সুদেষ্ণা মহাজন অর্পা
সিএমএম আদালতে হামলার দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি গত বছরের
সুদেষ্ণা মহাজন অর্পা
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সামনে ব্যাপক হামলা ও ভাঙচুর করা হচ্ছে দাবিতে সম্প্রতি একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে মূল ঘটনাটি গত বছরের। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের সময়ে সিএমএমের সামনে এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
বেশকিছু ফেসবুক পেজ ও প্রোফাইলে একই দাবিতে ২৫ আগস্ট থেকে ৪৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬) শেয়ার করা হয়। বিবরণে লেখা “এই মুহুর্তে ঢাকা সিএমএম আদালতে ব্যপক হামলা ও ভাংচুর। পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে জঙ্গি দেশে পরিনত করার চেষ্টা। সোনার বাংলাদেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে!” কয়েকটি পোস্টের বিবরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে নেতিবাচক হ্যাশট্যাগে লেখা “স্টেপডাউনফ্যাসিস্টইউনূস” (#StepDownFescistYounus)।

একই দাবিতে শেয়ার করা একটি পোস্ট বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেটি এখন পর্যন্ত ১৮ হাজারের বেশিবার দেখা হয়েছে এবং প্রায় চারশো বার শেয়ার করা হয়েছে। মন্তব্যে ব্যবহারকারীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ ঘটনাটিকে সত্য ধরে নিয়ে লিখেছেন, “পাকিস্তানি জঙ্গী জন্য দেশটা আজ ধ্বংস হয়ে গেল বাংলাদেশ সোনার দেশ ছিল আজকে সেই দেশ ভিক্ষার খালি হাতে নিয়ে বসতে চলেছে জংলি ইউনুস স্বৈরাচার সরকার হটাও বাংলাদেশটা কে বাঁচাও দেশের মানুষকে বাঁচাও।” আবার অনেক ব্যবহারকারী বর্তমানের দাবিতে ছড়ানো এই ভিডিওটিকে ভুয়া জানিয়ে লিখেছেন, “এই খবর সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট আদালতে হামলা হয়েছিল। কিন্তু সেটিকে আজকের ঘটনা বলে চালানো হচ্ছে। ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।”
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ঢাকার সিএমএম আদালত চত্বরে অনেক মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে ছোটাছুটি করছে, পুলিশের গাড়ি ও প্রিজনভ্যান ভাঙচুর করা হচ্ছে।
যাচাইয়ে দেখা যায়, যেসব পেজ-প্রোফাইল থেকে বর্তমানের ঘটনা দাবিতে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে সেগুলো আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের। বিভিন্ন সময়ে এসব পেজ-প্রোফাইল থেকে আওয়ামী লীগের সমর্থনে পোস্ট শেয়ার করা হয় এবং এসবের মধ্যে কয়েকটির প্রোফাইল বা কভার ছবিতে শেখ মুজিবুর রহমান বা শেখ হাসিনার ছবি আছে। এছাড়া কেউ কেউ দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা বলে “অ্যাবাউট” সেকশনে জানিয়েছেন।
ঘটনাটির সত্যতা যাচাইয়ে, ভিন্ন ভিন্ন কিওয়ার্ড ধরে সার্চ করলে চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের (Channel 24) ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলের একটি শর্টস ভিডিও খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। ২০২৪ সালের ৪ আগস্টে প্রচারিত সেই ভিডিওটির সঙ্গে সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজর হুবহু মিল পাওয়া যায়। চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের সেই ভিডিওটির বিবরণে লেখা, “ঢাকার সিএমএম আদালতে হামলা, ভাংচুর।” একই বিষয় জানিয়ে আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে (১, ২) সেসময় ভিডিওটি শেয়ার করে। ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় একাধিক সংবাদমাধ্যমের অনলাইন প্রতিবেদনেও (১, ২, ৩, ৪)।

গেল বছরের ৪ আগস্টে প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগের একদফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে পুরান ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের গেট ভেঙে ভেতর প্রবেশ করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে।
অর্থাৎ, এক বছর আগের ছাত্র আন্দোলনের সময়ের একটি ভিডিও ব্যবহার করে সম্প্রতি সিএমএম আদালতে হামলা ও ভাঙচুরের মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, যা সঠিক নয়।