেন যে, ইফতি নামের কোনো শিশু নিহত হওয়ার ঘটনা এখনো অবধি ঘটেনি। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আহত দুজন শিক্ষার্থীকে ঢাকায় আনা হয়েছে।

এ বিষয়ে আরও জানতে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে হাটহাজারি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবু কাওসার মাহমুদ হোসেনের সঙ্গে। তিনিও এ ধরনের কোনো তথ্য পাননি বলে জানান ডিসমিসল্যাবকে।

প্রসঙ্গত, গত ৩১ আগস্ট, ভাড়া বাসার দারোয়ান এক ছাত্রীকে মারধর করেছেন এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় দুইশরও বেশি মানুষ আহত হয়। বর্তমানে জোবরা গ্রামসহ আশেপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে।

আরো কিছু লেখা