তাসনিম তাবাস্সুম মুনমুন

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
আগস্ট ২৯, ২০২৫
১০:৪৪:১৫
নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির ভিডিওটি পাকিস্তানের
This article is more than 2 months old

নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির ভিডিওটি পাকিস্তানের

আগস্ট ২৯, ২০২৫
১০:৪৪:১৫

তাসনিম তাবাস্সুম মুনমুন

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির একটি ভিডিও শেয়ার করে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন অনেকে। তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা গেছে ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়, বরং পাকিস্তানের। 

এক মোটরবাইক চালকের হাতে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন এক নারী শিক্ষার্থী– এমন একটি ভিডিও শেয়ার করে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন,  “এই ঘটনার সমাধান যদি জিজ্ঞেস করেন তাহলে বেশিরভাগ মানুষ নারীদের ঘরের বাইরে বের হওয়াকেই কারণ হিসেবে দেখাবে। তখন নারীদের ঘরের মহারাণী করে রাখার যে সম্মান সেটা বয়ান করবে।” এতে একজন মন্তব্য করেছেন, “যা দেখলাম ভিডিওতে এখানে আসলেই দেশে নারীর নিরাপত্তা খুবই ক্ষীণ।”

পোস্টটি এখন পর্যন্ত ৪২ হাজার বারের বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারী দেখেছে। একই দাবিতে পোস্টটি শেয়ার হয়েছে শতাধিক বার। একজন ব্যবহারকারী এর বিবরণীতে লিখেছেন, “এই রাষ্ট্রের কাছে আর কি চাইবো? এরা তো ধর্ষক কে ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করে নেয়।” (বানান অপরিবর্তিত) আরেকজন লিখেছেন, “নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা কে নিশ্চিত করবে এদেশে? রাষ্ট্র যন্ত্রের কাজ কি? কিসের ভয়ে বা মূল্যে হচ্ছে না একটাও ন্যায় বিচার?”

সামাজিক মাধ্যম ছাড়াও মূলধারার গণমাধ্যম কালের কণ্ঠে “সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া গলিপথের অসভ্যতা” শিরোনামে একটি মতামত প্রকাশিত হয়। এতে সেই ভিডিও থেকে সংগৃহীত ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

কালের কণ্ঠ তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও একই ছবি ও শিরোনামে ফটোকার্ড প্রকাশ করে। ফটোকার্ডটি একই দাবিতে শেয়ার করে একাধিক ব্যবহারকারী (, ) ও বিভিন্ন ফেসবুক পেজ। কালের কণ্ঠের এই মতামতের ছবি শেয়ার করে একজন এক্স ব্যবহারকারী লিখেছেন, “দেশের কোথাও শান্তি নেই, নেই কোন নিশ্চয়তা। অসুর দুর্বৃত্ত ইউনূসের কবলে দেশ। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত।”

ভিডিওটির কি-ফ্রেম সার্চ করে দেখা যায়, এর আগে গত ২৩ আগস্ট পাকিস্তানের বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে ফেসবুক, ইউটিউব ও এক্স (, )-এ সেই ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। খাবারনামা নামে এক পেজে বলা হয় ঘটনাটি মুলতানের। মুলতান পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের একটি শহরের নাম। একই দাবি করে চক আজম নিউজ তাদের ফেসবুক পোস্টে ভিডিও-এর বিবরণীতে লিখেছে, “ছাত্রীর সাথে অনৈতিক আচরণের জন্য অভিযুক্ত গ্রেফতার। দুই দিন আগে মুলতানে এই ঘটনাটি ঘটেছিল। এর সিসিটিভি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।” 

কি-ওয়ার্ড সার্চ দিয়ে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন-এ ২৪ আগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ডন জানায়, “শনিবার হারাম গেট এলাকার একটি রাস্তায় দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে হয়রানির অভিযোগে জড়িত এক বাইকারকে গ্রেপ্তার করেছে মুলতান পুলিশ।” দেশটির আরেক দৈনিক সংবাদপত্র পাকিস্তান অবজারভারের ফেসবুক পেজ থেকেও বাংলাদেশের দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি শেয়ার করে বলা হয়েছে সেটি মুলতানের হারাম গেট এলাকার ঘটনা। এবং এই ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অর্থাৎ, নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির এই ভিডিও পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুলতান শহরের, এর সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই।

আরো কিছু লেখা